• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২২ মে, ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেখা দিল আশার আলো

বৈধপথ বন্ধ থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া যায় শ্রমিকরা, এক ফ্লাইটে ৪০ জনকে ফেরত

প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৫, ০৪:০০ পিএম

বৈধপথ বন্ধ থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া যায় শ্রমিকরা, এক ফ্লাইটে ৪০ জনকে ফেরত

ফাইল ছবি

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা

বৈধভাবে যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিক। দালালচক্রের প্রলোভনে  তারা মালয়েশিয়া গিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। 

গত সোমবার কুয়ালালামপুর থেকে  ইউএসবাংলা এয়ার লাইন্সের বিএস ৩১৬ ফ্লাইটে ৪০ জন যাত্রীকে ফেরত পাঠানো হয়। যারা টুরিস্ট ভিসা নিয়ে শ্রমিক হিসেবে মালয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। এই ৪০ জন ব্যক্তি তিন থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করে টুরিস্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদেরকে ফেরত পাঠিয়েছে। তাদের মত আরও এক হাজার শ্রমিক মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে আটকা থেকে মানবেতর জীবন যাপন করছে। 

ফেরত আসা শ্রমিকদের একজন মুন্সীগঞ্জের হেলেনা বেগম।  তিনি জানান, সুদে সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়ে স্থানীয় একজন দালালের মাধ্যমে গত ১৬ মে সকালে মালয়েশিয়া যান। তাকে ২২ দিনের টুরিস্ট ভিসা দেওয়া হয়। কথা ছিল এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্ট করে তাদেরকে নিয়ে যাবে। কিন্তু মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন পুলিশের সন্দেহ হলে তাদেরকে আটক করে। তিন দিন পর ফিরতি বিমানে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। হেলেনা বেগম বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই সন্তান নিয়ে কস্টে দিন কাটছে। তাই দালালের প্রলোভনে পড়ে সুদে সমিতি থেকে টাকা এনে মালয়েশিয়া যান। 

শরিয়তপুরের বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন বলেন, মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন অফিসের কারাগারে আমাদের দেশের এক হাজারের বেশি শ্রমিক আছে। যারা ফিরতি টিকেট আছে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে আর যাদের ফিরতি টিকেট নাই এবং জরিমানার টাকা দিতে পারছে না তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। 

গত সোমবার মালয়েশিয়ার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা সংস্থার (একেপিএস) এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বিমানবন্দরে অবতরণের ছয় ঘণ্টার বেশি সময় পরেও ইমিগ্রেশন কাউন্টারে উপস্থিত না হওয়ায় ১১২ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একেপিএসের মনিটরিং ইউনিটের নিয়মিত নজরদারি অভিযানের সময় বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০০ ব্যক্তিকে পরীক্ষা করে ওই ১১২ জনকে শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে কতজন বাংলাদেশি ছিলেন সেটা জানায়নি একেপিএস। বিবৃতিতে একপিসে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যারা দীর্ঘক্ষণ ধরে বিমানবন্দরে অবস্থান করছিলেন, তাদের অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে যাননি। বিদেশি নাগরিকদের এই ধরনের আচরণ মালয়েশিয়ায় প্রবেশের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি হয়। ফলে তাদের আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশি ছাড়াও ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিক ছিল। একেপিএস জানায়, আটককৃতরা মূলত পর্যটক হিসেবে প্রবেশের দাবি করলেও তারা ইমিগ্রেশন কাউন্টারের দিকে আগাননি। বরং বিমানবন্দরের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করছিলেন এবং বিশেষ কারো জন্য অপেক্ষা করছিলেন বলে সন্দেহ করা হয়। আটককৃতদের আরও তদন্ত ও পরিদর্শনের জন্য বিমানবন্দরের একেপিএস মনিটরিং ইউনিট অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে প্রবেশ প্রত্যাখ্যানের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জারি করা হয়। 

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা)-এর মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘শ্রমিকরা যেকোনো উপায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ চায়। বৈধভাবে শ্রমিকরা যেতে না পারলে অবৈধভাবে যেতে চায়। তাই বৈধভাবে শ্রমবাজার উন্মুক্ত করা জরুরী। অবৈধভাবে যারা টুরিস্ট ভিসায় শ্রমিক পাঠায় তাদের বিরুদ্ধে সরকারের উচিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।’

এদিকে, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে নিরাপদ অভিবাসন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণসহ শ্রমবাজার সম্পর্কিত তৃতীয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা বুধবার ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শুরু হয়। দুই দেশের  প্রতিনিধিদের সভা ইতোমধ্যে সফল হয়েছে এবং যেকোন সময় বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া শ্রমিক প্রেরণ শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এতে দেখা দিয়েছে আশার আলো। 

 

 

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ