
প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ০৯:৩৪ পিএম
দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক নিষ্ক্রিয়তার পর আবারও সখ্যতার পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ, বাণিজ্যিক আলোচনা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্কের জটিলতা কিছুটা হলেও কমেছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সখ্যতা ও যোগাযোগ বাড়াতে সক্রিয় পাকিস্তান। এরই অংশ হিসেবে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন। তার সফর শেষ হওয়ার আগেই আসছেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার—যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি নতুন মাত্রা যোগ করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রায় ১৫ বছরের বিরতি শেষে গত এপ্রিলে ঢাকায় বৈঠকে বসেছিলেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দুই পররাষ্ট্রসচিব। ওই বৈঠকের ৯ দিন পর পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকায় আসার কথা ছিল। কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সংঘাতের জেরে সফরটি শেষ মুহূর্তে স্থগিত হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত শনিবার (২৩ আগস্ট) দুদিনের সফরে ঢাকায় আসছেন ইসহাক দার। এ উচ্চপর্যায়ের সফরকে ঘিরে বাড়ছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কৌতূহল।
পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফরে ছয় থেকে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে দু`দেশ। এছাড়া বাণিজ্য ও কানেকটিভিটির পাশাপাশি জঙ্গিবাদ দমন ও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনায় স্থান পাবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত ইস্যুগুলোও উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিল প্রায় অকার্যকর। তবে এখন আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষার কৌশলের অংশ হিসেবে পাকিস্তানসহ সবার সঙ্গে স্বাভাবিক ও পরিমিত সম্পর্ক রাখতে চায় ঢাকা।
অন্যদিকে, ইসলামাবাদ মনে করছে, এটাই বরফ গলানোর সেরা সুযোগ। তাই তারা বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী।
দুদিনের ব্যস্ত কর্মসূচি ইসহাক দারের
আগামী ২৩–২৪ আগস্ট দুইদিনের সফরে ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের উপ–প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। ২৩ আগস্ট দুপুরে বিশেষ ফ্লাইটে তার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম ও পূর্ব) ড. মো. নজরুল ইসলাম।
সেদিন সন্ধ্যায় ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের আয়োজনে একটি রিসিপশনে যোগ দেবেন তিনি। সেখানে বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে পৃথকভাবে মতবিনিময় করবেন।
দুইদিনের সফরে অন্তত সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে। পাঁচটি চুক্তি সম্পাদনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বাকিগুলো পাইপলাইনে, আলোচনা চলছে।
২৪ আগস্ট সকালেই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বৈঠকের পর ইসহাক দারের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সরকার।
এদিনই তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সফরকালে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সরকারের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকেরও কথা রয়েছে।
এছাড়া রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও তৎপর থাকবেন ইসহাক দার। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে। সফর শেষে ২৪ আগস্ট রাতেই বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়বেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।