 
              প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৩, ০৫:৪৯ পিএম
-(5)-20230513054911.jpg) 
                 ছবি: সংগৃহীত
ঘূর্ণিঝড় মোখা দেশের দক্ষিণ উপকূলে ২০০৭ সালের আঘাত হানা সিডরের মতোই শক্তিশালী বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
শনিবার (১৩ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আসাদুর রহমান।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দেশের দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় সিডর প্রায় ৬ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। যদিও রেডক্রিসেন্টের হিসাবমতে, প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার।
উত্তর ভারত মহাসাগরে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে সৃষ্ট ওই ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ২৬০ থেকে ৩০৫ কিলোমিটার। সিডর খুলনা ও বরিশাল এলাকায় তাণ্ডব চালায়। সমুদ্র থেকে উঠে আসা ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে সব কিছু ভেসে যায়। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩২টি জেলার ২০ লাখ মানুষ। উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ছয় লাখ টন ধান নষ্ট হয়ে যায়। সুন্দরবনের প্রাণীদের পাশাপাশি অসংখ্য গবাদিপশু মারা যায়।
উপপরিচালক মো. আসাদুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা সিডরের মতোই শক্তিশালী। তবে সিডরের মতো কেন্দ্র একমাত্র বাংলাদেশ না হওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কা সিডরের থেকে কম।
মোখা উপকূলের দিকে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে। আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ ১৬০ থেকে ১৭৫ হতে পারে বলে জানান আসাদুর রহমান।
তিনি বলেন, মূল আঘাত রোববার সন্ধ্যা নাগাদ হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পুরো রাত অবধি থাকতে পারে। এরই মধ্যে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে বাঁক নিয়েছে মোখা। একটানা বৃষ্টি থাকলে পাহাড়ি অঞ্চলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের সবশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
 
মোখা সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। শনিবার রাত থেকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতায় বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতায় বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে এবং অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
                      
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে বিভিন্ন দেশ। যেমন এর আগে উপকূলে আঘাত হানা ‘সিত্রাং’ ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছিল থাইল্যান্ড। তেমনই ‘মোখা’ নামটি দিয়েছে ইয়েমেন।
যদিও ‘মোখা’ শব্দের আক্ষরিক কোনো অর্থ নেই। ইয়েমেনের বন্দর শহর ‘মোখা’র নামে ঘূর্ণিঝড়ের এ নামকরণ করা হয়েছে।
১৯ শতক পর্যন্ত মোখা ছিল ইয়েমেনের রাজধানী সানার প্রধান বন্দর। এ শহর থেকেই সারা বিশ্বে বিখ্যাত কফি ‘মোখা’ রফতানি করা হতো। কফির নামকরণও হয়েছে শহরের নামেই।
 
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
      