
প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৫, ০৯:১৭ পিএম
আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ গাজা অভিমুখী নৌবহর ফ্রিডম ফ্লোটিলা থেকে আটক অধিকারকর্মীদের একটি অংশকে ইসরায়েলের কেৎজিয়েত কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন এবং ইসরায়েলে আরব সংখ্যালঘুদের নিয়ে কাজ করা মানবাধিকার সংস্থা ‘আদালাহ’র বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে দৃক।
শহিদুল আলম দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের নৃশংসতা বন্ধ এবং গাজায় ইসরায়েলি নৌ অবরোধ ভাঙার প্রত্যয় নিয়ে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন নৌযাত্রা শুরু করেছিল গাজা অভিমুখে। ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে আত্মপ্রকাশ করা আরেক উদ্যোগ ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজার আটটি নৌযানও এ যাত্রায় অংশ নিয়েছিল। মোট ৯টি নৌযানের এ বহরে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও অধিকারকর্মীরা যোগ দিয়েছিলেন। সেই দলে ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। গতকাল বুধবার ওই নৌবহরে আক্রমণ করে সব অধিকারকর্মী ও নাবিককে ধরে নিয়ে যান ইসরায়েলি সেনারা।
বাংলাদেশি আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম এবং গাজাগামী ‘কনশেনস’ ও থাউজেন্ড মেডলিনস কর্তৃক সংগঠিত নৌযান থেকে আটককৃত মানবতাবাদী কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে দৃকের এক বিবৃতিতে। একই সঙ্গে ইসরায়েলি কারাগারে বিচার ছাড়াই আটক থাকা হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মুক্তি এবং ফিলিস্তিনে চলমান দখলদারিত্ব ও গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন- দিল্লিভিত্তিক লেখিকা অরুন্ধতী রায়, নিউইয়র্কভিত্তিক স্কলার গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, কেপটাউনভিত্তিক নাট্যকার মাইক ভ্যান গ্রান, কাঠমান্ডুভিত্তিক সাংবাদিক কনক মণি দীক্ষিতসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক জলসীমায় ‘কনশেনস’ নৌযান থেকে শহিদুল আলমকে অবৈধভাবে অপহরণ করেছে ইসরায়েল, যা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল। একই নৌযানে থাকা ৯১ জন গণমাধ্যমকর্মী ও চিকিৎসাকর্মীসহ মোট ১৫০ মানবতাবাদী কর্মীর মুক্তিও দাবি করা হয়।
‘কনশেনস’ নৌযানটি ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’-এর সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গাজার ওপর ১৮ বছর ধরে চলমান ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে যাত্রা করেছিল। জাহাজটিতে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও চিকিৎসা সহায়তাকারীরা ছিলেন। তাদের দাবি, গাজায় সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দিয়ে ইসরায়েল ভয়াবহ ‘মিডিয়া ব্ল্যাকআউট’ তৈরি করেছে।
ফ্লোটিলার অংশ হিসেবে কাজ করা সংগঠন ‘থাউজেন্ড মেডলিনস টু গাজা’ জানিয়েছে, ‘নৌযানটি গাজায় চলমান নীরবতা ও নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক।’ সংগঠনটি বলছে, শত শত ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে হত্যার পাশাপাশি অনেকে এখনও বন্দি ও নিখোঁজ রয়েছেন।
‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’ ও ‘থাউজেন্ড মেডলিনস টু গাজা’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গাজার ওপর ইসরায়েলের অবৈধ ও প্রাণঘাতী অবরোধ বন্ধ করতে হবে, চলমান গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, অপহরণ করা সব স্বেচ্ছাসেবীকে মুক্তি দিতে হবে, ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা সরাসরি পৌঁছাতে দিতে হবে এবং ফ্লোটিলা নৌযানের ওপর চালানো সামরিক হামলার পূর্ণ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
‘কানাডা বোট টু গাজা’ ও ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ডেভিড হীপ বলেন, ‘ইসরায়েলের কোনো আইনগত অধিকার নেই। আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবীদের এসব জাহাজ থেকে আটক করার। জাহাজ জব্দ করাও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমনকি ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) সেই আদেশও অমান্য করেছে, যেখানে বলা হয়েছে গাজায় মানবিক সহায়তায় বাধা না দিতে।’
ফ্লোটিলা সংগঠকদের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আটক স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে অনেকের ওপর সহিংসতা চালানো হয়েছে এবং তাদের ইসরায়েলের কেৎজিয়েত কারাগারে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
বিবৃতিদাতারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দায়মুক্তির অভিযোগ এনে বলেন, আন্তর্জাতিক আইন ও আদেশ উপেক্ষা করে দেশটি মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে বাধা দিয়ে ইসরায়েল কার্যত এক ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছে।
এর আগে গত সপ্তাহে গাজা অভিমুখী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র ৪২টি নৌযান থেকে ৪৭৯ জনকে আটক করে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও ছিলেন। কয়েক ধাপে তাঁদের অধিকাংশকে ফেরত পাঠিয়েছে ইসরায়েল।