• ঢাকা বুধবার
    ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

আমি এখন মুক্ত, আবার সাধারণ মানুষের কাতারে : আবদুল হামিদ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৩, ১১:৫৮ পিএম

আমি এখন মুক্ত, আবার সাধারণ মানুষের কাতারে : আবদুল হামিদ

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও রাষ্ট্রপ্রধানকে রাষ্ট্রীয় বিদায় জানালো বঙ্গভবন। টানা দুইবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেসে সোমবার (২৪ এপ্রিল) বঙ্গভবন ছেড়েছেন জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আবদুল হামিদ। দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন শেষে সঠিকভাবে অবসরে যেতে পারায় তিনি দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। অবসরের সময়টা তিন ভাগে ভাগ করে কাটাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে সোমবার সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবন ছাড়েন। এখন তার নতুন ঠিকানা নিকুঞ্জের নিজ বাড়ি ‘রাষ্ট্রপতি লজ’।

রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ছেড়ে যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন তিনি। সাধারণ জীবন যাপন করা আবদুল হামিদ সব সময়ে মেতে থেকেছেন দলের নেতাকর্মী ও নিজ নির্বাচনি এলাকার হাওড়ের সাধারণ মানুষকে নিয়ে।
 

তাই দায়িত্ব ছাড়ার অনুবূতি জানিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি এখন মুক্ত, এখন সাধারণের কাতারে। অন্যদের মতো ফ্রি চলাচল করতে পারব–এটাই আমার বড় আনন্দ।


রাষ্ট্রপতি থাকাকালে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দায়িত্বের ভার নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। হাস্যরসে পরিপূর্ণ সে সব কথায় নিছক কৌতুক ছিল না। বরং মাটি-মানুষের কাছে সহজে যেতে না পারার আক্ষেপ প্রকাশ পেয়েছে বারবার।

তাইতো অবরের সময়টা তিনি নিজের মতো ভাগ করে নিয়েছেন। বলেছেন মাটি ও মানুষের কাছে ফিরবেন তিনি। তাদের জন্য বাকি জীবন কাজ করার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
 

অবসর সময়কে তিন ভাগে ভাগ করেছেন সদ্য বিদায়ী এই রাষ্ট্রপতি। এরমধ্যে ঢাকা, নিজ জেলা কিশোরগঞ্জ ও হাওড়ের কাদাজলে বেড়ে ওঠা মানুষকে সময় দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।


আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমার ইচ্ছা বেশিরভাগ সময় হাওড় এলাকায় থাকার। এর মধ্যে ঢাকাতে তো থাকতেই হবে। এছাড়া কিশোরগঞ্জ যেহেতু আমার রাজনীতির চারণভূমি, তাই সেখানেও সময় দেবো। তবে আমি সময়টাকে মোটামুটি ৩ ভাগে ভাগ করতে চাই। সেগুলো হলো: ঢাকা, কিশোরগঞ্জ ও আমার হাওড় এলাকা। এর মধ্যে বেশিরভাগ সময় আমার হাওড় এলাকায় থাকার চেষ্টা করবো।’

অবসরে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আর জড়ানোর ইচ্ছা নেই তার। তিনি বলেন, ‘প্রত্যক্ষ রাজনীতি করার কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ, এ দেশের মানুষ আমাকে এত বড় সম্মান দিয়ে দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছেন–এটাই বড় পাওয়া। সুতরাং আবার আমি রাজনীতি করব–মানে অন্য কোনো পদে যাব–এটা করলে আমার কাছে মনে হয় আমার দেশের মানুষকে হেয় (অসম্মানিত) করা হবে। সেটা আমি করব না। এখন তো আমি রিটায়ার্ড, বই লেখালিখি করব।’

১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে আবদুল হামিদের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের শেষ দিকে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। আবদুল হামিদ নবম সংসদে স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। আবদুল হামিদ ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতার পর থেকে সাতবার সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন।

পরে তিনি ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। দুই মেয়াদে টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন আবদুল হামিদ।
 

নিজের জীবনের প্রাপ্তি নিয়ে আত্মতুষ্টিতে না ভুগলেও প্রাপ্তির পুরোটাই দেশের মানুষকে উৎসর্গ করেছেন তিনি।

ভাটির শার্দুল খ্যাত জনপ্রিয় এই মানুষটি বলেন, ‘আজকের দিনে আমার যতটুকু সফলতা, তার জন্য পুরো দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার জন্য তাদের দোয়া ছিল। আমার জেলা ও এলাকার মানুষও আমার জন্য দোয়া করেছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন; আমার কাজের বিষয়ে কোনো বাধার সৃষ্টি হয়নি। তাই আমি তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

দীর্ঘ সময় দায়িত্বপালনকালে গণমাধ্যমের সহায়তার বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, সারা দেশে আমার যতটুকু জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা আছে, তার জন্য গণমাধ্যমের অবদান আমি অস্বীকার করবো না। আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই এই জন্য যে, বিভিন্ন সময় আমি যা বলেছি, সেটাকে টুইস্ট না করে সত্যিকারভাবেই প্রকাশ করে মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন।

রাজনীতিবিদদের সততার সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘‘আমি সারা জীবন মানুষের জন্য রাজনীতি করেছি, মানুষের বাইরে আমার কোনো চিন্তা ছিল না এবং কোনো দিন থাকবেও না। সব রাজনীতিবিদকে এই কথাই বলব যে, এ দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবেসে তারা যেন রাজনীতি করেন। তাহলে রাজনীতি আরও অনেক সুন্দর হবে। দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে এই কথা বলব।’  

তিনি আরও বলেন, আমি এ দেশের মানুষের কল্যাণ চাই, ভালো চাই। তারা ভালোভাবে থাকুক, সুখী থাকুক, সব দিক থেকেই ভালো থাকুক, সেই কামনা করি।


এদিকে সোমবার বঙ্গভবনের দরবার হলে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন শপথ নিয়েছেন। বেলা ১১টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে পৌঁছান। প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা যোগ দেন শপথ অনুষ্ঠানে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট নাগরিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। সকাল থেকে বঙ্গভবনে অতিথিরা আসেন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময়ের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দুই মেয়াদে টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন শেষে বঙ্গভবন ছেড়ে উঠেছেন রাজধানীর নিকুঞ্জের ৬ লেক ড্রাইভ রোডের তার নিজবাড়িতে।
 

জেকেএস/

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ