• ঢাকা মঙ্গলবার
    ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

উপজেলার নাম ইন্দুরকানী, মুক্তিযোদ্ধা সনদে জিয়ানগর; বিপাকে মুক্তিযোদ্ধারা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২২, ০৬:৪৮ পিএম

উপজেলার নাম ইন্দুরকানী, মুক্তিযোদ্ধা সনদে জিয়ানগর; বিপাকে মুক্তিযোদ্ধারা

পিরোজপুর প্রতিনিধি

উপজেলার নাম ইন্দুরকানী অথচ মুক্তিযোদ্ধা সনদে লেখা জিয়ানগর। তাই মুক্তিযোদ্ধা ডিজিটাল সনদ ও স্মার্ট পরিচয়পত্র নেননি মুক্তিযোদ্ধারা। আর এ ঘটনা ঘটেছে পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলায়। 

এ কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ডিজিটাল সনদ ও স্মার্ট পরিচয়পত্র বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে সনদ ও পরিচয়পত্র বিতরণের সময়ে উপজেলার নাম জিয়ানগর থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা এ বিষয়ে জোর আপত্তি তোলেন। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা করে সনদ ও স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুন্নেছা খানম।

জানা গেছে, এ উপজেলায় বর্তমানে গেজেটভুক্ত ১১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে।  এদের মধ্যে ৬৮ জন বর্তমানে জীবিত রয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ইন্দুরকানী উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে  সনদ ও স্মার্ট পরিচয়পত্র বিতরণের কথা থাকায় সকল জীবিত মুক্তিযোদ্ধা এবং মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হন। কিন্তু ডিজিটাল সনদ ও স্মার্ট পরিচয়পত্রে উপজেলার নাম জিয়ানগর লেখা দেখতে পান মুক্তিযোদ্ধারা।

এ সময়ে সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল লতিফ উপজেলার নামের বিষয়টি নিয়ে প্রথমে আপত্তি তোলেন। এ সময় উপস্থিত অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারাও উপজেলার নামের বিষয়ে আপত্তি তুলে ওই সনদ সংশোধনের জোরালো দাবি জানান। পরে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার ভোটার আইডি কার্ড এবং এমআইএস কপি জমা নেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা। 

এ সময়ে ভোটার আইডি কার্ড এবং এমআইএস তথ্য যাচাই করতে গেলে কিছু মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও স্মার্ট পরিচয়পত্রের নাম ঠিকানার সঙ্গে গরমিল ধরা পড়ে। নাম ঠিকানায় ভুলসহ ইন্দুরকানী উপজেলার পরিবর্তে জিয়ানগর লেখা থাকায় সনদ ও পরিচয়পত্র বিতরণ বন্ধ রেখে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভুল সংশোধন করার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার কথা জানান ইউএনও এবং সমাজসেবা কর্মকর্তা।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে জিয়ানগর নামে উপজেলা ঘোষণা করা হয়। পরে ২০১৭ সালে এর নাম জিয়ানগর থেকে পরিবর্তন করে ইন্দুরকানী উপজেলা হিসেবে গেজেট প্রকাশ করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,পাঁচ বছর আগে উপজেলার নাম পরিবর্তন হলেও সরকারি বিভিন্ন দফতরের ওয়েবসাইটে এখনো উপজেলা হিসেবে জিয়ানগর নামটি রয়েছে। যেটা স্থানীয়ভাবে সংশোধন যোগ্য নয়। যার কারণে ইন্দুরকানীর জায়গায় পূর্বের জিয়ানগর নামটি আসছে বলে জানান কর্মকর্তারা। তবে এ ভুলের স্থানীয় সমাজসেবা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় দায়ী নন বলে জানান মুক্তিযোদ্ধারা।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ ও পরিচয়পত্রে উপজেলার নাম জিয়ানগর লেখা থাকায় উপজেলার নাম সংশোধনের জন্য লিখিত আবেদন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়াও কিছু কিছু মুক্তিযোদ্ধার নাম ঠিকানাও ভুল রয়েছে। যেটা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
আমরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে উপজেলার নাম সংশোধন করে জিয়ানগর থেকে ইন্দুরকানী করার ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এর আগে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু ওয়েবসাইটে এখনো উপজেলার নামের সংশোধন হয়নি।

সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল লতিফ বলেন, পাঁচ বছর আগে আমাদের উপজেলার নাম জিয়ানগর থেকে পরিবর্তন করে ইন্দুরকানী নামে নামকরণ করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। অথচ এখন যে ডিজিটাল মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরি করা হয়েছে তাতে উপজেলার নাম জিয়ানগর লেখা রয়েছে। সনদে উপজেলার নাম ভুল লেখা থাকলে ওই সনদ নিয়ে আমাদের পরে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এ জন্য আমরা মুক্তিযোদ্ধারা এ সনদের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি। তাই আমরা কেউই এ সনদ ও স্মার্ট কার্ড গ্রহণ করিনি।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মশিদুল হক জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের এমআইএস তথ্যের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা ডিজিটাল সনদ তৈরি করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। সনদে উপজেলার নাম যে জিয়ানগর লেখা রয়েছে এটা আমাদের দ্বারা কোনো ভুল নয়। মূলত মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এখনো উপজেলার নাম জিয়ানগর লেখা রয়েছে। উপজেলার নাম সংশোধনের বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধারা এবং আমাদের অফিস থেকেও এ ব্যাপারে এর আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।

এ বিষয়ে ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুন্নেছা খানম জানান, বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ভুল সংশোধনের আবেদনসহ মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও স্মার্ট পরিচয়পত্রগুলোতে উপজেলার নাম যে জিয়ানগর রয়েছে তা সংশোধনের জন্য দ্রুত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।  

এএল/

আর্কাইভ