• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

অন্ধ হয়েও হাফেজ ইকবাল, চা বিক্রি করে চালান সংসার

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৩, ০৯:৪৫ পিএম

অন্ধ হয়েও হাফেজ ইকবাল, চা বিক্রি করে চালান সংসার

কুমিল্লা প্রতিনিধি

দৃষ্টিশক্তিহীন অন্ধ ইকবাল হোসেন। তার বয়স যখন সাড়ে চার, তখন টাইফয়েড জ্বরের প্রভাবেই দুচোখের দৃষ্টি হারান তিনি। তবে এছাড়াও তার আসল পরিচয় হলো তিনি কোরআনের হাফেজ। ইকবাল সহপাঠী আর শিক্ষকের কাছে শুনে শুনে ৩০ পারা কোরআন মুখস্ত করেন মাত্র ১৩ বছর বয়সে। 

হাফেজ ইকবাল হোসেনে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের নাগাইশ গ্রামের বাসিন্দা। অন্ধ হলেও থেমে থাকেননি তিনি। ছোটবেলা থেকে পরিবারে অসচ্ছলতা দূর করতে অন্ধত্বকে জয় করে হাল ধরেছেন সংসারের। স্বনির্ভর হতে বাড়ির পাশে করেছেন একটি চায়ের দোকান। এছাড়া যুক্ত রয়েছেন সমাজিক কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনার কাজে। শ্রোতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন বিবিসি বাংলা ও বাংলাদেশ বেতার থেকে। স্বপ্ন দেখেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল জনপদকে এগিয়ে নেওয়ার।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিজ এলাকায় বেশ পরিচিতি ইকবাল। এ গ্রামের শিক্ষা বিস্তারে তার বেশ অবদান রয়েছে। আশেপাশের এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় ‍‍`মুরাদ বেতার সংঘ‍‍` নামের একটি সংগঠন করেছেন তিনি। সংগঠনের পক্ষ থেকে অসচ্ছল ও দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করছেন তিনি। এছাড়া প্রতি বছর এই গ্রামে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়ে থাকেন তার গড়া সংগঠনটি।

হাফেজ ইকবাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জ্বরে দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর সংগ্রাম করার ইচ্ছে নিয়ে মাদরাসায় ভর্তি হই। দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও মানুষ ইচ্ছে করলে সবকিছু পারে। আমি আমার এলাকার মানুষদের ধন্যবাদ জানাই যারা আমার চলার পথে সাহস দিয়ে সবসময় পাশে থেকেছেন।

আবদুল হক নামের নাগাইশ গ্রামের এক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাড়ে ৪ বছর বয়সেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চোখের দৃষ্টি হারায় ইকবাল। নাইঘর গ্রামে হাফেজিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। বন্ধুদের কাছে শুনে শুনে ৩০ পারা কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হন। ছোটবেলা থেকে ছেলেটা সংগ্রাম করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।

নাগাইশ গ্রামের বাসিন্দা নূরুল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইকবাল তার আগ্রহ আর মেধা শক্তি দিয়ে আল্লাহর রহমতে হাফেজে কুরআন হয়েছে। বাড়ির সামনে সে একটা চায়ের দোকান পরিচালনা করে। সে যা পায় তা দিয়ে সংসার চালায়। নিজে রেডিও শোনে, অন্যদের রেডিও শোনার জন্য বলে।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাফেজ ইকবাল সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। তবে আপনার (সংবাদকর্মীর) কাছ থেকে যা শুনছি নিঃসন্দেহে তা প্রশংসার দাবিদার। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি, হাফেজ ইকবালের জন্য যা যা করার সব করা হবে।

আর্কাইভ