• ঢাকা বুধবার
    ২০ আগস্ট, ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২

ট্রাকসেলে একাধিকবার টিসিবির পণ্য নিচ্ছেন সুযোগসন্ধানীরা, বঞ্চিত প্রকৃত উপকারভোগীরা

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২৫, ১২:১৯ পিএম

ট্রাকসেলে একাধিকবার টিসিবির পণ্য নিচ্ছেন সুযোগসন্ধানীরা, বঞ্চিত প্রকৃত উপকারভোগীরা

সিটি নিউজ ডেস্ক

একজন কয়েকবার ও কয়েক জায়গার ট্রাকসেল থেকে কিনছেন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য। এভাবে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকিতে বিক্রি করা পণ্যের বড় অংশ ভোগ করছেন সিন্ডিকেট আর সুযোগসন্ধানীরা। এমন চিত্রই উঠে এসেছে সময় সংবাদের অনুসন্ধানে। সত্যতা স্বীকার করছেন ডিলাররাও। তবে নির্বিকার কর্তৃপক্ষ। অর্থনীতিবিদ বলছেন, অপচয়-দুর্নীতির কারণে যেমন উপকারভোগীদের বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে সামাজিক সুরক্ষা খাতের ব্যয়।

গত ১০ আগস্ট থেকে ৩০ দিনব্যাপী টিসিবির কার্যক্রম চলছে রাজধানীর ৬০টি স্থানে। এবার প্রতি প্যাকেজের দাম কমেছে ৬৫ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে একজন ভোক্তা তেল, চিনি ও ডালের ৪৫০ টাকার প্রতিটি প্যাকেজ নিতে পারবেন একবার।

তবে বাস্তবতা ভিন্ন। ট্র্যাকিং না থাকায় সুযোগসন্ধানীরা প্রায় সব ট্রাক থেকে ২ থেকে ৫টি প্যাকেজ পর্যন্ত কৌশলে নিয়ে যাচ্ছেন। ক্রেতারা জানিয়েছেন, অনেকেই একাধিকবার লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য সংগ্রহ করছেন, আবার কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও পণ্য পাচ্ছেন না।

অভিযোগ রয়েছে, শুধু একাধিক প্যাকেজ নয়, সিন্ডিকেট করে কাছাকাছি থাকা কয়েকটি বিক্রয় পয়েন্ট থেকেও পণ্য নিচ্ছে দুষ্টচক্র। তবে সেটা কীভাবে সম্ভব?

হাতিরপুল থেকে পাশের বিক্রয় পয়েন্ট শাহবাগের দূরত্ব পাঁচশ মিটার। সেখান থেকে আরেক পয়েন্ট প্রেসক্লাবের দূরত্ব দেড় কিলোমিটারের কিছুটা বেশি। পাশে কাকরাইলেও রয়েছে বিক্রয় পয়েন্ট। পাশাপাশি কারওয়ানবাজার, মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, কাঁঠালবাগান ঢাল, ফার্মগেটেও রয়েছে ট্রাকসেল পয়েন্ট। অর্থাৎ ঢাকার এই অঞ্চলে গড়ে প্রতি এক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে অন্তত দুটি টিসিবির ট্রাক।

৫ ট্রাক থেকে কোনো ব্যক্তি ২টি করে ১০টি প্যাকেজ নিলে বাজার মূল্যের তুলনায় দৈনিক কম-বেশি ৩ হাজার টাকা কমে পাচ্ছেন তেল, চিনি ও ডাল। ৩০ দিনে যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় লাখ টাকা। রয়েছে বাজারে বিক্রির অভিযোগও। যা স্বীকার করছেন ডিলাররাও। তারা বলছেন, অনেকেই এভাবে নিচ্ছেন। এটা তাদের একটা পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে যাদের বেশি প্রয়োজন দিন শেষে দেখা যাচ্ছে তারাই বঞ্চিত হচ্ছেন।

কারচুপির অভিযোগ স্বীকার করলেও টিসিবি দাবি করেছে, যা ঘটছে তা খুবই নগণ্য। টিসিবি মুখপাত্র মো. শাহাদত হোসেন বলেন, হয়তো কেউ কেউ ২-৩ বার পণ্য নিচ্ছেন, তবে এর সংখ্যা অত্যন্ত কম।

দুর্নীতি ও অপচয় রোধে পণ্যের পরিমাণ কমিয়ে বিক্রয় পয়েন্ট বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, যেহেতু নির্দিষ্ট কোনো আইডেন্টিফিকেশন নম্বর নেই, তাই সুযোগসন্ধানীদের ট্র্যাক করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেকেই একাধিকবার পণ্য পাচ্ছেন। তাই ট্রাকের সংখ্যা বাড়িয়ে পণ্যের পরিমাণ কমানো প্রয়োজন।

সরকার ১ কোটি উপকারভোগী পরিবারকে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিলেও এ পর্যন্ত ৫৭ লাখের কাছে কার্যকর কার্ড পৌঁছে দিতে পেরেছে টিসিবি।

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ