• ঢাকা শনিবার
    ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া আকাশছোঁয়া, মরদেহ কাঁধে নিলেন স্বামী-সন্তান

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৩, ০১:০৫ এএম

অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া আকাশছোঁয়া, মরদেহ কাঁধে নিলেন স্বামী-সন্তান

কলকাতা প্রতিনিধি

পৌষ মাসের শীতের সকাল। হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় জাতীয় সড়কের পার ধরে একটি মরদেহ চাদরে পেঁচিয়ে কাঁধে নিয়ে জোরে জোরে হেঁটে চলেছেন বছর চল্লিশের এক যুবক। আর মরদেহের পেছনের অংশ কাঁধে নিয়েছেন ৭০ বছরের আরেক বৃদ্ধ। কিছুটা গিয়ে হাঁপিয়ে পড়ছেন তারা। দেহ রাস্তায় নামাচ্ছেন। কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে ফের কাঁধে তুলে নিয়ে হাঁটছেন। বৃহস্পতিবার ভোরে এমন করুণ দৃশ্য দেখা যায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ক্রানি এলাকা।

প্রশ্ন করতে জানা যায়, হাসপাতালের দালাল চক্র মরদেহ বইতে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া চেয়েছিল তিন হাজার টাকা। কিন্তু দিন এনে দিন খাওয়া সংসারে সেই টাকা দিতে অপারগ ছেলে। সেই কারণে মায়ের মরদেহ চাদরে জড়িয়ে কাঁধে তুলে ৩৫ কিলোমিটার দূরের শ্মশানের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। পেছনে সঙ্গ দিয়েছেন বৃদ্ধ বাবা।

জানা যায়, জলপাইগুড়ির ক্রান্তি ব্লকের বাসিন্দা রামপ্রসাদ দেওয়ান পেশায় দিনমজুর। গতরাতে তিনি মা লক্ষ্মীরানি দেওয়ানকে প্রবল শ্বাসকষ্টের জন্য জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই মারা যান মা। বৃহস্পতিবার সকালে মায়ের মরদেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে গেলে হাসপাতালের দালাল চক্র ১ হাজার টাকা ভাড়ার পরিবর্তে ভাড়া চেয়ে বসে ৩ হাজার টাকা। পরে অনেক অনুরোধেও কাজ না হওয়ায় তিনি মায়ের মরদেহ কাঁধে নিয়ে হেঁটে ৩৫ কিমি দূরে ক্রান্তির উদ্দেশে রওনা দেন।

সকাল থেকে এভাবে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ যাওয়ার পর খবরটি পৌঁছায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গ্রিন জলপাইগুড়ির কাছে। পরে সংগঠনের কর্মীরা দ্রুত তাদের মরদেহবাহী গাড়িতে করে তাদের শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে নিজস্ব সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ পরিবহনের ব্যবস্থা আছে। তবে অভিযোগ রয়েছে- বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের দালাল চক্র হাসপাতাল চত্বরে সরকারি আম্বুলেন্স কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার গাড়ি ঢুকতে বাধা দেয়। এমন অবস্থায় রোগী ও রোগীর আত্মীয়-স্বজন বিপাকে পড়লেও আশ্চর্যজনক ভাবে চুপ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে যাতায়াত করেন হাসপাতাল কর্মীরা।  

এই বিষয়ে হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও দুপুর পর্যন্ত তার কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এর আগে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে মরদেহবাহী গাড়ি না পেয়ে মরদেহ নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে। যে মর্মান্তিক দৃশ্য ভারতজুড়ে তোলপাড় করে দিয়েছিল। এরপরই পশ্চিমবঙ্গে এমন দৃশ্য এড়াতে মৃত্যুর পর সরকারি খরচে সৎকার করার জন্য এককালীন অর্থ সাহায্য ছাড়াও নানা ব্যবস্থা নেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তারপরও দালাল চক্রের যাঁতাকলে এমন অমানবিক দৃশ্য এবার এই রাজ্যেও নজরে পড়ল।

আর্কাইভ