
প্রকাশিত: মে ১০, ২০২৫, ০২:৫৫ পিএম
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রতি সপ্তাহে কোথাও না কোথাও একটা করে হাতি মারা যাচ্ছে। তার কারণটা হচ্ছে, কখনও আমরা এই বিষয়টা মন দিয়ে ভাবিনি আমরা যে এখানে রোহিঙ্গা শিবির করে ফেলছি, ওখানে ইকোনমিক জোন করে ফেলছি, তাহলে হাতি হাঁটবে কোন রাস্তা দিয়ে।’ তিনি বলেন, কিছু কিছু মন্ত্রণালয় অনেক বড়, তারা মনে করে যে আমরা যেটা করছি এটাই উন্নয়ন। এদিক দিয়ে রাস্তা, একটা ব্রিজ যদি না বানাই, একটা ফুটওভার ব্রিজ না করি, তাহলে আসলে উন্নয়ন হয় না। কিন্তু ওই যে উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশটাকে যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এই কাজটা কিন্তু কখনও হয় না।
শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘নগর এবং আঞ্চলিক পরিকল্পনা চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে’ তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এ আয়োজন করে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করছি একটা পাহাড় সে নিরর্থক দাঁড়িয়ে আসে, তাকে নিরর্থক দাঁড় করিয়ে লাভ কি? বরং যদি আমরা একটি ইকোনমিক জোন করি, হাজার তিনেক লোকের ওখানে কর্মসংস্থান হবে। আমরা তখন ভাবি নাই যে, তাহলে হাতিগুলো তো এই রাস্তা দিয়ে হাঁটে, তাহলে সে হাঁটবে কোন রাস্তা দিয়ে, সে খাবে কী। এটা একদম সমস্যার চূড়ান্তে চলে এসেছে। ফলে প্রতি সপ্তাহে আপনি দেখবেন একটা করে হাতি মারা যাচ্ছে। এটার কোনো কূলকিনারা করা যাচ্ছে না।’
রিজওয়ানা বলেন, কখনও মারা যাচ্ছে পুষ্টিহীনতায়, কখনও মারা যাচ্ছে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে, কখনও মানুষ তাকে গুলি করে মেরে ফেলে তার দাঁত নিয়ে যাচ্ছে, তার পায়ের নখ নিয়ে যাচ্ছে। কখনও নিজের ধান ক্ষেত বাঁচাতে কৃষকেরা তারকাটার বেড়া দিয়ে হাতিকে বিদ্যুতায়িত করে মেরে ফেলছে। এসব আসলে পরিকল্পনার অভাব। শুধুমাত্র একটা সংস্থা, একটা মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা করে এটা করতে পারবে না। আমাদের মনোজগতে এবং প্রশাসনিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, একটা মন্ত্রণালয় খুব সুন্দর একটা হাউজিং প্রকল্প আনলো যেটার থ্রিডি ইমেইজ দেখে আমরা মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কিন্তু অন্য মন্ত্রণালয়ে এসে যখন বলবে যে, আপনি তো আমার কৃষি জমি নিয়ে যাচ্ছেন। তখন অপূর্ব সুন্দর থ্রিডি প্রেজেন্টেশনের পরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এ কথা আর ধরাই হবে না। বলা হবে যে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অনুমোদিত হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বড় বড় প্রকল্পগুলো নিয়ে সংস্থাগুলো সিদ্ধান্ত ঠিকই নেয় এবং বলে যে, অমুক অমুক প্রেজেন্ট ছিল সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। এখন আমাদের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র তাড়াতাড়ি করে দেবেন। যেন পরিবেশ অধিদপ্তর আছেই সকল প্রকল্পের ছাড়পত্র হ্যাঁ বলার জন্য। এটা তো আমাদের কাজ না। প্রথম থেকেই যদি একসঙ্গে কাজটা করা হয় তাহলে এ সমস্যা থাকে না।
অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশে পর্যাপ্ত জমি থাকলেও দুর্বল পরিকল্পনা এবং জনসংখ্যার অসম বণ্টনের ফলে বিশৃঙ্খল নগরায়ণ ঘটেছে। এই সমস্যা সমাধানে সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। তিনি বলেন, কৃষিজমি নিয়ে শিগগির একটি আইন প্রণয়ন করা হবে যাতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কৃষিজমি অনিয়ন্ত্রিতভাবে দখল হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়।
অনুষ্ঠানে বিআইপির সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান সভাপতিত্ব করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী আহসান।