• ঢাকা মঙ্গলবার
    ২১ মে, ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বন্যার আশঙ্কা...

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২১, ০৩:৫৭ পিএম

বন্যার আশঙ্কা...

দেশজুড়ে ডেস্ক

অব্যাহত রয়েছে উজানের পাহাড়ি ঢল বৃষ্টিপাত। ফলে দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নিয়ে রোববার (২০ জুন) বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র একটি তথ্যও দিয়েছিল। যেখানে বলা হয়, নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। তাই ডালিয়া পয়েন্ট সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু, মহেশখালী কুতুবদিয়া সদর উপজেলায় আকস্মিক বন্যা হতে পারে। প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে বিস্তারিত।

নীলফামারী : সর্বশেষ সোমবারের (২১ জুন) পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিস্তা নদীর পানি অনেক বেড়েছে। ফলে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। দেখা দিয়েছে বন্যার শঙ্কা। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তিস্তা চরের মানুষেরা।

নদীর পানি অনেক বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে তিস্তা চরের কয়েকশএকর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। খুলে দেয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ সূত্র জানায়, রোববার সকালে ডিমলার খালিশাচাপানী ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৫২ দশমিক ৬০ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু বিকেল ৩টায় উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধি পায় দশমিক ২০ মিটার। এতে করে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৫২.৩০ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যার ফলে সন্ধ্যা ৬টার পর সেই পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই অবস্থা।

ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল লতিফ জানান, উজানের পানি আষাঢ়ের বর্ষণের কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, ছাড়া জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি, গোলমুন্ডা, শৌলমারী কৈমারীর এলাকার নদীর চরসহ লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে।

পাশাপাশি লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, সানিয়াজান, সিঙ্গীমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া ডাউয়াবাড়ী এলাকায় একই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

তিস্তার ঝাড়শিঙ্গেশ্বর চরের কয়েকজন কৃষক জানান, পানিতে ধানের বীজতলা তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়েছে। এখন বর্ষা মৌসুমে ধান রোপণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় সেখানকার কৃষকেরা।

বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘উজানের পানি বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

কক্সবাজার : তিন দিন ধরে বৃষ্টিপাত উজানের পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় কক্সবাজারের মাতামুহুরী, বাঁকখালীসহ সেখানকার নদীগুলোর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ফলে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, উখিয়া, রামু, মহেশখালী, কুতুবদিয়া সদর উপজেলায় আকস্মিক বন্যা হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

তলিয়ে যেতে পারে নদীতীরবর্তী এলাকায় অসংখ্য মানুষের ঘরবাড়িসহ গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়ক। সৃষ্টি হতে পারে মারাত্মক জনদুর্ভোগ।

কক্সবাজার সদরের জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইমরুল রাশেদ সিটি নিউজ ঢাকাকে জানান, বর্ষা এলে আমার ইউনিয়নের বাসিন্দাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। বেড়িবাঁধ এখনও অরক্ষিত হওয়ায় সমস্যা থেকে সহসাই মুক্তি মিলছে না। প্রতি বছর বর্ষার আগে বেড়িবাঁধ মেরামত করা হলেও অতিবৃষ্টির ফলে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে চলে আসে। ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্টদের বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন, শিগগিরই এর সমাধান করা হবে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, জেলার নদীগুলোতে পানি কমার প্রবণতা থাকলেও রোববার থেকে তা আবারও বাড়তে শুরু করে। অন্তত আরও তিন দিন বাঁকখালী নদীতে পানি বাড়বে।

তিনি জানান, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে জেলার নিম্নাঞ্চলে ইতিপূর্বে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। যেসব এলাকায় বন্যার প্রবণতা বেশি, সেসব এলাকায় আগে থেকে কাজ চলছে।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসন ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘বন্যার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে টেকনাফ থেকে শুরু করে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোতে মাইকিং করছে প্রশাসন। বন্যার সময় জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা-উপজেলার স্কুল-কলেজ মাদরাসার ভবনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখতে বলা হয়েছে। যেন বন্যা দেখা দেয়া মাত্রই বন্যাকবলিত মানুষজনকে আশ্রয় দেয়া যায়।

টিআর/এম. জামান

আর্কাইভ