
প্রকাশিত: মে ৩, ২০২৫, ০৮:৫৯ পিএম
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাকে ঘিরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে। ঘটনার পর থেকে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে দুদেশ। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। এরই মধ্যে কয়েক দফায় কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে।
এ অবস্থায় ভারতকে একটি স্পষ্ট এবং জোরালো বার্তা দিয়েছে পাকিস্তানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, প্রতিবেশী দেশ যদি যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার কোনোরকম চেষ্টা করে, তবে পাকিস্তানের দিক থেকেও চূড়ান্ত জবাব দেওয়া হবে। খবর দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের।
পাকিস্তানি গণমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, পেহেলগাম হামলা ঘিরে ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে রাওয়ালপিন্ডিতে জেনারেল সদর দপ্তরে একটি বিশেষ কর্পস কমান্ডারদের বৈঠক ডেকেছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির।
এরপরই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মিডিয়া শাখার জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিরাজমান ভূ-কৌশলগত পরিবেশ নিয়ে একটি বিস্তৃত পর্যালোচনা করেছেন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা, বিশেষ করে বর্তমান পাকিস্তান-ভারত অচলাবস্থা এবং বৃহত্তর আঞ্চলিক নিরাপত্তা যাচাইয়ের উপর জোর দিয়েছেন তারা।
বৈঠকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের যেকোনো আগ্রাসন বা দুঃসাহসিকতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা বজায় রাখার জন্য নিজেদের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডাররা।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সশস্ত্র বাহিনীর অটল পেশাদারিত্ব, দৃঢ় মনোবল এবং অপারেশনাল প্রস্তুতির প্রশংসা করেছেন সেনাপ্রধান। জেনারেল আসিম মুনির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেকোনও মূল্যে মাতৃভূমি রক্ষার জন্য পাকিস্তানের জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। এছাড়া সকল ফ্রন্টে সতর্কতা এবং সক্রিয় প্রস্তুতি বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বের উপরও জোর দিয়েছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান।
বৈঠকে জম্মু ও কাশ্মীরে (IIOJK) ভারতীয় নৃশংসতার তীব্রতা বাড়তে পারে বলেও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডাররা। তাদের আশঙ্কা, পেহেলগাম হামলা ঘিরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাকে কাজে লাগাতে তৎপর হয়ে উঠেছে ভারত, যেমনটা ঘটেছিল ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর। ওই ঘটনার পরই ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের ওপর কেন্দ্রের শাসন চালু করে ভারত।
পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) বলছে, ভারতীয় সন্ত্রাসী প্রক্সিগুলোকে কার্যকরভাবে শ্বাস নেওয়ার স্থান তৈরি করে দেওয়ার লক্ষ্যে এই ধরনের বিচ্যুত কৌশল কখনই সফল হবে না।
শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির প্রতি পাকিস্তানের অবিচল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার পাশাপাশি পাকিস্তানি শীর্ষ কমান্ডারদের ফোরাম স্পষ্টভাবে বলেছে, যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার যেকোনও প্রচেষ্টার অবশ্যই জবাব দেওয়া হবে এবং পাকিস্তানের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে যেকোনও মূল্যে সম্মান করা হবে।
একইসঙ্গে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ভারতীয় সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থার সরাসরি জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আছে দাবি করে গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেছে ফোরামটি।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।
এ ছাড়া সিন্ধু নদের পানি ইস্যুতে কড়া বার্তা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। স্পষ্ট ভাষায় তিনি ঘোষণা দেন, যেকোনো মূল্যে নিজের পানির অধিকার রক্ষা করবে পাকিস্তান। সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের জেরে ভারতকে হুমকি দেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা ও দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টোও। তিনি বলেন, সিন্ধু দিয়ে হয় পানি বইবে, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে।
পাকিস্তান প্রয়োজনে পারমাণবিক হামলার জন্যও প্রস্তুত আছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ ও রেলমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আব্বাসি।
অন্যদিকে পেহেলগাম হামলায় জড়িত ও মদতদাতাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি সন্ত্রাসী ও তাদের মদতদাতাদের খুঁজে বের করব এবং এমন শাস্তি দেব, যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না। সময় এসেছে সন্ত্রাসের আশ্রয়স্থল সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার। ১৪০ কোটি মানুষের দৃঢ় সংকল্প সন্ত্রাসের মদতদাতাদের চূর্ণ করে দেবে।