• ঢাকা রবিবার
    ০৫ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
তৃতীয় টার্মিনাল

দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক যোগাযোগের গেটওয়ে

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৩, ০২:০৬ এএম

দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক যোগাযোগের গেটওয়ে

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে, যা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে একটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির বড় উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছে। এক্ষেত্রে বড় অবদান রেখেছে উন্নত অবকাঠামো এবং ক্রমর্ধমান যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেই অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আরও গতিশীল এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধন একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলকই বটে।

নবনির্মিত এই তৃতীয় টার্মিনালে যাত্রীসেবা উন্নত করার মাধ্যমে রাজস্ব বাড়িয়ে তিনগুণে উন্নীত করতে চায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের আশা, এটি দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অধুনিকায়নের মাধ্যমে বিপুল বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে। ফলে সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান এবং চাঙ্গা হবে জাতীয় অর্থনীতি।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দেশের বর্ধিত সক্ষমতার একটি অসামান্য প্রমাণ বলা যায়। কেননা, বিগত দেড় দশকে সরকার এই বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালটি তিলে তিলে নিরন্তর প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, স্বয়ংক্রিয় পরিষেবা এবং আকর্ষণীয় ডিজাইন সমৃদ্ধ এ তৃতীয় টার্মিনালে এরইমধ্যে বিশ্বের বড় বড় আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে।

সুতরাং যাতাযাত সহজ হওয়ায় বিমানবন্দরে যাত্রীসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলেই আশা করা যায়। যা পরবর্তীতে সিভিল এভিয়েশেনের রাজস্ব বহুগুণে বাড়ানোয় ভূমিকা রাখবে।

এক্ষেত্রে নতুন অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা এবং দুর্গম দেশগুলোয় যাত্রী পরিবহন বাড়ার ওপর জোর দিয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন,

একটি সুপ্রতিষ্ঠিত এবং সুরক্ষিত যোগাযোগ ব্যবস্থা বিদেশিদের মধ্যে আস্থা জাগিয়ে তুলবে। ফলে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক বিনিয়োগের সম্ভাবনা বাড়বে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়নের তাৎপর্য তুলে ধরে এই বিমানবন্দরকে দেশের প্রতিছবি বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ মো. আবু ইউসুফ। এটি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পখাতের বিকাশে অবদান রাখবে বলে আশা করেন এই অর্থনীতিবিদ।

যাত্রী ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি
নবনির্মিত তৃতীয় টার্মিনালের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে এটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রী ধারণক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিবে।

বিমানবন্দরে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকায় এখানে যাত্রী যাতায়াত আরও সহজ হয়েছে। বিমান কর্তৃপক্ষও বিপুল সংখ্যক যাত্রীর একই সময়ে নির্বিঘ্নে সেবা দিতে পারবেন। তাছাড়া আধুনিকায়নের কারণে বাড়বে পর্যটক, ব্যবসায়ী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের যাতায়াতও।  

বিমানবন্দরে ধারণক্ষমতা বাড়ায় দেশের পর্যটন খাত ত্বরাণ্বিত হওয়ার পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যও বাড়বে বলে আশা করছেন বেবিচকের কর্মকর্তারা।

উন্নত ভ্রমণ অভিজ্ঞতা
তৃতীয় টার্মিনাল কেবল বিমানবন্দরের যাত্রী সক্ষমতাই বাড়াবে না, একইসঙ্গে এটি উন্নত করবে যাত্রী পরিষেবা।

আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, দক্ষ চেক-ইন কাউন্টার এবং নিরাপত্তা প্রক্রিয়া, আরামদায়ক ওয়েটিং এরিয়া ও বিস্তৃত ডাইনিং এবং কেনাকাটার সুযোগ- এর সবই থাকবে নতুন টার্মিনালে।

বেবিচকের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে এবং পর্যটন ও ব্যবসায়িক গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে এই সব উন্নত সুযোগ-সুবিধা অত্যন্ত জরুরি।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশে অসংখ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চাঙ্গা করবে।

অবশ্য তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজ এরইমধ্যে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এছাড়া এই উন্নত কার্যক্রম অব্যাহতভাবে চালিয়ে যেতে, বর্ধিত সংখ্যক যাত্রীর জন্য উন্নত পরিষেবা নিশ্চিতে এবং বিভিন্ন পরিষেবা পরিচালনায় বিপুল জনবলের প্রয়োজন হবে।

তাছাড়া উন্নত যোগযোগ ব্যবস্থার কারণে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যও গতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যা বিমানের সঙ্গে সরাসরি জড়িত খাতের বাইরেও অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরি করবে।

কার্গো হ্যান্ডলিং এবং বাণিজ্য
একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতি দক্ষ বাণিজ্য রুট এবং লজিস্টিকসের ওপর নির্ভরশীল। তৃতীয় টার্মিনাল শুধুমাত্র যাত্রীদের উন্নত সেবা প্রদানকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়নি, বরং এটি বিমানের কার্গো হ্যান্ডেলিং সক্ষমতাও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াবে।

এক্ষেত্রে উন্নত রফতানি সুবিধার জন্য দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদানকারী এবং রফতানি আয়ের সিংহভাগজুড়ে থাকা তৈরি পোশাক শিল্প উপকৃত হবে। তাছাড়া কৃষি ও পণ্য উৎপাদন খাতের মতো অন্যান্য খাতের পণ্য রফতানিও সহজ এবং সাশ্রয়ে হবে। একই সঙ্গে দেশের ব্যবসায়ীরা বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবেন।

উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা
ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল সারাবিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধার উপস্থিতি এবং বিভিন্ন বিদেশি এয়ারলাইন্সের এখানে কার্যক্রম পরিচালনায় আগ্রহ থাকা এটিকে যাত্রী ও বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন নতুন বাজার সৃষ্টি, ব্যবসার সুযোগ বাড়ানো এবং বিদেশি অংশীদারিত্বের দ্বার উন্মুক্ত করেছে। যা সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নকে বেগবান করবে।

পর্যটন খাতের বিকাশ
বিশ্বের অনেক দেশের উন্নয়নের একটি বড় খাত হচ্ছে পর্যটন। বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। নবনির্মিত এই টার্মিনালে থাকা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং উন্নত পরিষেবা বাংলাদেশ ভ্রমণে বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের আগ্রহ বাড়াবে বলেই আশা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞ এবং কর্মকর্তারা বলেছেন, ঢাকা বিমানবন্দরের উন্নত অবকাঠামো এক্ষেত্রে একটি গেটওয়ে হিসেবে কাজ করবে। যা বাংলাদেশের আকর্ষণীয় এবং সমৃদ্ধ বিভিন্ন দিকের প্রতি দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করবে।

বিশ্লেষকদের মতে, তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এটি কেবলমাত্র যাত্রীদের যাত্রা সহজ এবং আরামদায়কই করবে না, এটি সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনেতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়ানোর সম্ভাবনার যোগানদাতা হিসেবে কাজ করবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি যে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে, বিশ্বমঞ্চে তারই একটি বড় প্রতীক হচ্ছে নবনির্মিত এই টার্মিনাল। এর উন্নত অবকাঠামো এবং আধুনিকায়ন বাংলাদেশের শক্ত অবস্থানকে জোরালোভাবে জানান দিচ্ছে।

 

সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

 

জেকেএস/

অর্থ ও বাণিজ্য সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ