• ঢাকা সোমবার
    ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরিতে প্রবেশের বয়স নিয়ে যা বললেন বিশেষজ্ঞরা

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৩, ০৫:৫৬ পিএম

চাকরিতে প্রবেশের বয়স নিয়ে যা বললেন বিশেষজ্ঞরা

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়েও বেকারত্বের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। বাস্তবমুখী পরিকল্পনা ছাড়া শুধু বয়সসীমা বাড়ালে অভিজ্ঞ প্রার্থীদের সঙ্গে সদ্য পাস করা চাকরিপ্রত্যাশীদের অসম প্রতিযোগিতার তৈরি হবে। আর বিসিএসসহ সরকারি চাকরি পরীক্ষায় অপেক্ষাকৃত কম বয়সিরা অগ্রাধিকার পান বলে দেরিতে চাকরিতে প্রবেশ করলে কর্মক্ষেত্রে অবদান রাখার সময়সীমাও সংকুচিত হয়ে আসে মনে করেন প্রশাসন ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যুক্তরা।

ব্রিটিশ শাসনামলে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ছিল ২৩ বছর। আর পাকিস্তান শাসনামলে তা বেড়ে ২৫ বছর করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে সেশন জটসহ নানা সমস্যার কারণে শিক্ষাজীবন শেষ করতে ২৫-এর বেশি সময় চলে যাওয়ায় চাকরিতে বয়স প্রবেশের বয়সসীমা পর্যায়ক্রমে ৩০ বছর করা হয়। প্রায় এক যুগ ধরেই উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে নেই সেশনজট। সবোর্চ্চ ২৫ বছর বয়সেই শেষ হচ্ছে শিক্ষাজীবন। তবে কয়েক বছর ধরেই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন ত্রিশোর্ধ্ব চাকরিপ্রত্যাশীরা।

শিক্ষা প্রশাসনসহ সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সঙ্গে যুক্তরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো হলে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি প্রত্যাশায় থাকা অভিজ্ঞ প্রার্থীদের সঙ্গে সদ্য পাস করা চাকরিপ্রত্যাশীদের অসম প্রতিযোগিতার তৈরি হবে।

সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খান সম্প্রতি সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, অনেকে বহু বছর ধরে ধরে চাকরি ইন্টারভিউ দেন, তিনি আনপ্রোডাক্টিভ থাকেন, এ বয়সটা মানে ৩০ বছর বয়স, ভেরি প্রোডাক্টিভ (অত্যন্ত মূল্যবান সময়) এই বয়সটা। কিন্তু এই বয়সে তিনি কিছুই করছেন না; চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে তিনি দেশকে কী দেবেন।

এ ছাড়া অপেক্ষাকৃত দেরিতে চাকরিতে ঢুকলে কর্মক্ষেত্রে অবদান রাখার সময়সীমা সংকুচিত হয়ে আসবে বলে মনে করেন সাবেক এ আমলা। তার মতে, অন্যান্য দেশে সরকারি চাকরিতে আগ্রহ কম থাকায় প্রার্থীদের আগ্রহী করে তুলতে চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা উন্মুক্ত রাখা হয়, যা বাংলাদেশের তীব্র প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে প্রযোজ্য নয়।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, উন্নত দেশে চাকরি দেয়ার মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। সুতরাং সেখানে যে যান, সেখানে তাকে সহজেই চাকরিতে নিয়ে নেন। আর আরেকটি বিষয় হচ্ছে, তারা অল্প বয়সে চাকরিতে প্রবেশ করছেন, চাকরি বয়স ওপেন হলেও স্কুল থেকে অনেকে কাজ করা শিখে।  

বেশ কয়েকটি বিসিএসের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় সদ্য পাস করা চাকরিপ্রত্যাশীরাই এগিয়ে থাকেন। শুধু চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ালেই বেকারত্বের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না, এ জন্য ক্যারিয়ারের পছন্দ তালিকায় চাকরির ‌পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার পরিকল্পনাও থাকা উচিত বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এজেএম শফিউল আলম ভূঁইয়া।

ড. এজেএম শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ হলে রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক কি না। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে যে, যারা দাবিটা করছেন তাদের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারেন। কিন্তু সবাই কি সরকারি চাকরি পাবেন। পাবেন না। ক্যারিয়ার প্লানে-ক্যারিয়ার প্ল্যান-এ, ক্যারিয়ার প্ল্যান-বি ও ক্যারিয়ার প্ল্যান-সি থাকে তাহলে যেটা হবে, তখন আর আপনাকে আর ৩৫ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না।

এ ছাড়া প্রচলিত শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দেয়ার পরামর্শ তাদের।

 

জেকেএস/

আর্কাইভ