• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত মানুষদের জীবিত করতে হিমশিম খাচ্ছে নির্বাচন অফিস

প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৩, ১০:২৭ পিএম

মৃত মানুষদের জীবিত করতে হিমশিম খাচ্ছে নির্বাচন অফিস

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ধোপাকান্দি ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের নিতাই চন্দ্র দাসের স্ত্রী সাবিত্রী রাণী। গেল বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় তাকে মৃত ব্যক্তির তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়।

রোববার তিনি মোবাইল ব্যাংক একাউন্ট করতে গিয়ে দেখেন ডাটাবেইসে তাকে মৃত দেখাচ্ছে। পরে নির্বাচন অফিসে গেলে তিনি যে জীবিত রয়েছেন তার প্রমাণ স্বরূপ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সনদপত্রসহ আবেদন করতে বলেন। পরে ধোপাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের নিকট থেকে গত সোমবার এই মর্মে প্রত্যয়ন পত্র সংগ্রহ করেন যে, সাবিত্রী রাণী মারা যাননি। তিনি স্বশরীরে ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে হাজিরা দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে জীবিত রয়েছেন। অতএব মৃত্যু হওয়ার ভূয়া তথ্য সংশোধন করে তাকে হয়রানি থেকে মুক্ত করা হোক।

একই অবস্থা পৌরসভার গাংগাপাড়া গ্রামের আমান আলীর পুত্র শাফিকুল ইসলাম, জোতবিষ্ণুপুর গ্রামের নিতাই দাসের পুত্র দীপক দাসসহ ২৭ জনের। তাদের মৃত তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করায় স্কুলকলেজে সন্তানের ভর্তি, বয়স্ক ভাতার টাকা উঠানো, হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাওয়া এবং ব্যাংকের সেবা থেকে ৬ মাস ধরে বঞ্চিত রয়েছেন। অনেকেই ভাতার টাকা বা ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা তুলতে না পেরে চরম হয়রানির শিকার হয়েছেন। পরে উপজেলা নির্বাচন অফিসে বিশেষ ফরমে আবেদন করে মৃত তালিকা থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করতে সক্ষম হন।

টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত ২৭ জন মৃত ব্যক্তিকে পুনর্জীবীত করা হয়েছে। এখনো আইসিইউতে রয়েছেন আরো ২০৩ জন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এরাও পুনর্জীবন লাভ করবেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন অফিস।

গোপালপুর নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারি আনোয়ার হোসেন জানান, বছর খানেক আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য দেড় শতাধিক মাঠকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। এরা প্রত্যেকেই ছিলেন স্কুল শিক্ষক। বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং মৃত ভোটার তালিকা অন্তভূর্ক্ত করেন তারা। এদের প্রত্যেককে নিয়মাবলী শেখানো হয়। কিন্তু তারা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। জীবিতদের মৃত তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করে হয়রানির ব্যবস্থা করেছেন।

উপজেলা নির্বাচন অফিসার মতিয়ার রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, মাঠকর্মীদের সন্তোষজনক হারে সম্মানী দেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় আড়াইশ জীবিত মানুষকে মৃত দেখানো হয়েছে। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এসব মৃতদের জীবিত করতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে এসব অসম্পূর্ণ বা ভুল তথ্য দিয়ে জীবিতকে মৃত বানিয়েছেন তাদেরকে জীবিত করার কাজ চলছে। প্রতিদিনই ভোগান্তি নিয়ে মৃতরা অফিসে আসছেন। আর আমরা আইসিইউ থেকে সিরিয়াল বের করে তাদের জীবিত করছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিলে এসব মাঠকর্মীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনে মামলা করা হবে।

আর্কাইভ