• ঢাকা মঙ্গলবার
    ১৭ জুন, ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

এক অজবালার জীবন কথা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩, ০৩:৪১ এএম

এক অজবালার জীবন কথা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হাতে লাঠি কাঁধে ভিক্ষার ঝুলি। বয়স ৮১ ছুঁই ছুঁই। জীবনের ৮০ বছর কেটে গেছে। চোখে ঠিকমতো দেখতে পান না তিনি। এক সময় মেয়ে ও স্বামী সংসার নিয়ে আনন্দে ভরপুর ছিল তার পরিবার। কালের বিবর্তনে সবই ওলট-পালট হয়ে গেছে। একাকিত্ব, হাহাকার, আর্তনাদ সবটাই গ্রাস করেছে তাকে। পরনে পুরোনো বিবর্ণ ধুসর সাদা কাপড়ের ধুতি। বেশভুষায় বোঝা যায় কষ্ঠে জীবিকা নির্বাহ করেন। মেয়ের বিয়ের পরপরই স্বামী হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। 

মেয়ের জামাই মাঝে মধ্যে যে সহযোগিতা করত বেশকিছু দিন ধরে সেই মেয়ে ও জামাই দুজনেই জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় সহযোগিতা এখন বন্ধ। বয়সের ভারে ও বার্ধক্যজনিত কারণে কাজে ডাকে না প্রতিবেশীরাও। 

সরকারি সুযোগ-সুবিধা বলতে জুটেছে বিধবা ভাতা। সেই টাকায় চলে খাওয়া-দাওয়া, কাপড় আর ওষুধ কেনায় কুলাতে পারেন না। নিজের নেই কোনো জমি। অন্যের জমিতে ঝুপড়ি ঘর তুলে করছেন বসবাস। সে ঘরেই একপাশে থাকার বিছানা আর অন্যপাশে রান্না করার চুলা ও পাতিল, পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রান্নার কিছু লাকড়ি। ঘরের টিনের চালা ও বেড়ায় চারদিক অসংখ্য (ছিদ্র) ফুটোগুলো আটকানো আছে তারই ব্যবহৃত পুরোনো ছেঁড়া নোংরা সাদা কাপড়ে। সামান্য বৃষ্টিতে পানি পড়ে বিছানা ভিজে যায়। ঘরের বেড়ার ফুটো দিয়ে ঠাণ্ডা হাওয়া ঢুকে যে কারণে ঘুমাতে পারেন না ঘরে। পানি পানের নেই কোনো টিউবওয়েল, না আছে পায়খানা। যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলছে তার জীবন।

বলছি নীলফামারীর ডোমার উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়নের হংসরাজ গ্রামের মৃত ইলাম রায়ের (ভিক্ষাবৃত্তি করা) স্ত্রী অজবালার কথা। 

অজবালা ছলছল চোঁখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, হামার প্রধানমন্ত্রী শেখের বেটি গরিব মানুষগো পাকা ঘর দিছে, মোক একটা ব্যবস্থা করি দেও বাবা। এমন ঠাণ্ডয় মুই বোধ হয় আর বাজবো না। এই শেষ বয়সে এসে খেয়ে হোক বা না খেয়ে হোক দিনের শেষে নিশ্চিন্তে নিজ ঘরে গিয়ে যাতে ঘুমাতে পারি। পৃথিবীতে আমাকে দেখার কেউ নাই। মইরা গেলে কী হবে জানি না। 

তিনি বলেন, কেউ না থাকায় নিরুপায় হয়ে জীবন বাঁচাতে নিয়েছি ভিক্ষাবৃত্তি পেশা। কিন্তু করতে চাইনি, নিরুপায় হয়ে করছি। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি পাকা ঘর চাই। যেন সারাদিনের ক্লান্তির শেষে নিরবিঘ্নে নিজ বাসস্থানে গিয়ে ঘুমাতে পারি। 

হরিণচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাসেল রানা বলেন, আমি নির্বাচিত হয়েছি এক বছর মাত্র। এখনো কোনো ঘরের বরাদ্দ পাইনি। তবে বরাদ্দ পেলে এমন মানুষের অগ্রাধিকার থাকবে।

ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জান্নাতুল ফেরদৌস হ্যাপি বলেন, ওই ব্যক্তিকে আবেদন করতে বলেন এবং ঘরের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ