• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু ফান্ডের টাকা নয়-ছয়, খাল খনন নামমাত্র

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২২, ০৬:২২ পিএম

জলবায়ু ফান্ডের টাকা নয়-ছয়, খাল খনন নামমাত্র

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

 

জলবায়ু ফান্ডের টাকা নয়-ছয়, খাল খনন নামমাত্র

জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১ এর অধীনে সাতক্ষীরা শহরের বুক চিরে প্রবাহিত প্রাণসায়ের খাল নামমাত্র খনন করে প্রকল্পের বেশির ভাগ টাকাই লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর বেইজলাইন প্রতিবেদন ২০১৫ অনুযায়ী জানা গেছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১ এর অধীনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার-১ এর পুনর্বাসন শীর্ষক প্রকল্পটি জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১১ কোটি ৪ হাজার ৬৪৫ টাকায় ১০ কিলোমিটার প্রাণ শায়েরের খাল খনন করা শুরু হয়ে ২০১৫ সালে শেষ হয়। প্রকল্পটির অনিয়ম নিয়ে টিআইবি জানায়, সাতক্ষীরা পাউবোর অধিকাংশ ঠিকাদার ইট ভাটা ব্যবসার সাথে জড়িত। 

এর ফলে খনন কাজের মাটি খালের পাড়ে না দিয়ে অধিকাংশই নিজের ইট ভাটায় বিনা খরচে বা অন্য ইট ভাটায় বিক্রি করার মাধ্যমে সরকারি টাকায় নিজের ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছে। শহরের ইটাগাছাতে প্রকল্পের কাজে ফাঁকি দেয়ার জন্য খনন যন্ত্র দিয়ে খনন করা হয়েছে এবং খনন যন্ত্র দিয়ে শুধু খালের পাশে আগাছা কেটেছে, মাটি কাটেনি, উত্তর কুলিয়াতে খাল থেকে খুব সামান্য পরিমাণ মাটি কাটা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১ এর অধীনে ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরে ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (১ম পর্যায়) আওতায় আবারও প্রাণসায়ের ১৪ কিলোমিটার খাল খনন করা হয় ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক মো. ফিরোজ উদ্দিন বলেন, সাতক্ষীরাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল প্রাণসায়েরের প্রাণ ফিরে পাবে। কিন্তু দাবি আছে, দাবি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাজেটে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রকল্প যখন হাতে নেয়া হয় তখন সাধারণত স্থানীয় জণগণ যারা এই প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করবে তাদের একটি দাবি থাকে দীর্ঘদিনের, সেই দাবিটা প্রাণ শায়েরের প্রাণ ফিরিয়ে আনার জন্যে ছিল। কিন্তু যখন দাবিটা বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করলো যেমন, প্রকল্প ও প্রকল্পের বরাদ্দ সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল না। অর্থাৎ কোনো একটি কাজকে উন্নয়নের ধারায় নিয়ে যেতে চাইলে সেখানে অবশ্যই স্থানীয় মানুষের সম্পৃক্ততা থাকতে হবে কিন্তু আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে সম্পৃক্ততা নাই। 

কাজটি যখন করা হলো তখন সেই কাজ কিভাবে করলে এর স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি পাবে বা টেকসই হবে, সেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল কিনা আমার সন্দেহ আছে। তিনি আরও বলেন, ২০১৫ সালে যখন কাজটি শেষ হয়েছে তখন দেখেছি কিছু দিন পরে আবার আগের মতো যাচ্ছেতাই হয়ে গেছে, ২০২০ সালেও যখন কাজটি শেষ হলো খুব কম সময়ে আমরা দেখেছি সেই একই রকম, কোনো সুফল আমরা পাচ্ছি না। অতএব এখানে বুঝতে হবে যেভাবে কাজটি করার কথা ছিল সেভাবে করা হয়নি। 

এখানে যারা কাজ করেছে যারা সম্পৃক্ততা রয়েছে তাদের স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার ঘাটতি রয়েছে। কোনো একটি প্রকল্প উন্নয়ন কাজকে টেকসই করতে হলে, জনগণের সুফল সম্পূর্ণভাবে দিতে হলে ওই কাজের সঙ্গে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ও যারা কাজটি করছে তাদের দায়বদ্ধতা, তাদের স্বচ্ছতা এগুলো না থাকলে এই কাজগুলোর সুফল আসবে না। এই কাজটিতে স্বচ্ছতার অভাব ছিল, জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না। জলবায়ু অর্থায়নে চাই স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও অংশগ্রহণ।

সাতক্ষীরা জলবায়ু পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী বলেন, ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ খাল খননের নামে অর্থ অপচয় হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়েছে। প্রাণ শায়েরের খাল খননের ফলে নগরবাসী কোনো ধরনের সুফল পেয়েছে বলে আমার মনে হয় না, যার কারণ হচ্ছে- খালটি খননের পরে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি, তার সঙ্গে আরও একটি হচ্ছে পানির একটা প্রবাহ সৃষ্টি হওয়ার কথা সেটাও হয়নি। 

নকশা অনুযায়ী খাল কাটা হয়নি। যেনতেন উপায়ে কাদা তুলে পাড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নামমাত্র খাল খনন করা হয়েছে, এখন বর্তমানে খালে যে পানি রয়েছে সেটা পঁচা। আমার মনে হয়নি কাজটা সঠিকভাবে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, আমরা যেটা বুঝি জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ডের টাকার কাজটি স্থায়িত্ব হবে, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। খালটি যেভাবে খননের কথা ছিল সেভাবে হয়নি। জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের প্রজেক্টের টাকা নয়-ছয় হয়েছে, খাল খননে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে।

জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড আর ঠিকাদারদের মধ্যে চুরিচামারি হয়েছে। জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের টাকা নয়-ছয় করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আজ খালটি বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি কতৃপক্ষ। 

শুধু এই দু’বার না এর আগেও কয়েকবার খাল খননের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। আসলে কতৃপক্ষ আর প্রশাসনের এটা দেখভাল করার কথা ছিল, কিন্তু এটা কেউই দেখভাল করেনি। এখন কচুরিপানায় খালটা আবার ভরে গেছে। তাহলে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের স্থায়ীত্ব কোথায়?  তবে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ। 

 

এএল/

আর্কাইভ