• ঢাকা সোমবার
    ২১ জুলাই, ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

পঞ্চগড়ে জনগণের মুখোমুখি প্রশাসক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে গণশুনানি

প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২৫, ০৮:২৩ পিএম

পঞ্চগড়ে জনগণের মুখোমুখি প্রশাসক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে গণশুনানি

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

ক্যালেন্ডারের পাতায় বুধবার। সকাল থেকেই পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বাড়ে বাড়তি ভিড়। দিনটি সাপ্তাহিক গণশুনানির জন্য নির্ধারিত। তাই ওই কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অবস্থান নেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এদের কেউ জমি জমা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে এসেছেন, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়  ভর্তি কিংবা বই, ল্যাপটপ, বাইসাইকেলের জন্য আবেদন করেছেন, কেউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য আবেদন করেছেন, আবার কেউ চিকিৎসা সহায়তা বা ঘর মেরামতের জন্য সাহায্যের আবেদন করেছেন, আবার কোন বেকার কিংবা অসহায় পরিবার আবেদন করেছেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার জন্য।

নির্ধারিত সময়েই শুরু হয় গণশুনানির কার্যক্রম। এক একজন করে আবেদনকারীর নাম ডাকা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক সাবেত আলী পাশের চেয়ারে বসিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনছেন তাদের অভিযোগ অনুরোধ বা কষ্টের কথা। সাথে সাথেই সাধ্য মতো দিচ্ছেন সমাধান। জেলা প্রশাসকের এমন আন্তরিকতা, ধৈর্য ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার দক্ষতা দেখে মুগ্ধ সাধারণ মানুষ। জেলা পর্যায়ে প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার পাশে বসে নিজেদের অভাব অভিযোগের কথা বলতে পেরে খুশি গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারিরা। নাগরিক সেবার এই পদ্ধতি প্রশংসা কুড়িয়েছে সব মহলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা প্রশাসক সাবেত আলী পঞ্চগড় জেলায় যোগদানের পর জেলার সমস্যা, সম্ভবনা ও উন্নয়নের জন্য সবাইকে সাথে নিয়ে বৃহৎ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেন। তার আলোকেই গণশুনানি কার্যক্রম শুরু করা হয় নতুন করে। শুরুতে লোকসংখ্যা কম থাকলেও দিন যতই যাচ্ছে  ভিড় বাড়ছে ততই। আগে ১০ থেকে ২০ জন আবেদনকারী হলেও বর্তমানে তা একশ থেকে দেড়শো ছাড়িয়েছে।  

জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য মতে গত কয়েক মাসে এই গণশুনানির মধ্য দিয়ে ৬ শতাধিক মানুষকে অসুস্থতা ও আর্থিক সহায়তা প্রদান, ৯২ টি জমি জমা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান, ২৫ জন শিক্ষার্থীকে বই কিনে দেয়া, ২৬ জনকে বিশ্ববিদ্যালয়  ও মেডিকেলে ভর্তিতে সহায়তা, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ৫ জনকে বাইসাইকেল, ৫ জন প্রতিবন্ধীকে হুইল চেয়ার প্রদান , আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ৫ জনকে অটোরিকশা, ১ জনকে গরু, ১০ জনকে সেলাই মেশিন, ৫ জন শিক্ষার্থীকে ল্যাপটপ ও ১ জনকে টিউশনির টেবিল বেঞ্চ, বোর্ড ও চেয়ার কিনে দেয়াসহ সরকারি সেবা পেতে হয়রানি হলে তারও নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এছাড়া আবেদনের আলোকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য জিআর, টিআর ও কাবিখা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে এই গণশুনানির মাধ্যমে।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার শিংরোড এলাকার তমিজ উদ্দিন বলেন, অনেক সরকারি কর্মকর্তা রয়েছে যারা আমাদের মতো গরিব মানুষকে কোন মূল্যায়ন করেন না। এই ডিসি মহোদয় তার পাশে বসিয়ে আমাদের কথা শুনেছেন। আমি আমার মেয়ে বিয়ের জন্য সহযোগিতার আবেদন করেছিলাম। তিনি শোনা মাত্রই আমাকে সহায়তা দিয়েছেন। আমরা চাই সব সরকারি অফিসাররা এমন জনবান্ধব হোক।

বোদা উপজেলা থেকে আসা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, একটি রাস্তার বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনেক অফিসে দৌড়ঝাপ করেছি। কোন সমাধান পাইনি। কিন্তু জেলা প্রশাসকের গণশুনানিতে অংশ নিয়ে সমাধান মিলেছে।  
আটোয়ারী থেকে আসা সমির উদ্দিন বলেন, আমি কিডনি রোগে আক্রান্ত। সহায়তার জন্য গণশুনানিতে এসেছিলাম। আমার মতো অনেক অসহায় মানুষ আসেন বুধবার করে। স্যার আমার কাগজপত্র থেকে আমাকে সহায়তা দিয়েছেন।  

পরিবেশ কর্মী নয়ন তানবীরুল বারী বলেন, প্রশাসন ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক নিবিড় করতে এই গণশুনানি দারুনভাবে কাজ করবে। মানুষ খুব সহজেই জেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে তার কষ্টের কথা, অভাব অভিযোগের কথা বলতে পারছেন এটা জনবান্ধব প্রশাসনের উদাহরণ। আমরা চাই নতুন বাংলাদেশের সকল সরকারি দপ্তর হবে হয়রানিমুক্ত আর জনবান্ধব।

জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, মন্ত্রীপরিষদের নির্দেশনায় আমরা নতুন উদ্যোমে এই গণশুনানি কার্যক্রম শুরু করি। মানুষজন নানা সমস্যা ও অভাব অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসে। আমরা তাদের সাধ্য মতো সমাধান দেয়ার চেষ্টা করি। দিন যতই চাচ্ছে  গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি আমরা খুব দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে যাচাই বাছাই করে পুনর্বাসনের জন্য তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য অটোরিকশা, গরু ও সেলাই মেশিন কিনে দিচ্ছি। এই গণশুনানির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সাথে প্রশাসনের যেমন দূরত্ব কমে আসছে তেমনি আস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ