• ঢাকা রবিবার
    ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

রোগীর সাহায্যে যাওয়াই শেষ যাত্রা হলো সাংবাদিক মাসুদ রানার

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩, ০৯:২৮ পিএম

রোগীর সাহায্যে যাওয়াই শেষ যাত্রা হলো সাংবাদিক মাসুদ রানার

দেশজুড়ে ডেস্ক

দুটি রেস্টুরেন্টের দেখভাল দিয়ে শুরু হয় মালা রাখাইনের প্রতিদিনের সকাল। তবে আজ তার সকাল শুরু হয়েছে অন্যভাবে। গাড়ি নিয়ে তাকে যেতে হচ্ছে শরীয়তপুরের জাজিরায়। যেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েক ঘণ্টা আগেই নিহত হয়েছেন তার স্বামী মাসুদ রানা।  

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে শরীয়তপুরের জাজিরায় ট্রাকের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষে নিহত ছয়জনের মধ্যে একজন ছিলেন দৈনিক নবচেতনা পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো প্রধান মাসুদ রানা। তার মরদেহ আনতে রওনা দিয়েছেন তার শোকাহত স্ত্রী মালা রাখাইন।

জানা যায়, মাসুদ রানা বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বাসিন্দা। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট। তিন বছর আগে মালা রাখাইন ও মাসুদ রানা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামীর অনুপ্রেরণায় ব্যবসা সামলাতেন মালা। সাংবাদিকতা আর ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে থাকতেন মাসুদ। দুর্ঘটনায় নিহত ৫ জনের মধ্যে নূরজাহান বেগমের উন্নত চিকিৎসার জন্য সেও যাচ্ছিলেন ওই অ্যাম্বুলেন্সে।

নূরজাহান বেগমের স্বজন ইয়াসিন মল্লিক বলেন, নূরজাহান বেগম আমার ভাবি। আমার ভাই লতিফ মল্লিক আমেরিকার প্রবাসী। এই ঘরে তার একটি মেয়ে লুৎফুন্নাহার লিমা। সেও দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এছাড়া মারা যাওয়া ফজলে রাব্বি হলো আমার মামাতো ভাইয়ের ছেলে। সাংবাদিক মাসুদ রানা ছিলেন লুৎফুন্নাহার লিমার শিক্ষক ও পারিবারিক বন্ধু।

তিনি বলেন, আমরা এখনো মরদেহ বুঝে পাইনি। মরদেহ বুঝে পেলে গ্রামের বাড়ি বাউফলের কারখানা গ্রামে নিয়ে যাব। আর ফজলে রাব্বির মরদেহ দশমিনায় নিয়ে যাব।

লতিফ ম্যানশনে বসবাসরত মাদরাসার শিক্ষক আব্দুর রহিম বলেন, নূরজাহান বেগম বরিশালের কলেজ এভিনিউ লতিফ ম্যানশনে নিজের বাসায় দুইমাস ধরে অসুস্থ ছিলেন। রোববার রাত ১১টার দিকে নূরজাহান বেগম বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বরিশালের কেএমসি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করলে সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে লতিফ ম্যানশনের সামনে থেকে যাত্রা করেন তারা পাঁচজন।

সাংবাদিক মুশফিকুর রহমান বলেন, মাসুদ রানা অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। করোনার সময়ে তিনি অসহায় মানুষের জন্য সারাক্ষণ কাজ করেছেন। আমরা এক সঙ্গে কাজ করতাম। তিনি অসহায়, দরিদ্রদের সর্বাত্মক সহায়তা করেছেন। এভাবে তার চলে যাওয়া মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

আরেক সাংবাদিক নূরুল আমিন রাসেল বলেন, মাসুদ রানা সবসময় অপরের উপকার করতে পছন্দ করতেন। তার শেষ যাত্রাও হলো অপরের উপকার করতে গিয়ে। এমন পরোপকারী মানুষ আমরা আর পাব না।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ভোরে জাজিরায় থেমে থাকা ট্রাকের পিছনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সজোরে ধাক্কা দেয় রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি। এতে অ্যাম্বুলেন্স চালকসহ মোট ছয়জন নিহত হয়েছেন। 

আর্কাইভ