• ঢাকা সোমবার
    ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাহাড়ে সাফজয়ী ঋতুপর্ণাদের অন্যরকম সংবর্ধনা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২, ০৪:২৭ পিএম

পাহাড়ে সাফজয়ী ঋতুপর্ণাদের অন্যরকম সংবর্ধনা

প্রতীক ওমর

কয়েক দিন আগে দেশের নারী ফুটবলে সর্বোচ্চ সম্মান বয়ে এনেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। নেপালে সাফ জিতে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়েছেন বাঘিনিরা। সেই দলের অন্যতম সদস্য ঋতুপর্ণা চাকমা, রুপনাসহ পাঁচ পাহাড়ি কন্যা। ঋতুপর্ণার বাড়ি পার্বত্য জেলা রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার মঘাছড়ি এলাকায়। জয়ের খবর আসার পর থেকেই আনন্দে ভাসছিল তার জেলা। অপেক্ষায় ছিল কবে ঘরে ফিরবে বাঘিনি ঋতুপর্ণারা।

অবশেষে বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) এলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ। সাফজয়ী ঋতুপর্ণা চাকমার আগমন ঘিরে ব্যাপক আয়োজন করা হয়। দুই কিলোমিটার দীর্ঘ পথজুড়ে জ্বালানো হয় আলোর মশাল। সাফজয়ী পাঁচ পাহাড়ি কন্যার গাড়িটি মঘাছড়িতে পৌঁছামাত্রই করতালিতে তাঁদের স্বাগত জানায় এলাকাবাসী। রুপনা, ঋতুপর্ণা, মনিকা, আনাই, আনুচিংকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তাঁদের শিক্ষাগুরু বীর সেন চাকমা। পরে সেই মেঠো পথ ধরে এই ফুটবলকন্যারা গেছেন সতীর্থ ঋতুপর্ণার বাড়িতে। ফুটবলাররা গুটি গুটি পায়ে এগিয়েছেন, আর সামনে থেকে একের পর এক মশাল জ্বলে উঠেছে!

সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফেরার পর অনেকেই সংবর্ধনা দিয়েছে ফুটবলার মেয়েদের। কিন্তু ব্যতিক্রমী এই আয়োজন দেখে চমকেই গেছেন রুপনারা। ঋতুপর্ণা চাকমার কথায়ই তা স্পষ্ট, ‘আমাদের আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি। ভাবতেই পারিনি এলাকায় এভাবে বরণ করে নেওয়া হবে আমাদের। সত্যিই ভীষণ চমকে গেছি। বীর সেন স্যার ও শান্তি মণি স্যারদের জন্যই আমরা এত দূর আসতে পেরেছি। ’

এই আয়োজনের উদ্যোক্তা বীর সেন চাকমা বললেন, ‘আজ আমাদের শূন্য ঘরে সুন্দর এলো। মেয়েদের ফুটবল খেলাকে অনেকে বাঁকা চোখে দেখত। সবাইকে বোঝাতে চেয়েছি, মেয়েরা বোঝা নয়। বরং ঠিকঠাক পরিচর্যা করতে পারলে ওরা ফুল হয়ে ফুটবে। এ রকম আলোকিত মানুষ যেদিকে যাবে আশপাশ আলোকিত হবে। তাই এমন উদ্যোগ। ’

মঘাছড়ি থেকে আজ বিকেলে মোটর শোভাযাত্রা করে রাঙামাটি শহরে নেওয়া হবে পাঁচ ফুটবলারকে। জেলা স্টেডিয়ামে এই পাঁচজন এবং শিক্ষক বীর সেন চাকমা আর স্কুলের কোচ শান্তি মণি চাকমাকে সংবর্ধনা দেবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা প্রশাসন ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।

বীর সেন চাকমা মঘাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এখন তাঁর কর্মস্থল উল্টাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মাসখানেক পরেই অবসরে যাবেন বীর সেন। কর্মজীবনের শেষ বেলায় এসে অর্জন করলেন শিক্ষকতা জীবনেরই সবচেয়ে বড় গৌরবগুলোর একটি। রুপনা, ঋতুপর্ণা, মনিকা, আনাই, আনুচিংসহ জাতীয় ফুটবল দলের অনেক খেলোয়াড়ের উঠে আসার নেপথ্য কারিগর তিনি।

মঘাছড়ি স্কুলের মাঠ নেই। বীর সেন চাকমা তাই প্রতিদিন বিকেলে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে যেতেন মেয়েদের। অনুশীলনের পর আবার নিয়ে আসতেন। একা কুলিয়ে উঠতে না পেরে একসময় অর্থের জন্য অনেকের কাছে হাত পেতেছেন। উপায় না পেয়ে খেলোয়াড়দের থাকা-খাওয়া এবং সরঞ্জামের খরচ মেটানোর জন্য নিজের প্রভিডেন্ট ফান্ড পর্যন্ত ভেঙেছেন। আজ তিনি নিশ্চয় অনেক খুশি। নিজেকে সফল ভাবছেন এই কারিগড়।

জেডআই/

আর্কাইভ