 
              প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৪, ১২:১৩ পিএম
 
                 
                            
              পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত সময় ও ভোগান্তি কমে যাওয়ার বড় প্রভাব পড়েছে নৌপথে। সরকারি এক হিসাবে দেখা গেছে, সেতু চালুর পর যাত্রী কমেছে ৪০ শতাংশ। তবে কিছুটা আশার আলো হচ্ছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে নৌপথে যাত্রী বেড়েছে ৯ শতাংশ। লঞ্চ মালিকরা জানান, ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে কিছুটা বাড়লেও বাকি সময়ে যাত্রী সংকট থাকে। এ কারণে রোটেশন করে লঞ্চ চলাচল করছে। এই প্রক্রিয়ায় অর্ধেকের বেশি লঞ্চ প্রায় অলস বসে থাকে। এতে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি লঞ্চ কেটে (স্ক্র্যাপ) বিক্রি করে দিয়েছেন।
মূলত ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট) থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে বড় আকারের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। সিংহভাগ যাত্রী সদরঘাট থেকেই যাতায়াত করেন। এছাড়া অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে কাছাকাছি দূরত্বে ছোট ছোট লঞ্চে যাত্রী চলাচল রয়েছে। সদরঘাট টার্মিনালে প্রবেশের সময়ে যাত্রীপ্রতি ১০ টাকা শুল্ক আদায় করা হয়। আদায় হওয়া টাকার পরিমাণ বলছে, ২০২২ সালে পদ্মা সেতু চালুর আগের (১ মে থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত) এক মাস ২৫ দিনে সদরঘাট থেকে যাত্রী গেছেন সাত লাখ ৮৫ হাজার ২০৬ জন।
অপরদিকে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত এক মাস ২৫ দিনে যাত্রী গেছেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৮৬৩ জন। এই হিসাবে যাত্রী কমেছে তিন লাখ ৯ হাজার ৩৪৩ জন বা শতকরা ৪০ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, যদিও বাস্তবে যাত্রী সংখ্যা আরও ২০ শতাংশ বেশি। অনেক যাত্রী নৌকা দিয়ে লঞ্চে ওঠায় তাদের থেকে শুল্ক আদায় করা যায় না। অনেকে শুল্ক ছাড়াই টার্মিনালে ঢুকে পড়েন। তারা আরও জানান, এখন ঈদ মৌসুম থাকায় যাত্রী আরও বেড়েছে। বেড়েছে লঞ্চের ট্রিপও। রোববার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ৫৪টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। আরও ২৬-৩০টি লঞ্চ ছাড়ার অপেক্ষায় ছিল। তার আগের দিন সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত ৭৭টি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছেড়েছে। ঈদের আগে আজ শেষ কর্মদিবসের পর যাত্রী আরও বাড়বে। এদিন একশর ওপরে লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা। বিআইডব্লিউটিএ’র একাধিক কর্মকর্তা ও লঞ্চ মালিকরা বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগে ঈদ মৌসুমে সদরঘাটে যেমন যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল, সে চিত্র এখন আর নেই।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় নৌপথে যাত্রী কমে গেছে বলে জানান নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ঈদযাত্রা দেখতে শুক্রবার সদরঘাট গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে সদরঘাটের চিরায়িত চিত্র বদলে গেছে। এখানেও শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। মানুষের মধ্যে আনন্দ দেখতে পাচ্ছি যে, তারা স্বাভাবিকভাবে লঞ্চে চলাচল করতে পারছেন, কোনো ধাক্কাধাক্কি নেই। লঞ্চের ছাদ পর্যন্ত শুধু মানুষ আর মানুষের উপচে পড়া ভিড়ের ছবি আর পাওয়া যাবে না। যাত্রীদের যাতায়াতে সুবিধার্থে সদরঘাট উন্নত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন নতুন পন্টুন ও গ্যাংওয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক লঞ্চ মালিকের ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালু করেছে। কারণ এই জায়গায় ভালো সার্ভিস দিতে না পারলে মানুষ বিমুখ হয়ে যাবে। পরিবেশ ভালো আছে। আমাদের লোকজন যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। যাত্রীসাধারণকে সেবা দেওয়ার এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
২০২২ সালের ২৬ জুন পদ্মা সেতু চালু হয়। এরপর থেকেই নৌপথে যাত্রীসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমতে থাকে। সদরঘাটে প্রবেশে যে পরিমাণ শুল্ক আদায় করা হয়েছে সেই হিসাবে দেখা গেছে, সেতু চালুর আগের মে মাসে যাত্রী গেছেন ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮৪ জন। পদ্মা সেতু চালুর আগে জুন মাসের ২৫ দিনে গেছেন ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৫২২ জন যাত্রী। ওই এক মাস ২৫ দিনে সবমিলিয়ে যাত্রী ছিল ৭ লাখ ৮৫ হাজার ২০৬ জন। এর এক বছর পরই ২০২৩ সালের মে মাসে যাত্রীসংখ্যা ছিল মাত্র এক লাখ ৯৩ হাজার ৩৯১ জন। আর জুনের ২৫ দিনে ছিল ২ লাখ ১৩ হাজার ১৩০ জন। অর্থাৎ সেতু চালুর পরের বছর একই সময়ে যাত্রী কমেছে প্রায় ৪৮ শতাংশের বেশি।
চলতি বছরের মে-জুন মাস এখনো আসেনি। তবে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময়ে সদরঘাট দিয়ে যাত্রী গেছেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৮৬৩ জন। ২০২২ সালের তুলনায় চলতি বছরে যাত্রী কমেছে তিন ৩ লাখ ৯ হাজার ৩৪৩ জন। অবশ্য ২০২৩ সালের তুলনায় চলতি বছরে যাত্রী বেড়েছে প্রায় ৭০ হাজার জন।
লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যা-প) সংস্থার সদরঘাট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক মো. মামুন-অর রশীদ যুগান্তরকে বলেন, সদরঘাট থেকে ৪১টি রুটে লঞ্চ চলাচল করত। যাত্রী সংকট থাকায় ৭-৮টি রুটে লঞ্চ চলাচল করে না। ঈদ উপলক্ষ্যে কিছু কিছু রুটে লঞ্চ আবার চলাচল শুরু করেছে। তিনি বলেন, আমাদের ১৯০টি লঞ্চের রুট পারমিট রয়েছে। ঈদের এই মৌসুমে চলছে ৭০-৮০টি। শুধু বিভিন্ন উৎসবে ট্রিপ দিয়ে যে আয় হয় তা দিয়ে লঞ্চ পরিচালনা সম্ভব নয়। তার দাবি, গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত নির্বিঘ্ন যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে পারলে লঞ্চে যাত্রী বাড়বে।
বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবীর যুগান্তরকে বলেন, গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত রাস্তায় যানজট থাকায় যাত্রীদের অনেক ভোগান্তি হয়। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তিনি বলেন, সদরঘাট পর্যন্ত মেট্রোরেল বা ফ্লাইওভারের মতো যাতায়াত ব্যবস্থা যুক্ত করা গেলে নৌপথে যাত্রী আবার অনেক বেড়ে যাবে।
 
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
      