• ঢাকা শনিবার
    ১৬ আগস্ট, ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২

১৫-২০ জেলায় বড় বন্যার শঙ্কা

প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৫, ১০:০৭ এএম

১৫-২০ জেলায় বড় বন্যার শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে দেশের নদ-নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে ও দুধকুমার নদীর পাটেশ্বরী পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারোও পরিবার। ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলায় ডুবে গেছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও চরাঞ্চল।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) আবহাওয়া ডটকমের প্রধান আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ তার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫-১০ জেলা ও ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের ১৫-২০ জেলায় বন্যা হতে পারে।

এদিকে, দেশের চার সমুদ্রবন্দর ও সাত অঞ্চলের নদীবন্দরে সতর্কতা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। সমুদ্রগুলোকে তিন নম্বর ও নদীবন্দরগুলোকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে সংস্থাটি।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সর্বশেষ বুলেটিনে বলেছে, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারি, রংপুর, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

ফেসবুক পোস্টে মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫-১০টি জেলা এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ১৫-২০টি জেলা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই আবহাওয়াবিদ বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত ভরা বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর উজানে অবস্থিত ফারাক্কা বাঁধের গেট বন্ধ রেখে গঙ্গা এবং এই শাখা-উপশাখা নদীগুলোর মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ পানি আটকে রেখেছে জুলাই মাসের শুরু থেকে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত (সম্ভবত ১২ তারিখ পর্যন্ত)।

আবহাওয়া ডটকমের প্রধান আবহাওয়াবিদ জানান, বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫-১০টি জেলা এবং ৭২ ঘণ্টার (আগামী ৩ দিনের মধ্যে) মধ্যে ১০-১৫টি জেলা বন্যাকবলিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে। রাজশাহী, খুলনা ও ঢাকা বিভাগের যে জেলাগুলোর মধ্য দিয়ে পদ্মা নদীর পানি প্রবাহিত হয়। বৃহস্পতিবার ইতিমধ্যেও রংপুর বিভাগের তিস্তা ও দুধকুমার নদের পানি বন্যা বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া শুরু করেছে। ফলে নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা জেলার অনেক এলাকা বন্যাকবলিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে।

মোস্তফা কামাল পলাশ আরও জানান, আশঙ্কা করা যাচ্ছে, রোববার  থেকে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ বিভাগের ১৫-২০টি জেলা বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ার।

বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ ড. মো. ওমর ফারুকের দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়, উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ এবং দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূলের অদূরে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বৃহস্পতিবার দুপুরে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরসমূহের উপর দিয়ে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

সংস্থাটি জানায়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

নদীবন্দরের সতর্কবার্তায় আবহাওয়া অফিস জানায়, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোতে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট) সংবাদদাতা জানান

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে লালমনিরহাট জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে  প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২.১৫ মিটার)। যা বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে দুপুর ১২টায় পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ১৫ সেন্টিমিটার ও ভোর ৬ টায় ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।

জানা গেছে, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ আদিতমারী ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তার নিম্নাঞ্চল গুলো প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, বাহাদুরপাড়া, পলাশী এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুর খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে রোপা আমন ধানসহ বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে ভুগছেন পানিবন্দি মানুষ গুলো।

তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টের পানির লেভেল পরিমাপক নুরুল ইসলাম বলেন, উজানের ঢল ভারী বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার নিম্নঞ্চলের মানুষদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান

কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত দুই দিন ধরে ক্রমাগত পানি বেড়ে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের পানির সমতল ক্রমেই বিপদসীমার দিকে ফুঁসে উঠছে। এ অবস্থায় ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বৃহস্পতিবার বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে  পাউবো, কুড়িগ্রাম।

পাউবোর পূর্বাভাসে জানা গেছে, উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে লঘুচাপ সৃষ্ট হয়েছে। ফলে দেশের অভ্যন্তরে রংপুর ও ময়মনসিংহ এবং এর উজানে ভারতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আজ দেশের অভ্যন্তরে এসব অঞ্চলসহ উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম, মেঘালয় এবং অরুণাচল প্রদেশে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

পরবর্তী দুই থেকে চার দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত প্রধান প্রধান নদ-নদীর উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের ফলে আজ তিস্তা, ধরলা এবং দুধকুমার নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। সতর্কসীমায় পৌঁছাতে পারে ব্রহ্মপুত্রের পানি। তবে পরবর্তী দিনগুলোতে পানির সমতল স্থিতিশীল থেকে হ্রাস পেতে পারে।

পাউবোর নিয়ন্ত্রণকক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার নদের অববাহিকার পাটেশ্বরী গেজ স্টেশনে ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময়ে ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী গেজ স্টেশনে ০০ মিলিমিটার এবং তিস্তার কাউনিয়া গেজ স্টেশনে ৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থেকে কাউনিয়া গেজ স্টেশনে বিপদসীমার ২৯.১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভূরুঙ্গামারীর পাটেশ্বরী গেজ স্টেশনে বিপদসীমার ২৯.৬৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানিও সমান তালে বাড়ছিল। তবে সবকটি নদ-নদীর পানির সমতল বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীরবর্তী অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সঙ্গে চলছে ভাঙন। জেলার রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও নাজিমখাঁন এলাকার শতাধিক পরিবার ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এ অবস্থায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের দাবি জানিয়েছেন।

নাগেশ্বরী উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুধকুমার তীরবর্তী কেদার ও রায়গঞ্জ ইউনিয়নের কিছু নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে। এখনও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে তীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। তবে ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যার আশঙ্কা রয়েছে । নাজিমখাঁন এলাকায় তিস্তার পানির ভাঙনরোধে আগে ৫০০ ব্যাগ দেয়া হয়েছিল।  আবারও ১ হাজার ব্যাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো দিয়ে যদি ভাঙন কিছুটা ঠেকানো যায়। বরাদ্দ সীমিত হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান

নওগাঁ শহরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীর পানি হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের লিটন ব্রিজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নওগাঁ শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নদীর পানিপ্রবাহে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আগামী ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

পাউবো নওগাঁর উপসহকারী প্রকৌশলী বিপুল চন্দ্র শিকদার বলেন, ‘দিনাজপুর ও বালুঘাটে বৃষ্টি বেশি হলে দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে। তবে আজ বৃষ্টি না হওয়ায় পানির প্রবাহ এখনো নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে। আমরা সতর্ক দৃষ্টিতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’

এদিকে, হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনেকে এরই মধ্যে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান

ভারী বর্ষণে পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার কামাত কাজল দিঘি ইউনিয়নের কুচিয়ামোড় ও বন্দরপাড়া এলাকার সংযোগ সড়কের বিরামহীন বৃষ্টির কারণে একটি সুইগেট ব্রিজ ধসে পড়েছে। ব্রিজের দুই পাশের মাটি সরে যাওয়ার কারণে সংযোগ সড়ক বিছন্ন হয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় অবিরাম মুষলধারে বৃষ্টির কারণে। বৃষ্টির পানি সরাসরি ব্রিজের নিচে গিয়ে মাটি ধুয়ে দেয়, এতে সেতুর ভেতরের অংশ দুর্বল হয়ে পুরো ব্রিজটি ভেঙে পড়ে।

স্থানীয়রা জানান, এই ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় হাজারো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এই রাস্তা ছাড়া অন্য কোনো সরাসরি বিকল্প পথ নেই। বিকল্প পথে যেতে হলে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হবে। ফলে রাতে রোগী পরিবহণ, কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াত মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ব্রিজের দুই পাশে থাকা পাঁচটি দোকানও পানির তীব্র স্রোতে ভেসে গেছে।

পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, আমরা সরজমিনে পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। ওই ব্রিজের সংস্কারের বরাদ্দ এসেছিল টেন্ডারও করা হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে ব্রিজটি ভেঙে গেছে। নতুন ব্রিজ নির্মাণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। ফলে প্রতিদিন নতুন নতুন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে চরাঞ্চলের চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক ও কয়েকশ হেক্টর ফসলি জমি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ভাগজোত পয়েন্টে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ১৪.৭২ মিটার, যেখানে বিপদসীমা ১৫.৭০ মিটার।হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি রয়েছে ১২.৯০ মিটার, যা বিপদসীমা (১৩.৮০ মিটার) থেকে এখনও ৯৮ সেন্টিমিটার কম। তবে আবহাওয়া ও উজান থেকে পানির প্রবাহ অব্যাহত থাকলে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে পাউবো। ফলে দুই-এক দিনের মধ্যেই বিপদসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা করা হচ্ছে। চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম পানির নিচে চলে গেছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুশতাক আহম্মেদ জানান, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১৩টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বিদ্যালয়গুলো খোলা রাখা হয়েছে যাতে বন্যাকবলিত মানুষ সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নুরুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানিতে চরাঞ্চলের ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে। বিশেষ করে মরিচ, সবজি, ভুট্টা, ধান, পাট এবং কলা বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চারটি ইউনিয়ন ক্ষতির মুখে রয়েছে। এর মধ্যে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর পুরোপুরি মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
 

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ