• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দেখে আসুন বিনোদনের শহর ভারতের গোয়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২২, ১২:২৯ এএম

দেখে আসুন বিনোদনের শহর ভারতের গোয়া

আব্দুল বারী, ঢাকা

ভারতের বিনোদন শহর গোয়া। নাচগানের শহর গোয়া। মদের শহর গোয়া। এখানকার মানুষের প্রধান খাদ্য যেন মদ। মদ না খেলে এখানকার মানুষরা বুঝি বাঁচতে পারেনা। এখানকার মানুষ দিনে ঘুমায় আর রাতে জীবিকা অর্জন করে। হঠাৎ এখানে এলে মনে হতে পারে আপনি বুঝি ভূল করে কোন পরীর পিঠে চড়ে পরীস্থানের কোন শহরে চলে গেছেন। এখানে আপনি ইচ্ছে করলেই পরী সদৃশ নানা রঙের ললনাদের সাথে মত্ত হতে পারেন।

বেশির ভাগ শ্বেতাঙ্গ ও বিদেশী এই শহরের বেড়াতে আসেন। তাদের জন্য সেখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য হোটেল মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউজ, বার, ক্যাসিনো হাউজ, স্পা সেন্টার, বিউটি পার্লার ও ডিসকো। এখানকার মুদির দোকানেও পাওয়া যায় নামিদামী ব্রান্ডের হুইস্কি এবং ওয়াইন। এখানে এলে মনে হবে আপনি বুঝি কোন ইউরোপীয়ান কান্ট্রিতে আছেন।  

প্রতিটি সৈকতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা শহরে দুপুর বারোটার আগে রাস্তাঘাটে লোকের তেমন দেখা মেলেনা। দুপুর পর্যন্ত মানুষ ঘুমায়। সন্ধ্যায় সারা শহর জেগে উঠে। রাত যত বেশি হয় এখানকার জৌলুস ততো বাড়তে থাকে। সাদা কালো বাদামী চামড়ার নারী পুরুষ পর্যটকদের হৈ হুল্লোড়ে সারা রাত ধরে আমোদ প্রমোদ খাওয়া দাওয়ার সব কিছুই খোলা থাকে।

রেস্ট্রুরেন্টগুলোতে পাওয়া যায় নানা রকমের বিদেশি খাবার-দাবার। কমপক্ষে সাড়ে চার হাজার রুপির টিকেটে ডিসকো সেন্টারে নেপালিজ এবং শ্বেতাঙ্গীনিদের সঙ্গে বসে পানাহার এবং রাতভর নাচগান করতে পারবেন। রাজধানী পানজীম ছাড়াও গোয়ার ছোটখাটো সব শহরে বিশেষ করে সমুদ্র সৈকত কেন্দ্রিক জনপদে পানশালার ছড়াছড়ি।

এসব স্থানে মানুষের ভিড় দেখে মনে হয়, যেন মদ মানুষের প্রধান খাদ্য। আর ওটি ছাড়া বুঝি তাদের জীবন অচল।

গোয়ায় পর্যটনকে বিনোদন শিল্পে পরিণত করেন ডক্টর ডি সুজা। বেঘা সমুদ্র সৈকত গোল চত্বরে এ কৃতি ব্যক্তির স্টাচু বিদ্যমান। গোয়ার ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে মাঝারী উঁচু পাহাড়, নদী ছোটখাটো দ্বীপ ও সাগর। এজন্য সাগর ও নদীর মোহনায় প্রায় অরণ্যানি ঘেরা দ্বীপ। এসব দ্বীপেও গড়ে উঠেছে বিনোদন কেন্দ্র। কিন্তু সেসব খুবই ব্যয়বহুল।

স্থানীয় ট্যুর প্রোগ্রামের অফিস থেকে টিকেট নিয়ে মাত্র সাড়ে তিনশ টাকায় (২০১৯সাল) সারা দিন গোয়ার দর্শনীয় স্থান বিশেষ করে সীবিচ, অভয়ারণ্য এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান সমূহ দেখা যায়। এখানকার জীবনযাপন খুব উঁচু মানের। সব কিছুতে খরচপাতি বেশি। সীবীচে বেলুনে আকাশ ভ্রমণ, স্কেটিংসহ নানা বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পুলিশের কড়াকড়ি রয়েছে। এখানে ভিনদেশি অপরিচিত আইটেমের খাবারদাবার বেশি। এজন্য বাঙ্গালী খাবার হোটেল খুঁজে বের করে নেয়া ভালো। মার্কেট বিভিন্ন ধরনের পণ্য পাওয়া যায়।

টিকা: আয়তন ও জনসংখ্যার হিসেবে ভারতের চতুর্থ ক্ষুদ্রতম প্রদেশ গোয়া। বর্তমানে মাত্র ২টি জেলা নিয়ে গোয়া প্রদেশ। এর অবস্থান আরব সাগরের তীরে। এটি ভারতের ছোট্ট একটি পর্যটন প্রধান প্রদেশ। পর্তুগীজ সংষ্কৃতিতে সমৃদ্ধ ইউরোপিয়ান স্টাইলের এই শহরে বছরে প্রায় দুই কোটি পর্যটক সমাগম হয়। এখানকার রাষ্ট্রীয় ভাষা কঙ্কানী। হিন্দী অল্প কিছু মারাঠী ও কানাড্ডা ভাষায় স্থানীয়রা কথা বলে। 

আরব সাগরের পথ ধরেই একদিন এরাবিয়ানরা এসেছিলো সাউথ ইন্ডিয়ায়। একই পথে এসেছিলেন পর্তুগীজ ও ইউরোপীয়ান বণিকরা সহ বিভিন্ন দেশ ও জাতির লোকেরা। শেষাবদি সেখানে টিকে যায় পর্তুগীজরা। তারা প্রায় সাড়ে চার শো বছরে সেখানে রাজত্ব করেছে। তাদের সংস্কৃতির আগ্রাসণে হারিয়ে গেছে গোয়ার মূল সংস্কৃতি। ভিন্ন সংষ্কৃতির জন্য এই প্রদেশটিতে ভ্রমণকারীরা বেশি ভীড় করে।  

কী আছে সেখানে: এই প্রদেশের সবচেয়ে বড় নিয়ামক হলো ১৩ টি সীবিচ। এর মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য হলো বেঘা সীবীচ, ক্যান্ডেলিম সীবীচ, ক্যালানঘুট সীবীচ, অনজুমা সীবিচ, বাটারফ্লাই সীবীচ, ডোনাপাউলো সীবিচ ও গেলগিবেঘা সীবিচ। এই সীবিচের যে কোন শহরে গেলে পাবেন আলাদা অনুভূতি ও আনন্দ।

কিভাবে যাবেন সেখানেঃ কোলকাতা থেকে বিমান বা ট্রেনে গোয়া যাওয়া যায়। তবে বিমানে যাওয়া নির্জঞ্জাট। ট্রেনে যেমন টিকেট পাওয়া মুশকিল তেমনি ট্রেন স্টেশন থেকে ত্রিশ কিলো ট্যাক্সিতে পানজীম যেতে হয়। তখন বাড়তি খরচ ও সময় দুটোই ব্যয়িত হয়। তাই দেশ বা কোলকাতা থেকে হাজার পাঁচেক টাকার (সময়ের ব্যবধানে এই রেট বাড়তেও পারে) মধ্যে বিমানের রিটান টিকিট নিয়ে রওয়ানা দিবেন। বিমান বন্দরে নেমেই সড়ক পথে সীবিচ কেন্দ্রিক যে কোন একটি শহরে চলে যাবেন।  

কোথায় থাকবেন: এখানে সুলভ ও বিলাসবহুলে থাকা খাওয়ার আছে নানা আয়োজন। কয়েকটি হোটেলের নাম ঠিকানা উল্লেখ করলাম। পকেটের বহর মেপে যে কোন একটিতে উঠতে পারেন। যেমন, কোল্ভা বিচ থেকে ২০০ মিটার দূরে আমিগো প্লাজা রিসোর্ট। এখানে সুইমিং, গরম টাব, ওয়ার্ম সোক, ও আয়ুরবেদিক ম্যাসাজের ব্যবস্থা আছে। ভাড়া ১৫০০ টাকা থেকে শুরু।

4 ওয়ার্ড, কোল্ভা বিচ, তালুকা সেলসেট, কোল্ভা

উঠতে পারেন দ্য ক্যামেলট রিসোর্ট এ। পাবেন ইউরোপিয়ান স্টাইলের রুম, সুইমিং পুল বা মদ্যপ তৃণভূমি ব্যবহারের সুযোগ। ছুঁয়ে দেখতে পারেন কলোনিয়াল যুগের বিলাসিতাময় জীবন। এটা কলাঙ্গুট বিচ থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার। আর মাপুসা ফ্রাইডে মার্কেট এবং সিঙ্কুয়েরিয়াম বিচ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে। খরচ: তিন হাজার থেকে শুরু।

কোবরা ভ্যাডো, কলাঙ্গুট

বলিউড হোটেল, কোল্ভা বিচ থেকে অনতিদুরে। এখানে গেলে পাবেন বালির দুর্গ তৈরির সুযোগ, সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে হেঁটে বেড়ানো। রূপালী বালিতে ফ্যানাযুক্ত ঢেউ। থ্রি স্টার এই রিসোর্টে আয়ুরবেদিক ট্রিটমেন্ট করার ব্যবস্থা আছে। ভাড়া ১৮০০ থেকে শুরু।

স্যালসেট, কোল্ভা

কোকো হেরিটেজ হোম: বাগা বিচ থেকে অল্প দূরত্বে ব্লু হোয়েলথ ওয়াটার পার্কের কাছে। এর পুল পার্টি খুবই উপভোগ্য। আছে ওয়াটার পার্কের রাইড ব্যবহারের সুযোগ। খরচ: ৩০০০ হাজার থেকে থেকে শুরু। 

ব্লু হোয়েল ওয়াটার পার্ক, বাগা-আরপোরা রোড, বাগা

বেলে উইস্তা ওয়াদো-এনভির গ্রীন রিসোর্ট। এটা সাঁনগোল্ডা পঞ্চায়েত এবং কলাঙ্গুট বিচ থেকে সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে। এখানে ১২ টি বাংলো স্টাইলের রুম ও দুটি স্যুট আছে। খরচ: দুই হাজার থেকে শুরু। 

চোগম রোড সাঁনগোল্ডা, বারদেজ, সাঁনগোল্ডা

নিউ ইমেজ ইন, সেন্ট অ্যালেক্স চার্চ আর ক্যাসিনো পামস থেকে কয়েক মিনিটের দূরত্বে। এটা পরিবারের সাথে ছুটি কাটানোর জন্য আদর্শ। কমপ্লিমেন্টারি কন্টিনেন্টাল ব্রেকফাস্ট পাবেন। খরচ ৪হাজার থেকে শুরু।

কলাঙ্গুট

এখানে মোটর সাইকেল ভাড়া নিয়ে ঘুরতে পারেন সারা দ্বীপাঞ্চল।

সাবধানী বাণী: বিদেশ বিভূই সব দিকেই খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত পান করবেন না। স্পা বা হারবাল ম্যাসাজ খাওয়া দাওয়া যাই করুন না কেন, আগে রেট তারপর উপভোগ নীতি মেনে চলবেন। 

 

লেখক - 

আব্দুল বারী, সিনিয়র সাংবাদিক

 

আর্কাইভ