• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০১ মে, ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

পুলিশ ও জনগণের দূরত্ব কমাতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার পরামর্শ

প্রকাশিত: মে ১, ২০২৫, ০৭:২৪ পিএম

পুলিশ ও জনগণের দূরত্ব কমাতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার পরামর্শ

রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহের সমাপনী দিনে অনুষ্ঠিত সেশনে বক্তব্য দিচ্ছেন অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

পুলিশ ও জনগণের দূরত্ব কমাতে বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। আর সমসমায়িক প্রেক্ষাপটে পুলিশকে গণ-অভ্যুত্থানের মামলা বাণিজ্য বন্ধের তাগিদ দেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।

বৃহস্পতিবার (১ মে) রাজধানীর রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহের সমাপনী দিনে ‘নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ: নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন’ শীর্ষক বিশেষ সেশনে এসব তুলে ধরেন বক্তারা।

এ সময় লেখক ও অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আমাদের বুকে হাত দিয়ে স্বীকার করতে হবে, পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। পুলিশ যে পজিশনে থাকার কথা ছিল সেই পজিশনে নেই। বাহিনীটি যেই আইনে চলে সেখানে পদে পদে সমস্যা। এসব বিষের মাঝেমধ্যে খোলাখুলি আলোচনা হওয়া উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ নয়, সমাজেরও অংশ। পুলিশের সঙ্গে জনতার বিভক্তির মূলে যেতে হবে, এটা হলো জনতার সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভক্তি। আর এই সমস্যার সমাধান হলো গণতন্ত্র।’

নিউ এইজের সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, ‘রাষ্ট্র যখন নিপীড়নের যন্ত্র হয়ে ওঠে, পুলিশকে তখন জনবান্ধব হতে দেয় না। পুলিশকে জনবান্ধব হতে হলে জনগণের ভাষা বুঝতে হবে।’

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আব্দুল কায়ুম বলেন, ‘ছাত্র-জনতা তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছে, তারা নতুন একটি বাংলাদেশ গড়তে চায়। একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীনতার পর। কিন্তু সঠিকভাবে আমরা এগুতে পারিনি, ব্যর্থ হয়েছি। এই যে একটা সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেক স্বপ্ন, এই স্বপ্ন যেন ব্যর্থ না হয়। সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২৪ পর্যন্ত আমরা যা দেখলাম, তা কল্পনা করা যায় না। আগেও গণতন্ত্র ছিল না, কিন্তু আমরা সেবা দিতে পেরেছি। তবে গত ১৫ বছরের মতো আমরা দারোয়ানে পরিণত হইনি। যখন একচ্ছত্র ক্ষমতা এসে যায় তখন প্রশাসন ভেঙে পড়ে। এটা ভয়, খুন-গুম ও সন্ত্রাস দ্বারা সম্ভব হয়েছে। এ সময়টাতে শুধু এক শ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তা না সব সেক্টরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা অতি উৎসাহিত হয়ে কাজ করেছে।’

পুলিশের আরেক সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা যদি না থাকে তাহলে পুলিশ কীভাবে কাজ করবে। যাদের সুবাদে আমরা আজ কথা বলতে পারছি, সেটা কতদিন বলতে পারবো সেটার কোনও গ্যারান্টি নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর যদি সদিচ্ছা না থাকে তাহলে সম্ভব না। পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কিন্তু ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার। এটা বদলানো পুলিশের হাতে নাই। পুলিশকে স্বাধীনতা দেয়ার পরেও তারা ব্যক্তি স্বার্থের জন্য দালালি এবং দুর্নীতিতে জড়ায়। তাই রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করলেও পুলিশ বাহিনীকে আগে ঠিক হতে হবে।’

পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম জানান, শক্তি নয় নৈতিকতাই বড় অস্ত্র এই প্রতিশ্রুতি পালনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে চায় তার বাহিনী।

ভবিষ্যতেও পুলিশের যেকোনো অনুষ্ঠানে সব শ্রেণী পেশার মানুষের সম্পৃক্ততা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক।

পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন– এপেক্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির মঞ্জু, কর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সায়মা চৌধুরী, নির্বাচন কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা।

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ