• ঢাকা মঙ্গলবার
    ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

অস্বাভাবিক দামে গম আমদানি ও গ্যাসকূপ খননের চুক্তি জনস্বার্থ পরিপন্থি : টিআইবি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২, ০১:৩০ এএম

অস্বাভাবিক দামে গম আমদানি ও গ্যাসকূপ খননের চুক্তি জনস্বার্থ পরিপন্থি : টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

চলমান আর্থিক সংকটের মধ্যে অবৈধভাবে মুনাফার সুযোগ দিয়ে রাশিয়া থেকে বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে গম আমদানির সিদ্ধান্ত এবং তিনগুণ বাড়তি ব্যয়ে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে ভোলায় তিনটি গ্যাসকূপ খননের চুক্তি জনস্বার্থ পরিপন্থি বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানিয়েছে সংস্থাটি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘কোভিড-১৯ এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক খাদ্য ও জ্বালানির বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তা দেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী সংকট তৈরি করেছে। যা মোকাবিলায় সরকার আর্থিকখাতে নানাবিধ বিধি-নিষেধ আরোপের পাশাপাশি রাজস্ব ব্যয়ের ক্ষেত্রে যৌক্তিভাবে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি গ্রহণ করেছে। সেই সময়ে আইন অমান্য করে আন্তর্জাতিক চলতি বাজার মূল্য থেকে অনেক বেশি দামে খাদ্যপণ্য আমাদানিতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত প্রডিনটর্গকে কার্যাদেশ দেওয়ার ঘটনায় আমরা হতবাক হয়েছি। তার চেয়েও বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, মাত্র ১ লাখ টন গম চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়া প্রতিষ্ঠান, কোন যাদুবলে ৫ লাখ টন গম সরবরাহের কাজ পেলো?’

তিনি বলেন, ‘আবার খাদ্যপণ্য আমদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না হয়েও কীভাবে তৃতীয় একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সরকারি পর্যায়ের ক্রয় প্রক্রিয়ায় মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে জড়িত হওয়ার সুযোগ পেলো? সঠিকভাবে বাজার যাচাই না করেই কীভাবে বাড়তি দামে গম কেনার সিদ্ধান্ত হলো এবং এই ক্রয় পরিকল্পনা দ্রুততার সঙ্গে অনুমোদন পেলো? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা জরুরি।’

টিআইবি মনে করে, সরকারি পর্যায়ে ক্রয় প্রক্রিয়ায় বেসরকারি তৃতীয় কোনো পক্ষের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই, তথাপি গম আমদানিতে ‍‍`ন্যাশনাল ইলেকট্রনিক বিডি‍‍` নামক প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততার যে সুযোগ তৈরি করা হয়েছে, তা বেআইনি।

অন্যদিকে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার কারণে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির চাপে সাধারণ মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠছে, তখন জ্বালানি নিরাপত্তার নামে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স আবিষ্কৃত ভোলার গ্যাস ফিল্ডে তিনটি নতুন কূপ খননের জন্য প্রতিটি কূপের ক্ষেত্রে বাপেক্সের ৮০ কোটির বিপরীতে তিনগুণ বেশি দামে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে ২৪০ কোটি টাকায় চুক্তি স্বাক্ষর সংশ্লিষ্ট মহলের ক্ষমতার অপব্যবহার মনে করে টিআইবি। যা অসাধু স্বার্থান্বেষী ও সুযোগসন্ধানী চক্রকে সুপরিকল্পিতভাবে অনৈতিক ও অতিমুনাফা অর্জনের সুযোগ করে দেওয়ার শামিল।

এ বিষয়ে ড. জামান বলেন, ‘সরকারি আর্থিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতার নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবং বাপেক্সের সক্ষমতাকে উপেক্ষা করে কেন তিনগুণ বেশি মূল্যে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে চুক্তি করা হলো, তা জনস্বার্থে খতিয়ে দেখা জরুরি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে যোগসাজশের দুর্নীতির এই যুগলবন্দির ফলে যারা প্রত্যক্ষ লাভবান এবং যারা এর পরোক্ষ সুবিধাভোগী, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

প্রসঙ্গত, রাশিয়ার কাছ থেকে সরকার পাঁচ লাখ টন গম কিনছে, তা টনপ্রতি দর প্রায় ৫০ মার্কিন ডলার বেশি পড়ছে। সরকারি পর্যায়ে চুক্তির ভিত্তিতে (জিটুজি) খাদ্য অধিদপ্তর রাশিয়ার গম কিনছে প্রতি টন ৪৩০ ডলার দরে। যদিও বাজারদর এখন ৩৮০ ডলারের মতো। সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি গত ১ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টন গম কেনার অনুমোদন দেয়, যা ধাপে ধাপে আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে দেশে আসার কথা।

এআরআই

আর্কাইভ