
প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২৫, ০৯:৫০ পিএম
বিশ্বজুড়ে যখন কোটি কোটি মুসলমান ঈদুল আজহা উদযাপনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত; নামাজ, কোরবানি ও পারিবারিক আনন্দ-উৎসবে মুখর, তখন ফিলিস্তিনের গাজার মানুষজন ঈদের সকালে জেগে উঠছেন ধ্বংস, ক্ষুধা ও শোকের বাস্তবতায়।
দ্বিতীয় বছরের মতো, গাজার ঈদুল আজহা উদযাপন হারিয়ে ফেলেছে তার চিরচেনা রূপ ও অনুভূতি। যেখানে ঈদের দিন মানেই ছিল খুশির মিলনমেলা, খাসির মাংসের সুস্বাদু ভোজ আর পরিবার-পরিজনের একত্র হওয়া, সেখানে আজ ঈদের অর্থ দাঁড়িয়েছে ‘ধ্বংসস্তূপের মাঝে বেঁচে থাকার সংগ্রাম’। দখলদার ইসরায়েলের গণহত্যা আনন্দমুখর এই উৎসবকে রূপান্তরিত করেছে এক অসহনীয় শোকের দিনে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বর্বর হামলা গাজার জনগণের জন্য ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
এছাড়াও আহত হয়েছেন ১ লাখ ২৫ হোজারেরো বেশি মানুষ। আর তাদের মধ্যে অনেকেই স্থায়ী শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বেঁচে আছেন। হাসপাতালগুলো চরম সংকটে, চিকিৎসা সামগ্রীর ঘাটতির কারণে অগণিত মানুষ যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তারউপর বৃহস্পতিবারও (৫ জুন) হাজার আল-আহলি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলায় অন্তত তিন সাংবাদিকসহ অনেক হতাহত হয়েছেন।
সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ আরব এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যায়। গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৯ লাখেরও বেশি মানুষ নিজ ঘর ছেড়ে শরণার্থী শিবির কিংবা ধ্বংসপ্রাপ্ত স্কুল, হাসপাতাল ও খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
যখন বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা চার দিনব্যাপী ঈদুল আজহার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন গাজার মানুষ জানেন— এই পবিত্র উৎসব তাদের জন্য কোনো স্বস্তি বয়ে আনছে না! শুক্রবার (৬ জুন) শুরু হতে যাওয়া ঈদ অনেকের কাছেই আর ধর্মীয় বা পারিবারিক আনন্দের বার্তা নয়, বরং তা যেন প্রতিদিনের ‘নির্মূল যুদ্ধের’ আরও একটি অধ্যায়।
হুসাম আবু আমের নামে গাজার এক বাবা দ্য নিউ আরবকে বলেছেন, ‘ঈদে আমার সন্তানদের আমি নতুন জামা আর খেলনা কিনে দিতাম। এটি ছিল বছরের শ্রেষ্ঠ আনন্দের সময়। কিন্তু এখন ঈদে শিশুদের একমাত্র ইচ্ছা হলো, এক খণ্ড রুটি। কোনো মিস্টি নয়, কোনো খেলনা নয়- শুধু খাবার!’
হুসাম থাকতেন গাজার জেইতুনে। দখলদার ইসরায়েল তার বাড়ি ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন থাকেন খান ইউনিসের একটি স্কুলে তাবুতে। দখলদারদের হামলায় বাড়ি হারানোর পাশাপাশি নিজের কয়েকজন আত্মীয় স্বজনকেও হারিয়েছেন তিনি। যে বাড়ি ও আত্মীয়দের সঙ্গে কয়েক দশকের সুখকর স্মৃতি ছিল তার।
হুসাম জানান, গত বছর তিনি তার সন্তানদের বলেছিলেন, আগামী ঈদের আগে যুদ্ধ বন্ধ হবে এবং আগে সবকিছু যেমন ছিল ওই অবস্থায় চলে আসবে। না জেনে তিনি গত বছর তাদের মিথ্যা বলেছিলেন। তবে এবার তার কিছু বলার নাই!