• ঢাকা শনিবার
    ১৬ আগস্ট, ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২

রক্ত ও পানি একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না: স্বাধীনতা দিবসে মোদি

প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৫, ০৩:৩৪ পিএম

রক্ত ও পানি একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না: স্বাধীনতা দিবসে মোদি

ভারতের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দিল্লির লালকেল্লায় ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারতের স্বাধীনতা দিবসের জাতীয় অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার ভাষণে চিরবৈরী পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি অনুপ্রবেশমুক্ত সুরক্ষিত দেশ গড়ার কথা বলেছেন।

১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৪৭ সালের এই দিনে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয় দেশটি। আগের দিন ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা পায় পাকিস্তান। এক দেশ ভেঙে স্বাধীনতা নিয়ে দুটি দেশ হলেও জাতি ও ধর্মগত বিভাজনের রাজনীতি এবং পরস্পরের প্রতি সার্বভৌমত্বের হুমকি তাদের বন্ধুত্বের পথ সুগম করতে দেয়নি।

রক্ত ও পানি একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না: স্বাধীনতা দিবসে মোদি

নয়াদিল্লির লাল কেল্লায় দাড়িয়ে স্বাধীনতা দিবসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১০৫ মিনিট ভাষণ দিয়েছেন। গত বছর তিনি ৯৮ মিনিট ভাষণ দিয়েছিলেন।

পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে মোদি বলেন, “ভারত পারমাণবিক হুমকি বা ব্ল্যাকমেলিং সহ্য করবে না, উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।”

সিন্ধু নদীর পানি বণ্টন চুক্তি প্রসঙ্গে পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, “রক্ত আর জল একসঙ্গে বইতে পারে না।”

৭৯ তম স্বাধীনতার দিবসের ভাষণে অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে বড় বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি। তিনি বলেন, “অনুপ্রবেশ বরদাস্ত করব না। এর জন্য ডেমোগ্রাফি মিশন চালু হবে দেশে।

“জনসংখ্যাগত পরিবর্তন কেবল সামাজিক পরিবর্তন নয়; এটা জাতীয় সুরক্ষার ক্ষেত্রেও হুঁশিয়ারির সমান," যোগ করেন তিনি।

জাতির উদ্দেশে মোদি বলেন, “আমি একটা চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে দেশের মানুষকে সতর্ক করে দিতে চাই। সুচিন্তিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই দেশের জনবিন্যাস বদলে দেওয়া হচ্ছে। নতুন নতুন সমস্যার বীজ বপণ করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের তরুণ প্রজন্মের জীবিকা কেড়ে নিচ্ছে। আমাদের মা-বোনেদের নিশানা করছে। এটা সহ্য করা হবে না।”

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী বাংলা বা বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করেননি। তবে তিনি বলেছেন, “এই অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের আদিবাসীদের জমি কেড়ে নিচ্ছে। তাদের ভুল বোঝাচ্ছে। দেশ এটা সহ্য করবে না।”

সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোকে টার্গেট করে মোদি বলেন, ‘‘সীমান্ত এলাকায় জনবিন্যাসে পরিবর্তন জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক। এর মাধ্যমে সংঘর্ষের বীজ বপণ হচ্ছে। অনুপ্রবেশকারীদের সামনে কোনো দেশ মাথা নত করতে পারে না। আমরা কীভাবে করব? আমাদের পূর্বপুরুষরা আমাদের স্বাধীনতা উপহার দিয়ে গেছেন। অনুপ্রবেশকারীদের রুখে তাদের প্রতি কর্তব্য আমাদের পালন করতে হবে।”

তিনি বলেন, “হাই-পাওয়ার ডেমোক্রেটিক মিশন এরইমধ্যে অনুমোদন পেয়ে গেছে। জাতীয় সুরক্ষায় প্রভাব ফেলা অনুপ্রবেশ রুখতেই এই কড়া অবস্থান।"

শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলছে। টার্গেট করা হচ্ছে নারীদের। সামাজিক কাঠামোকে নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যাগত পরিবর্তন ভারতের স্থিতিশীলতার জন্য বড়সড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।”

বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গারা বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশ করছে বলে বিজেপির যে অভিযোগ, সেটি সামনে এনে মোদি বলেন, “সীমান্ত দিয়ে বেআইনি প্রবেশ বন্ধ করা, সীমান্তে সুরক্ষা বাড়ানো এবং সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিচিতি সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্য নিয়েই এই মিশন চালু হচ্ছে।”

এদিন লাল কেল্লায় দাঁড়িয়ে ভারতের ‘মিশন সুদর্শন চক্র’-এর ঘোষণা দিয়েছেন মোদি। তিনি বলেন, “মিশন সুদর্শন চক্রের আওতায় ২০৩৫ সালের মধ্যে রাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরকে পুরোপুরি একটি নির্দিষ্ট সুরক্ষাকবচের মধ্যে আনা হবে। এর সেক্টরগুলোর মধ্যে সামরিক সেক্টর যেমন রয়েছে, তেমনই থাকবে হাসপাতাল, রেলও।”

“নতুন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পুরোপুরি সুরক্ষাকবচ দেওয়া হবে এই সব ক্ষেত্রকে। এই সুরক্ষা নিয়মিত বাড়ানো হবে। এই শক্তিশালী অস্ত্র যেমন হামলা ঠেকাবে, তেমনই দ্বিগুণ শক্তিতে শত্রুর ওপরে আঘাতও হানবে। রাষ্ট্রীয় সুরক্ষাকে মজবুত, আধুনিক করার জন্য এই সিদ্ধান্ত,” যোগ করেন মোদি।

স্বাধীনতা দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণে আত্মনির্ভরতা ভারত গড়ার ওপরও জোর দেন মোদি। শুধু সেমিকন্ডাক্টর বা অন্যান্য পণ্যই নয়, ভারতীয় যুদ্ধবিমানের জন্য ইঞ্জিনের ক্ষেত্রেও সেই একই বার্তা তার। একবিংশ শতককে ‘প্রযুক্তিনির্ভর সময়কাল’ হিসেবে তুলে ধরে মোদি ঘোষণা দেন, “২০২৫ সালের মধ্যেই ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ চিপ বাজারে আসবে।”

ভাষণে আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধ ইস্যুতেও  মুখ খুলেছেন মোদি, বলেছেন, “স্বাধীনতার পর সকলের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কৃষকরা আমাদের স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। তাই ভারত সরকার কৃষকদের স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস করবে না। দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে মোদি।”

আত্মনির্ভর ভারত নিয়ে তার সরকারের সাফল্যের কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হওয়া বিপর্যয়ের অন্যতম অংশ। আমাদের স্বার্থরক্ষার জন্য আমাদের অবশ্যই স্বনির্ভর হতে হবে।”

মোদি বলেন, “আমাদের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে আমরা অনেক দেশের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তুলতে হলে আমাদের জ্বালানির ক্ষেত্রে স্বাধীনতা লাভ করতে হবে।”

“এখন ইতিহাস লেখার সময়। বিশ্ববাজারকে আমাদের শাসন করতে হবে। কম দাম, উচ্চ মান- এই মন্ত্র সকলের লক্ষ্য হওয়া উচিত,” যোগ করেন মোদি।

স্বাধীনতা দিবসে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নতুন প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছেন মোদি। তিনি জানান, প্রথমবার চাকরিতে যোগ দেওয়া যুবক-যুবতীদের ১৫ হাজার টাকা দেবে সরকার, একইসঙ্গে বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও সাহায্য করবে।

তিনি জানান, নতুনদের যেসব সংস্থা চাকরিতে নেবে, তাদেরকে কর্মচারীপ্রতি ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দেবে সরকার। এই প্রকল্পের জন্য ৯৯ হাজার ৪৪৭৬ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করেছে সরকার।

আর্কাইভ