• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

নৌকা পেয়েও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে শরিকরা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩, ১১:৪২ এএম

নৌকা পেয়েও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে শরিকরা

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া ছয়টি আসনে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন ১৪ দলের শরিকরা। পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শক্তিশালী অবস্থানে আছেন বলে দলটির নেতাকর্মীরা মনে করছেন।

ফলে নৌকা পেয়েও স্বস্তিতে নেই ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এবং জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক সূত্র সিটি নিউজ ঢাকাকে এই তথ্য জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত আসন আদায়ে এমনিতেই গলদঘর্ম হতে হয়েছে শরিকদের। একেবারে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময়ে এসে জাসদ তিনটি, ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি ও জেপিকে একটি আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারের আসন নিশ্চিত না করতে পেরে জাসদ প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। ছয় আসন পাওয়ার পর আওয়ামী লীগের কাছে জয়ের নিশ্চয়তা চায় জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জেপি। তাদের দাবি ছিল দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়া। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ১৪ দলের শরিকদের এই দাবি আমলে নেয়নি। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়ে যান আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

দলীয় প্রতীক রেখে নৌকায় উঠেছেন জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। জোটের প্রার্থী হয়ে লড়ছেন নৌকা প্রতীকে। হঠাৎ কেন তার এই প্রতীক বদল? তার উত্তরে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র ফাইয়াজুর রশিদ খসরু সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ‘সাইকেল নিয়ে ভোটে নেমে জেতার সম্ভাবনা থাকলে তো তিনি নৌকায় উঠতেন না।’

পিরোজপুর-২ আসনে এমপি মঞ্জুর বিরুদ্ধে ঈগল নিয়ে মাঠে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক জেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ। নির্বাচনি এলাকার ৩ উপজেলার আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী রয়েছে তার সঙ্গে। কাউখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান পল্টন বলেন, ‘বাইসাইকেল নিয়ে নৌকার ভোটে এমপি হতেন মঞ্জু। এরপর আমাদের ফেলে রাখতেন অনাদরে। হতাম উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার। আজ ‘ঈগল’-এর পক্ষে এই যে নেতাকর্মীদের অবস্থান, তা সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। আমাদের কাছে মহারাজ শেখ হাসিনার প্রার্থী। ভোটের লড়াইয়ে প্রমাণ হবে কে বেশি জনপ্রিয়। এমপি মঞ্জু নাকি মহারাজ।’ তবে জেপির (মঞ্জু) প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহিম হোসেন বলেন, ‘নৌকা স্বাধীনতার প্রতীক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতীক। যারা আওয়ামী লীগ করে তারা কখনোই নৌকার বাইরে যাবে না। তাছাড়া এই এলাকার উন্নয়নের রূপকার আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তাকে হারানোর শক্তি কারও নেই।’

দীর্ঘ ২৮ বছর পর নিজের জেলা বরিশালে নির্বাচন করছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ঢাকা-৮ নির্বাচনি এলাকার বর্তমান এমপি রাশেদ খান মেনন। জন্মস্থান বাবুগঞ্জ উপজেলার পাশের নির্বাচনি এলাকা বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) এ প্রার্থী হয়েছেন তিনি। দলীয় প্রতীক হাতুড়ি রেখে ভোট করছেন নৌকা নিয়ে। প্রথমে তাকে নিজের জন্মস্থান বরিশাল-৩ আসনেই মনোনয়ন দিতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। ভোটযুদ্ধের জন্য সেটা নিরাপদ না ভেবে বেছে নেন বরিশাল-৩। এতকিছুর পরও যেন সহজ জয় নেই তার ভাগ্যে। তার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনি (ঢেঁকি), একই দলের নেতা শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের নাতি ফাইয়াজুল হক রাজু (ঈগল) ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী সংগীতশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস (গামছা)। এদের মধ্যে মেনন সমর্থকদের মাথা ব্যথার কারণ রাজু। কেননা তার পক্ষে ভেতরে-বাইরে কাজ করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটা বড় অংশ।

বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মিন্টু বলেন, ‘প্রথমে এখানে মনোনয়ন দেওয়া হয় সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুসকে। তাকে নিয়ে যখন আমরা ভোটের মাঠে তখন খবর আসে নৌকা নিয়ে আসছেন মেনন। তিনি এই এলাকার বাসিন্দা নন। এখানকার মাটি-মানুষের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তাছাড়া এটি আওয়ামী লীগের আসন। নৌকা নিয়ে এলেই যে আমরা অন্য দলের কাউকে মানব তা ভাবা ভুল। আমরা তাই ঈগল নিয়ে মাঠে নেমেছি। ৭ জানুয়ারি সর্বস্তরের ভোটার ঈগলে ভোট দেবে।’ অবশ্য রাশেদ খান মেননের পক্ষে নির্বাচনি মাঠে নামা বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলাদ হোসেন সানা সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ‘নৌকা আমাদের পরিচয়ের প্রতীক। জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকা দিয়েছেন তিনিই আমাদের প্রার্থী। তার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই এলাকার আওয়ামী লীগ নৌকার পক্ষে আছে এবং থাকবে।’

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। ইনুর সমর্থকরা জানিয়েছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জোটের প্রার্থীকে সহযোগিতা করছে না। তার কারণ হিসাবে বলছেন, কয়েক বছর ধরেই কুষ্টিয়ায় জাসদ ও আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। তাদের মধ্যে বনিবনা নেই। স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচনে দুই পক্ষ একে অপরকে মোকাবিলা করেছে। একাধিকবার সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে। এ আসনে হাসানুল হক ইনুর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন। তার পাশে রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

কামারুল আরেফিনের নির্বাচনি প্রতীক ট্রাক। স্বতন্ত্র প্রার্থী, সাবেক এই উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়েছেন, জাসদের পক্ষে আর ভাড়া খাটবে না আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তিনি বলেন, জাসদ নেতা (হাসানুল হক ইনু) নৌকা নিয়ে নির্বাচন করবেন, আমিও জনতার নেতা হয়ে মাঠে থাকব। অপরদিকে হাসানুল হক ইনুর বক্তব্য আওয়ামী লীগের সমর্থন ছাড়াও জাসদ একেবারে দুর্বল নয়। দেশের যে আসনে জাসদ ভোট ধরে রাখতে পেরেছে, তার একটি এটি। তিনি চান নির্বাচনি পরিবেশটা যেন শান্তিপূর্ণ ও সহাবস্থানমূলক হয়। কেউ যেন শিষ্টাচারবহির্ভূত কোনো কথা না বলে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন রাজশাহী-২ (সদর) আসনে। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা। তার নির্বাচনি প্রতীক কাঁচি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন দলের নেতাকর্মীদের নৌকার পক্ষে থাকার জন্য রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছেন। কিন্তু তার সমর্থক নেতাকর্মীদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশার সঙ্গে রয়েছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে ফজলে হোসেন বাদশা সোমবার সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল, সেটা মিটে গেছে। এখন তারা আমার পক্ষে কাজ করছেন। তিনি নির্বাচনে প্রত্যাশিত জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, রাজশাহীর মানুষ আমাকে আশাহত করবে না।

আওয়ামী লীগ ১৪ দলের শরিকদের জন্য আরও দুটি আসন ছেড়েছে। এর একটি বগুড়া-৪ (জাসদের রেজাউল করিম তানসেন) ও লক্ষ্মীপুর-৪ (জাসদের মোশাররফ হোসেন)।

বগুড়া-৪ আসনে রেজাউল করিম তানসেনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সাবেক এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মোল্লা (ঈগল) ও আলোচিত আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম (ডাব)। হিরো আলম বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী। এখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকলেও সুবিধাজনক অবস্থানে নেই নৌকার প্রার্থী জাসদের রেজাউল করিম তানসেন।

কেন্দ্রীয় নেত্রী ফরিদুন্নাহার লাইলী সরে গেলেও লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক সংসদ-সদস্য মো. আবদুল্লাহ। তার নির্বাচনি প্রতীক ঈগল। আবদুল্লাহর পক্ষে আছেন নির্বাচনি এলাকার বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।

 

জেকেএস/

আর্কাইভ