• ঢাকা বুধবার
    ০১ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

রামগঞ্জে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ

প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৩, ০৩:৪৮ এএম

রামগঞ্জে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় চিকিৎসায় অনিয়ম ও  অবহেলার অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও কয়েকজন ডাক্তারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে ভুল চিকিৎসায় প্রাণ হারিয়েছে মা ও নবজাতক শিশুসহ বেশ কয়েকজন। এসব ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য বড় অঙ্কের টাকার লেনদেনের অভিযোগও এসেছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো থেকে।

গত চার জুলাই সন্তান প্রসবের সময় ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে রামগঞ্জ উপসম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন উপজেলার লামচর ইউনিয়নের দক্ষিণ হাজিপুর চৌকিদার বাড়ির মৃত মোঃ আমির হোসেনের মেয়ে ফাতেমা বেগম। ভুক্তভোগী স্বজনদের দাবী, অচেতন না করেই নাকি ফাতেমাকে অপরাশেন করায় ডাক্তার। এমনকি ব্যথানাশক ঔষধ না দেয়ায় তিনি চিৎকার করায় অপারেশন থিয়েটারে কর্মরতরা তখন নাকি তার হাত-পা ও মুখ চেপে ধরেছিল। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, মুত্যুর আগে ফাতেমা তাদেরকে এমনটা বলেছিলেন।

ফাতেমার স্বামী মনর আলি বলেছেন, ‘আমার বউয়ের তৃতীয় সন্তান ডেলিভারির সময় উপসম হাসপাতালে ডাক্তার নাজমুল হকের কাছে নিয়ে যাই। কিন্তু অনিয়ম করে সিজার করা ও ভুল চিকিৎসার কারণে ফাতেমার শারিরিক অবস্থার অবনতি দেখে ডাক্তার নাজমুল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলে কুমিল্লায় পাঠান। পরে ফাতেমা মারা যায়। এই ঘটনায় আমরা থানায় অভিযোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

অভিযুক্ত ডাক্তার নাজমুল হক জানান, ‘অপারেশন থিয়েটারের মধ্যেই ফাতেমা বেগম হার্টঅ্যাটাক করেন। আমরা বিষয়টি বুঝতে পেরে কুমিল্লা প্রেরণ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করি।’

এদিকে রামগঞ্জ ইসলামিয়ার হাসপাতালের বিপক্ষেও রয়েছে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ। ডাক্তারের অবহেলার কারণে পুরুষাঙ্গ হারাতে বসেছে উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের শাকতলা গ্রামের মিয়া রাজা পাটওয়ারী বাড়ির নজরুল ইসলাম মামুনের তিন বর্ষী শিশু মাহাদী। গত ৫ মে সুন্নতে খৎনা করার সময় ডাক্তারের ভুলে পুরুষাঙ্গ হারাতে বসেছে সে।

ভুক্তভোগী মাহাদীর দাদা আনোয়ার হোসেন বলেছেন, ‘আমার নাতিকে সুন্নাতে খৎনা করাতে ইসলামিয়া হসপিটালে গেলে চিকিৎসক এ্যানেসথেশিয়া না করেই অপারেশন করেছিল। তাদের ভুল চিকিৎসা মাহাদীর পুরুষাঙ্গ হারাতে বসেছে। বিগত দুই মাস ধরে আমরা ঢাকায় মাহাদীর চিকিৎসা নিচ্ছি। এই বিষয়ে আমরা রামগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগও করেছি।’

এ ঘটনায় রামগঞ্জ ইসলামিয়া হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল্লা মানিক অবশ্য দায় দিচ্ছেন ডাক্তারদের। তিনি বলেন, ‘এখানে হাসপাতালের কোনো ভুল নেই। যা ভুল হয়েছে তার জন্য ডাক্তাররাই দায়ী।  এখন যা করার ডাক্তাররা করবে। তারা ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে যোগাযোগ করছে। বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা চলছে।’

রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ এমদাদুল হক জানান, এই বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রামগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালের বিপক্ষেও রয়েছে ভুল চিকিৎসার কারণে প্রসূতি মায়ের প্রাণ হারানোর। উপজেলার পশ্চিম আঙ্গাপাড়া মোল্লা বাড়ির হারেছ মোল্লার মেয়ে নাজমা বেগমের অপারেশনের সময় ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করার অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবারকে টাকা দিয়ে মিমাংসার চেষ্টা করছেন অভিযুক্তরা।

নাজমা বেগমের বাবা হারেছ মোল্লা বলেন, ‘ভাদুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন ও কাউন্সিলর মোঃ মেহেদী হাছান সুমনের মাধ্যমে দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে মিমাংসার চেষ্টা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও অভিযুক্ত ডাক্তার। আমরা আমাদের মেয়েকে হারিয়েছি, এখন মিমাংসা হলেও তো মেয়ে আর ফিরে আসবে না।

রামগঞ্জ আধুনিক হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হোসেন বলেন, এক মাস আগে ঘটনাটি ঘটেছে। বিষয়টি মিমাংসা হওয়ার পথে রয়েছে।’
 

আর্কাইভ