• ঢাকা শুক্রবার
    ০৩ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

ঝিনাইদহ পৌরসভায় আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরৎ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২২, ০৪:১৯ এএম

ঝিনাইদহ পৌরসভায় আত্মসাৎকৃত  টাকা ফেরৎ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহ পৌরসভার একটি একাউন্টে বিপুল পরিমান ভৌতিক টাকা জমা হয়েছে। এই টাকা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। কে বা কারা এই টাকা ঝিনাইদহ সোনালী ব্যাংকের ২৪০৭০০৪০০০৩১৬ নং একাউন্টে জমা দিয়েছে তার কোন তথ্য নেই ঝিনাইদহ পৌরসভায়। অত্যন্ত গোপনে ওই একাউন্টে ৭৪ লক্ষ ৫৮ হাজার ৮২ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। অনেকের ধারণা গত বছর চেক ও ভাউচার জালিয়াতির মাধ্যমে যে ৮৪ লক্ষ তেত্রিশ হাজার ছয়শত আটানব্বই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছিল, হয়তো সেই টাকাই পৌরসভার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা গোপনে জমা দিয়েছেন। 

প্রাপ্ত তথ্যমতে ২০১১ সালের পহেলা জুন থেকে ২০১৭ সালের ৪ আক্টোবর পর্যন্ত সর্বমোট ৩৮টি চেক ও ভাউচারের অনুকুলে ৮৪ লক্ষ তেত্রিশ হাজার ছয়শত আটানব্বই টাকা উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান চান একাই পৌরসভার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩১ লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার আটশত উনিশ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তোলন করেন। অথচ পৌরসভার ক্যাশ বইয়ে মাত্র ৩ লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার আটশত উনিশ টাকার কাজ দেখানো হয়েছে। সে সময় বিভিন্ন গনমাধ্যমে তথ্য ভিত্তিক খবর প্রকাশিত হলে তদন্তের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। 

ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু ২০২১ সালের ২৭ জুন ঝিনাইদহ পৌরসভার ২৯৬ নং স্মারকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি অভিযোগ পত্র দেন। ওই পত্রে পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান চাঁনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ তোলেন মেয়র। পত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, পৌরসভার বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে ৩১ লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার আটশত উনিশ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে ২৮ লক্ষ টাকা চেক জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে আত্মসাৎ করা হয়। মেয়রের অভিযোগ পত্র পাওয়ার পর ২০২১ সালের ১২ আগষ্ট স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের (পৌরসভা শাখা-১) উপ-সচিব মুহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ইয়ারুল ইসলামকে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানোর নিদের্শ দেন। পরবর্তীতে মেয়রের মেয়াদ কাল শেষ হলে উপ-পরিচালক ইয়ারুল ইসলাম পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু সেই তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। শাস্তি হয়নি চেক জালিয়াতির হোতাদের। 

এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনে যশোর সমন্বিত অফিস ঝিনাইদহ পৌরসভায় হানা দিয়ে ফাইল নিয়ে যান। কিন্তু দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এদিকে ঝিনাইদহ সোনালী ব্যাংক সুত্রে জানা গেছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর পৌরসভার ৩১৬ নং একাউন্টে ৭৪ লক্ষ ৫৮ হাজার ৮২ টাকা জমা হয়। পৌরসভার সাবেক হিসাব রক্ষক মকলেচুর রহমান মাসুদ এই টাকা জমা দেন। টাকা জমা দেওয়ার আগে এই একাউন্টে এক কোটি ২৮ লক্ষ ৯৬ হাজার ৯০৩ টাকা স্থিতি ছিল। 

ঝিনাইদহ পৌরসভার একাউন্টস অফিসার আব্দুল মজিদ জানান, ঝিনাইদহ পৌরসভার এই একাউন্টে শুধুমাত্র জমি রেজিষ্ট্রির ২% টাকা জমা হয়। অন্য কোন টাকা এখানে আসার কথা নয়। তিনি বলেন এই টাকা কিভাবে কারা জমা দিলেন তার কোন তথ্য পৌরসভার হিসাব শাখায় নেই। ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ জানান, অনেকের মতো তিনিও শুনেছেন বড় অংকের টাকা ব্যাংকে জমা হয়েছে, কিন্তু তার কাছে বা পৌরসভার হিসাব শাখায় কোন তথ্য নেই। 

বিষয়টি নিয়ে পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান চাঁন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ খন্ডন করে জানান, সাবেক হিসাব রক্ষক মকলেচুর রহমান দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে টাকা ফেরৎ দিয়েছেন। টাকা যে আত্মসাৎ করেছেন তিনিই আবার ব্যাংকে জমা দিয়েছেন। কারণ জমা বইতে তার সাক্ষর রয়েছে। তিনি কোন চেক জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবী করেন। তবে সাবেক হিসাব রক্ষক মকলেচুর রহমান এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চান নি। অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক সচিব আজমল হোসেন এবং আসাদুজ্জামান চান চাকরীচ্যুত ও দুদকের মামলা থেকে বাঁচতে আত্মসাৎকৃত বিপুল পরিমান টাকা সাবেক হিসাব রক্ষকের মাধ্যমে গোপনে ফেরৎ দিয়েছেন। এই পক্রিয়া সম্পন্ন করতে কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এমন কথা পৌরসভার সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীদের মুখে মুখে। 

বিষয়টি নিয়ে পৌরসভার সাবেক প্রশাসক ও ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক দপ্তরের উপ-পরিচালক ইয়ারুল ইসলাম জানান, তিনি পৌরসভার চেক জালিয়াতির ঘটনাটি তদন্ত করে  মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছেন। তিনি বলেন এটা একটা দীর্ঘ মেয়াদী পক্রিয়া। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সময় লাগবে। ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি গত ৩ অক্টোবর দায়িত্ব নিয়ে ৩ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার হিসাব পেয়েছেন। এর বাইরে কি হয়েছে তা কিছুই বলতে পারবেন না। 

তিনি জানান, ১০ মাস ৩ দিন প্রশাসক পৌরসভার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিই এই টাকার বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। তিনি বলেন, আমি পৌরসভা চালাতে গিয়ে আর পেছনে ফিরতে চাই না। আমি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। পৌরসভায় দুর্ণীতিবাজদের বহাল রেখে উন্নয়ন সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি মেয়র। 

 

এসএই

আর্কাইভ