• ঢাকা সোমবার
    ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

শরীয়তপুর ১০০ শয্যার সদর হাসপাতাল এখন মৃত্যুফাঁদ!

প্রকাশিত: মে ৫, ২০২৩, ০৬:৪৩ পিএম

শরীয়তপুর ১০০ শয্যার সদর হাসপাতাল এখন মৃত্যুফাঁদ!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

২০১৭ সালে ভবটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পরও শরীয়তপুর সদর ১০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই ভবনটি নিচতলার ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। এতে চিকিৎসক, নার্সসহ রোগী স্বজনরা শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন।

সরেজমিনে জমিনে দেখা যায়, হাসপাতাল ভবনের অন্তত দশটি স্থানে ভিম ও কলামের নিচে লোহার খুঁটি দিয়ে রাখা হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন রোগী, স্বজন ও হাসপাতাল স্টাফরা। ভবনের অবস্থা দেখে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সবাই।

জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে প্রথম তলা ভবনে ৫০ শয্যা শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল নির্মাণের পরে ২০০৩ সালে তৃতীয় তলার ভবন নির্মাণের পরে ১০০ শয্যা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে হঠাৎ করেই হাসপাতালের নিচতলার ১৭টি স্থানের ছাদের পলেস্তারা একসঙ্গে খসে পড়ে। ফলে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। সে সময়ে গণপূর্ত বিভাগ ও জেলা প্রশাসন হাসপাতালটি পরিদর্শন করার পরে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেন। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতালে চলছে স্বাস্থ্যসেবা।

এদিকেই হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। আগামী ২ মাসের মধ্যে নতুন ভবন বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৬৫ ভাগ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের পূর্বে কোনোভাবেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বুঝিয়ে দিতে পারবে না এ নতুন ভবন। এ অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কাজ করার বিকল্প নেই বলছেন হাসপাতাল স্টাফ। এতে আতঙ্কিত রোগী ও রোগীর স্বজনরা।

হাসপাতালে প্রধান হিসাবরক্ষক মো. বজলুর রশিদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই মাঝেমধ্যে আমাদের ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে। পরে গণপূর্ত বিভাগ সুরক্ষা হিসেবে ভিম ও কলামের নিচে লোহার খুঁটি লাগিয়ে দেন। আমাদের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আমরা চরম আতঙ্ক নিয়েই অফিস করছি।

চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক সরদার সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, আমাদের এখন বয়স হয়েছে। মাঝেমধ্যেই আমরা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসি। সম্প্রতি সময়ে দেখছি হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কক্ষে ও হাসপাতালের হাঁটাচলার স্থানে লোহার খুঁটি লাগানো হয়েছে, যেগুলো দেখলে আরও বেশি ভয় লাগছে।
কখন যেন ভবন ভেঙে পড়বে মাথার ওপরে। হাসপাতালটিকে দ্রুত সংস্কার করা অথবা অন্যত্র সরিয়ে নেয়া খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

সেবা নিতে আসা ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘ওষুধ নেয়ার জন্য আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের মাথার ওপরেই লোহার খুঁটি দিয়েছে। যেখানে ভবনটি অসুস্থ, তার চিকিৎসাই আগে করা প্রয়োজন। তা না হলে আমাদের চিকিৎসা কী করে হবে।’

এ বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার সুমন কুমার পোদ্দার বলেন। আমাদের এ ভবনে কাজ করতে ভয় হয়। দীর্ঘদিন ধরেই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও করছে না কর্তৃপক্ষ। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো. আবদুস সোবাহান বলেন, ২০১৭ সালে হাসপাতালের বিভিন্ন স্থান ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। ২০২০ সালে তত্ত্বাবধায়কের অফিস কক্ষের ছাদের পলেস্তারা বড় অংশ ভেঙে পড়ে, এতে টেবিল কম্পিউটারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ভেঙে যায়। তিনি অফিস কক্ষে না থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান। তারপরে বিভিন্ন সময়ে সংস্কারের মধ্য দিয়েই চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। সম্প্রতি সময় অধিক ঝুঁকি মনে করে গণপূর্ত বিভাগ ভিম ও কলামের নিচে অতিরিক্ত সুরক্ষা হিসেবে লোহার খুঁটি বসিয়েছে। এতেও আমরা শঙ্কামুক্ত নই।

তিনি আরও বলেন, নতুন ভবন আমাদের ২০২৩ সালের জুন মাসে বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও আরও এক বছরেও তা সম্ভব কি না, জানি না। তবে নতুন ভবনের নিচতলা এবং দ্বিতীয় তলার কাজ শেষ করে সেখানেই স্থানান্তর করলে কিছুটা শঙ্কামুক্ত হয় হাসপাতালের স্টাফ রোগী ও রোগীদের স্বজন। আমরা চরম আতঙ্ক নিয়েই বর্তমানে হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি।

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মহিবুর রহমান পিইঞ্জ বলেন, এ অধিকসংখ্যক লোকজনের চিকিৎসাসেবার জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ও নতুন ভবন সম্পূর্ণভাবে নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত এ ভবনেই কাজ করতে হচ্ছে।
ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত সুরক্ষা হিসেবে লোহার খুঁটি ব্যবহার করেছি। যেহেতু হাসপাতালটি ঝুঁকিপূর্ণ তাই হাসপাতালের স্টাফ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক থাকবে। চিকিৎসাসেবা শেষে দ্রুত নিরাপদ স্থানে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।


তিনি আরও জানান, জুন মাসের মধ্যেই হাসপাতালের নতুন ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলার কাজ সম্পন্ন করে হাসপাতালের যতটা সম্ভব স্থানান্তর করা হবে।

শরীয়তপুর ১০০ শয্যা সদর হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে রোগী ভর্তি থাকছেন ১৩০-১৫০ জন, যা ধারণক্ষমতার চেয়ে দেড় গুণ। অতিরিক্ত ভর্তি রোগীর চাপে হাসপাতালের বারান্দা, মেঝে ও করিডোরে হয়েছে রোগীদের স্থান। এ ছাড়া আউটডোরে প্রতিদিন অন্তত ৮০০-১০০০ রোগীর যাতায়াত এই হাসপাতালে।


এডিএস/

আর্কাইভ