প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২৪, ১০:৪৩ পিএম
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহিদ ও আহতদের স্মরণে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে প্রশাসনের আয়োজিত সভায় আওয়ামী লীগের পদধারী নেতার উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ওই নেতা সভায় কিভাবে এলো, তাকে কে আমন্ত্রণ জানিয়েছে- এ নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি নিন্দা জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের স্মরণে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাঙ্গাবালীতে একটি স্মরণসভা করে উপজেলা প্রশাসন। এতে গণঅভ্যুত্থানে নিহত এক শহিদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিসহ আমন্ত্রিতরা যোগ দেন।
উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এ সভাতেই রাঙ্গাবালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, পটুয়াখালী জেলা কৃষক লীগের সদস্য ও বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফরহাদ হোসাইন উপস্থিত ছিলেন। সভার ওই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
ছবিতে দেখা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হাসানের সামনেই বসেছিলেন আওয়ামী লীগের ওই নেতা ফরহাদ হোসাইন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চেয়ার থেকে চারটি চেয়ারের পরেই উত্তর সারির পঞ্চম চেয়ারে ছিলেন আওয়ামী লীগ ওই নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় থাকা কয়েকজন ব্যক্তি জানান, শুধু ফরহাদ হোসেনই একাই নয়; ওই সভায় পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী একাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন; যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী (বাড়ি রাঙ্গাবালী) তানজিমুল আবিদ বলেন, ‘আমরা যারা ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃত্যুকে হাতে নিয়ে যুদ্ধ করলাম তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করারও প্রয়োজনবোধ করেনি। আইডিয়াল কলেজের সামনে ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে গুলি ছুড়েছিল আমার দিকে, বেঁচে গিয়েছিলাম। সেই আমরা এমন একটি আয়োজন সম্পর্কে কোনো কিছুই জানার অধিকার রাখি না? তারা কিনা আওয়ামী লীগের পোস্টেড নেতাকে নিয়ে স্মরণ সভা করে? অট্টো হাসি পায় আমার, কষ্টভরা বুক নিয়ে গগনবিদারী চিৎকার দিতে ইচ্ছা করে। এর চেয়ে বরং আমরা যারা রাজপথে ছিলাম এদের ধরে ফাঁসি দিয়ে দিন। আমরা একটু মুক্তি পাই। এখানে নাকি একটি শহিদ পরিবারও উপস্থিত ছিল। ওই শহিদের পরিবার যদি জানতো এমন দোসরকে নিয়ে আয়োজন হয়েছে, তাহলে ওরা গলায় দড়ি দিয়ে মরে যেত, তাও এমন অনুষ্ঠানে আসতো না। ঘৃণাভরে নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
বিষয়টি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থী (বাড়ি রাঙ্গাবালী) ইমরোজ মাহমুদ রুদ্র ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন- ‘দেড় হাজার শহিদের সঙ্গে বেইমানি করলেন? আজকে রাঙ্গাবালী উপজেলায় জুলাই বিপ্লবের শহিদ এবং আহতদের স্মরণে একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল, গুড ইনেশিয়েটিভ! কিন্তু কথা হচ্ছে, যেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদের মেরে শহিদ করল তাদের পাশে নিয়ে শহিদদের স্মরণে সভা করলেন? এটা কি শহিদের সাথে তামাশা নয়? আপনাদের স্মরণ সভায় ছাত্র আন্দোলনের সময় মাঠে সক্রিয় ছিল এমন প্রতিনিধিরা কয়জন ছিল? আওয়ামী লীগের পোস্টেড নেতাকে পাশে রেখে শহীদ-স্মরণ সভা! বাহ্! ঘৃণাভরে নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান বলেন, উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহিদ-আহতদের স্মরণে আয়োজিত স্মরণ সভায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকে দাওয়াত প্রদান করা হয়নি। যে ব্যক্তির কথা বলা হচ্ছে উনার রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল ছিলাম না এবং উনাকে আমাদের পক্ষ থেকে দাওয়াত করা হয়নি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত কেউ ওনার সম্পর্কে আমাদের অবহিত করেননি। উনার পরিচয় সম্পর্কে জানতে পারলে আমরা এ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারতাম।