• ঢাকা শুক্রবার
    ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যারা টিপ্পনি কাটতেন তারাই এখন প্রশংসা করছেন আঁখির

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২, ১০:৫৬ পিএম

যারা টিপ্পনি কাটতেন তারাই এখন প্রশংসা করছেন আঁখির

প্রতীক ওমর

নেপালকে হারিয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে লাল সবুজ দল। সাফ জয়ী দলের অন্যতম সদস্য আঁখি খাতুনের বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পাড়কোলা গ্রামে। তাঁত শ্রমিক আকতার হোসেনের কন্যা তিনি। বঙ্গকন্যাদের এমন অর্জনে গোটা দেশ আনন্দ-উল্লাসে ভাসছে। সারাদেশের সঙ্গে আনন্দিত সিরাজগঞ্জবাসীও।

তবে একটা সময় পথে ঘাটে অনেক নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে হয়েছে আখিঁকে। এক সময় যারা তাকে টিপ্পনি কাটতেন, এখন তারাই তাকে বাহবা দিচ্ছেন, প্রশংসা করছেন। এমনটাই জানালেন ফুটবলে আখিঁর হাতেখড়ি দেয়া শিক্ষক পাড়কোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক মো. মনসুর রহমান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক মনসুর রহমানের সহযোগিতায় দরিদ্র তাঁত শ্রমিক আকতার হোসেনের মেয়ে আঁখি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নারী ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করেন। প্রথমে উপজেলা, জেলা, রাজশাহী, ঢাকায়। এরপর আর থামতে হয়নি আঁখিকে। অনূর্ধ্ব ১৫ জাতীয় দলেও খেলার সুযোগ পায় আঁখি। নারী হয়ে ফুটবল খেলে বলে এক সময় গ্রামবাসী তাকে কটুকথা ও অনেক ধরনের নৈতিবাচক মন্তব্য করেছেন। সেই তারাই এখন আঁখিকে বাহবা দিচ্ছেন, প্রশংসা করছেন। কারণ আঁখি এখন বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের তারকা খেলোয়াড়। গত ডিসেম্বরে ভারতকে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লাল সবুজের দল। আর সে কারণেই কটুকথাকারীরা এখন প্রশংসা করছেন আঁখির।

আঁখির বড় ভাই নাজমুল ইসলাম বলেন, আমাদের সংসার এখন সুখের। আমাদের আর কোন কষ্ট নেই। আগে আমাদের অভাব ছিলো। মা মাঝে মধ্যেই আশ-পাশের বাড়িসহ নানা বাড়ি থেকে চাল-ডাল আনতো। এখন আর আনতে হয় না।

স্থানীয় আঁখির বান্ধুবি মনোয়ারা, তিশা ও উর্মি জানান, আমরা আঁখির সাথেই পড়েছি। ও ছোট বেলা থেকেই ফুটবল, দৌড় ও জাম্পিং খেলায় প্রথম হতো। আঁখি আমাদেরসহ সকলের গর্ব।

পাড়কোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন হোসেন জানান, ২০১১ সালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নারী ফুটবল খেলা শুরু হয়। পরের বছর আঁখিকে নিয়ে দল গঠন করেন সহকর্মী মনসুর রহমান। তিনি নিজেও একজন সাবেক ফুটবলার ছিলেন।

তাঁত শ্রমিক আঁখির বাবা আকতার হোসেন জানান, গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের মনসুর স্যার এবং ইব্রাহিম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের লাকী ম্যাডাম আমার মেয়ে আঁখিকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি ওই দু’জন শিক্ষকের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আঁখির জন্য আজ আমি গর্বিত ও সম্মানিত। প্রধানমন্ত্রী উপহার হিসেবে ১৫ লাখ দিয়েছেন। সে অর্থ দিয়ে আমি জমি কিনে চাষাবাদ করে সংসার চালাচ্ছি।

ইব্রাহিম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যায়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহার জানান, নারী ফুটবলের জয়ের পেছনে আছে বঙ্গমাতা টুর্নামেন্ট। আঁখির উঠে আসা এই টুর্নামেন্ট দিয়েই। ২০১৪ সালে আমাদের বিদ্যালয়ে ভর্তির পর বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলে আঁখি। এরপরে নাম লেখায় বিকেএসপিতে। সেখান থেকে ডাক পায় ২০১৫ সালে তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ গ্রহণকারী বাংলাদেশ দলে। সেখানেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। আঁখি, পারভীন, জেসমিনসহ ১২ জনকে নিয়ে আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুন নাহার লাকী নারী ফুটবল খোলোয়ারদের একটি দল গঠন করেন। ৮ জন বিকেএসপিতে সুযোগ পেলেও অন্যান্যরা ঝড়ে পড়ে। এত দারিদ্রদের মধ্যেও তাঁত শ্রমিক কন্যা আঁখি দমেনি।

জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল হাসান হিলটন জানান, নারী ফুটবলার আঁখি সিরাজগঞ্জের গর্বিত সন্তান। পুরো খেলা আমি মাঠেই দেখেছি। মুহূর্তের ভিতরে ওভারলেকিং ছাড়া লং পাসের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে সবসময় চাপে রেখেছিল। তার এই অসামান্য অবদানে জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমরা আঁখিকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।

জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট আঁখির ফুটবলে হাতেখড়ি। এর পরে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পায়। এখন জাতীয় দলের হয়ে খেলছে। বর্তমানে আঁখির খেলার মান অসাধারণ। সাফের শিরোপা লড়াইয়ে দেশের হয়ে অবদান রাখায় আমরা আনন্দিত। জেলা প্রশাসনের পক্ষ্য থেকে আগামীতে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হবে।

জেডআই/

আর্কাইভ