
প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৫, ০৭:৩৬ পিএম
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। মঙ্গলবার (২৪ জুন) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় বিশেষ এই কর্মসূচির বিস্তারিত জানানো হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত কর্মসূচি- ১ জুলাই, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জাসহ অন্যান্য উপাসনালয়ে শহীদদের স্মরণে এদিন দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। জুলাই ক্যালেন্ডার দেওয়া হবে। জুলাই হত্যাযজ্ঞের খুনিদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির শুরু হবে; যা চলবে ১ আগস্ট পর্যন্ত। জুলাই শহীদ স্মরণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবৃত্তি চালু হবে।
আগামী ৫ জুলাই, বিভিন্ন সময়ে অবৈধ আওয়ামী সরকারের জুলুম নির্যাতন প্রচারে ৫ জুলাই দেশব্যাপী পোস্টারিং কর্মসূচি চালু।
আগামী ৭ জুলাই Julyforever.org নামক একটি ওয়েবসাইট চালু।
আগামী ১৪ জুলাই ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ১৪ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার করা হবে। একজন শহীদ পরিবারের সাক্ষ্য; যা চলবে ৩৬ জুলাই পর্যন্ত। জুলাই নারী দিবস হিসেবে এই দিনটিকে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিন প্রত্যেক জেলায় জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন। শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে ৬৪টি জেলায় ও দেশের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাইয়ের ভিডিও প্রদর্শন করা হবে। টিএসসিতে ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, প্রজেকশন ম্যাপিং ও জুলাইয়ের গান এবং ড্রোন শো অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ১৫ জুলাই ‘আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ১৫ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার করা হবে। জুলাইয়ের স্মৃতিচারণ, ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী ও জুলাইয়ের গান অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলইডি ওয়াল ইনস্টলেশন, প্রজেকশন ম্যাপিং এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হবে।
আগামী ১৬ জুলাই ‘কথা ক’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ১৬ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার করা হবে। শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে তিনটি বিভাগীয় শহরে ‘ভিআর শো’ প্রদর্শন করা হবে। রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ আবু সাঈদ স্মরণ অনুষ্ঠান, জুলাইয়ের গান এবং ড্রোন শো প্রদর্শন করা হবে। এছাড়া চট্টগ্রামে জুলাইয়ের গান এবং ড্রোন শো প্রদর্শন করা হবে।
আগামী ১৭ জুলাই ‘শিকল-পরা ছল’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ১৭ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার করা হবে। প্রতীকী কফিন মিছিল, দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই স্মরণ’ অনুষ্ঠান, বিভিন্ন প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের ১৭ জুলাইয়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা অনুষ্ঠান এবং দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের নিয়ে ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ১৮ জুলাই ‘আওয়াজ উডা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ১৮ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার করা হবে। ১ মিনিটের প্রতীকী ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট, জুলাইয়ের গান, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন ও ড্রোন শো, ঢাকার বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘জুলাই স্মরণ’ অনুষ্ঠান এবং ট্র্যাশন শো ও ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ১৯ জুলাই ‘কত বিপ্লবী বন্ধুর রক্তে রাঙা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ১৯ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার করা হবে। শহীদদের স্মরণে সমাবেশ-১ নরসিংদী, সাভার এবং ঢাকাসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে জুলাইয়ের তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। এইদিনটিকে গণহত্যা ও ছাত্রজনতার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আগামী ২০ জুলাই ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ২০ জুলাইয়ের স্মরণ ভিডিও শেয়ার করা হবে। ঢাকাসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে জুলাইয়ের তথ্যচিত্র প্রদর্শন এবং শহীদদের স্মরণে সমাবেশ-২ (স্থান—বসিলা, মিরপুর ১০) অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ২১ জুলাই ‘রক্ত গরম মাথা ঠাণ্ডা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ২১ জুলাইয়ের স্মরণ ভিডিও শেয়ার করা হবে। ঢাকাসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে জুলাইয়ের তথ্যচিত্র প্রদর্শন, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে সব মাদ্রাসায় জুলাইয়ের স্মরণে অনুষ্ঠান এবং শহীদদের স্মরণে সমাবেশ-৩ (স্থান-যাত্রাবাড়ি) অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ২২ জুলাই ‘আভাস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ২২ জুলাইয়ের স্মরণে ভিডিও শেয়ার করা হবে। জাহাঙ্গীরনগরে ‘অদম্য-২৪’ স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন, জুলাইয়ের পঙ্ক্তিমালা এবং কবিরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে জুলাইয়ের কবিতা পাঠ করবেন।
আগামী ২৩ জুলাই ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ২৩ জুলাইয়ের স্মরণ ভিডিও শেয়ার করা হবে। রেমিটেন্স যোদ্ধাদের সংযুক্ত করে অনুষ্ঠান, বৈশ্বিক সংহতি: জুলাই আন্দোলনে বিদেশি সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের মধ্যে যারা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের নিয়ে অনলাইন ও অফলাইন আয়োজন এবং দূতাবাসগুলোতে জুলাইয়ের কিছু নির্বাচিত ছবি ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। এছাড়া গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচি ও জুলাই গ্রাফিতি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ২৪ জুলাই ‘কি করেছে তোমার বাবা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ২৪ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার শিশু শহীদদের স্মরণে দেশব্যাপী কর্মসূচি, দেশব্যাপী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘২৪-এর রঙে গ্রাফিতি ও চিত্রাঙ্কন’ প্রতিযোগিতা, নারায়ণগঞ্জে শিশু শহীদ রিয়া গোপের স্মরণে অনুষ্ঠান, শিশু শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠান, জুলাইয়ের তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও গান, শিশু অ্যাকাডেমিতে জুলাইয়ের শিশু শহীদদের থিম করে একটি আইকনিক ভাস্কর্য স্থাপন, শিশুদের জন্য জুলাই আন্দোলনকে উপজীব্য করে গ্রাফিক নভেল প্রকাশ করা হবে। শিশু শহীদদের স্মরণে এই দিনটি আয়োজন করা হয়েছে।
আগামী ২৫ জুলাই ‘চলো ভুলে যাই’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ২৫ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার করা হবে। মঞ্চে বিপ্লব: দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট নাট্যমঞ্চ প্রস্তুত করে নাটক দেখানো হবে।
আগামী ২৬ জুলাই ‘পলাশীর প্রান্তর’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ২৬ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের জমায়েত ও অনুষ্ঠান, মাদ্রাসার ভূমিকা নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, জুলাইয়ের র্যাপ গানের অনুষ্ঠান। বাংলা একাডেমিতে জুলাইয়ের প্রকাশিত বই নিয়ে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ২৭ জুলাই ‘ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর গান’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ২৭ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী নিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক সংলাপ, কালচারাল প্যারাডাইম শিফট তথ্যচিত্র ও বৌদ্ধ পূর্ণিমা নিয়ে ভিডিওচিত্র প্রচার করা হবে।
আগামী ২৮ জুলাই ‘চলো ভুলে যাই’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ২৮ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার একটি ভিডিও বার্তা দিয়ে ওইদিনের অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। জুলাইয়ে স্বাস্থ্য কর্মীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে অনুষ্ঠান, ‘মনসুন আর্কাইভ’র প্রকাশ, ‘চিকিৎসা নেই, লাশ নেই’ শীর্ষক তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনী এবং সারা দেশে রক্তদান ও মেডিক্যাল ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ২৯ জুলাই ‘বাংলা মা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ২৯ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার করা হবে। জুলাই অভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক বুদ্ধিবৃত্তিক প্যানেল ডিসকাশন এবং গাজীপুরে অথবা সাভারে শ্রমিকদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ৩০ জুলাই ‘চল চল চল’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ৩০ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার করা হবে। অনলাইনে জুলাই স্মরণ, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখা সাংবাদিকদের নিয়ে অনুষ্ঠান। জুলাই অভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক বুদ্ধিবৃত্তিক প্যানেল ডিসকাশন অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ৩১ জুলাই ‘কাণ্ডারি হুঁশিয়ার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ৩১ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার করা হবে। দেশব্যাপী সব কলেজে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির স্মরণে অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ৩২ জুলাই (আগস্ট ১) ‘গণজোয়ার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ৩২ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার করা হবে। ৬৪টি জেলায় জুলাই নিয়ে বানানো তথ্যচিত্র প্রদর্শন, সব বাংলাদেশি দূতাবাসে জুলাই নিয়ে বানানো নির্বাচিত তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, ‘২৪ জুলাই ফটোগ্রাফারের চোখ দিয়ে’ কফি টেবিল বুক প্রকাশনা এবং জুলাই হত্যাযজ্ঞের খুনিদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির সমাপ্তি হবে।
আগামী ৩৩ জুলাই (আগস্ট ২) ‘আমি বাংলায় গান গাই’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ৩৩ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার। বাংলাদেশের সব জেলার ‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রজেকশন ম্যাপিং অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ৩৪ জুলাই (আগস্ট ৩) ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ৩৪ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার করা হবে। শাহবাগ থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত শোভাযাত্রা, রিকশায় জুলাইয়ের গ্রাফিতি অঙ্কন ও রিকশা মিছিল এবং ৬৪টি জেলায় জুলাই নিয়ে বানানো তথ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ৩৫ জুলাই (আগস্ট ৪) ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ৩৫ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার করা হবে। সারা দেশে জুলাই যোদ্ধাদের সমাগম, জুলাইয়ের কার্টুনের প্রদর্শনী, ৬৪টি জেলায় ‘স্পটলাইট অন জুলাই হিরোজ’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) ‘শোনো মহাজন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালায় ৩৬ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার করা হবে। ৬৪ জেলার কেন্দ্রে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদ পরিবারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ, শহীদদের জন্য প্রার্থনা, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অভিমুখে বিজয় মিছিল, এয়ার শো, গানের অনুষ্ঠান, ‘জুলাইয়ের ৩৬ দিন’সহ জুলাইয়ের অন্যান্য ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, ড্রোন শো এবং র্যাপের সঙ্গে বচসা অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত ১৯ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণ করতে আগামী ১ জুলাই থেকে বিশেষ কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে কর্মসূচি শুরু হবে। কিন্তু মূল ইভেন্ট শুরু হবে জুলাইয়ের ১৪ তারিখ থেকে। এটি চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। আমাদের এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য, জুলাইয়ে যে রকম পুরো বাংলাদেশ এক হয়েছিল, আবার সে অনুভূতিটাকে ফিরিয়ে আনা।