 
              প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২৩, ০৮:৩৮ পিএম
-(6)-20230605083825.jpg) 
                 ছবি: সংগৃহীত
লোডশেডিংয়ে অতীষ্ট জনজীবন। তীব্র গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারাদেশে যেন বিদ্যুতের কানামাছি খেলা চলছে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দীর্ঘসময় বিদ্যুৎহীন জীবন যাপন করতে হচ্ছে দেশবাসীকে। লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে।
দেশের সর্ববৃহৎ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন আজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। কয়লার অভাবে সোমবার বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে দেশের বৃহত্তম পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়।
এই কেন্দ্র ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রাখে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডলার-সংকটে বিল বকেয়া থাকায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে দেশের সবচেয়ে বড় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের। নতুন করে কয়লা এলে চলতি জুন মাসের শেষ নাগাদ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আবার উৎপাদনে ফিরতে পারে।
তিন বছর আগে উৎপাদনে আসে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। তারপর এবারই প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। এতে লোডশেডিং আরও বাড়বে।
এর আগে ডলার-সংকটে কয়লা কিনতে না পেরে দুই দফায় বন্ধ হয়েছিল বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখন উৎপাদনে রয়েছে।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানায় রয়েছে চীন ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসি)।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্র বলছে, কয়লা আসতে অন্তত ২৫ দিন সময় লাগতে পারে। সে হিসাবে জুনের শেষ সপ্তাহে আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে। কয়লা আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। আগামী ১২ জুন জাহাজে কয়লা তোলার কথা।
আজ দুপুরে পুরোপুরি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিসিপিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম।
তিনি বলেন, কয়লার বকেয়ার ১০ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এতে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর আস্থা রেখে কয়লা সরবরাহ শুরু করতে যাচ্ছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। যত দ্রুত কয়লা আনা যায়, তার চেষ্টা চলছে।
বিসিপিসির দুজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরে এই কেন্দ্র দিনে গড়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল। কয়লা না থাকায় গত ২৫ মে কেন্দ্রের একটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়। এতে দেশব্যাপী লোডশেডিং বেড়ে যায়।
এরপর ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বাকি ইউনিট থেকে দিনে ৩০০ থেকে ৬২০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছিল। এভাবে ২ জুন পর্যন্ত চালানোর কথা ছিল। তবে উৎপাদন কমিয়ে দুই দিন বাড়তি চালানো হয়। এখন উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। এতে লোডশেডিং আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, তিন বছর ধরে পায়রা থেকে বিদ্যুৎ আসছে। আগে এক দিনের জন্যও বিদ্যুৎ আসা বন্ধ হয়নি। দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এই বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন অনেক কমে যাবে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে বড় পার্থক্য তৈরি হবে। ফলে লোডশেডিং বাড়তে পারে। এমনিতেই গ্যাসের অভাবে এখন অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না।
পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র আবার উৎপাদনে না এলে লোডশেডিং চলতেই থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে করে আগামী ২০-২৫ দিন চরম ভোগান্তিতে থাকতে হবে দেশের মানুষকে।
দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ বিদ্যুতের জোগান দেয় পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। যে কারণে রমজান মাসেও দেশে শতভাগ বিদ্যুৎ সেবা দিতে সক্ষম হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের সবকটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যে এটি আধুনিক। এই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেলে বড় সংকটে পড়বে দেশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোদমে চালাতে গড়ে প্রতিদিন ১০ হাজার টন কয়লা ব্যবহার হয়। যার পুরোটাই ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি)। ডলার সংকট দেখা দেওয়ায় গত ছয় মাস ধরে কোনো বিল পরিশোধ করা হয়নি। এখন বকেয়া পরিশোধ করায় কয়লা সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জেকেএস/
 
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
      