• ঢাকা সোমবার
    ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

হারিয়ে যাচ্ছে মিঠাপানির মাছ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৭, ২০২২, ০১:২৭ এএম

হারিয়ে যাচ্ছে মিঠাপানির মাছ

কয়েক দশকে হাওর-বাঁওড় সংকুচিত হয়েছে। আশ্রয়স্থল হারিয়েছে মিঠাপানির মাছ

ফিচার ডেস্ক

একদিন পুকুর ভরা মাছ ছিল। গোয়াল ভরা গরু আর ছিল, গোলা ভরা ধান। কালের বিবর্তনে সেই ঐতিহ্য এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। আগের মতো নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় ও জলাশয় চোখে পড়ে না। পুকুরকে গিলে খেয়েছে বসতবাড়ি। ইটপাথরের দালানকোঠা। মাছ থাকবে কোথায়? পুকুর নেই। জল নেই-সমতল ভূমি হয়ে গেছে বাংলার পারিবারিক পুকুর। 

যে কারণে দেশি প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্ত। আর যে কটি দেশি প্রজাতির মাছ আছে-সেগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানের দাপটে বিভিন্ন রকম সার মাছের বংশ ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ ছাড়াও নদী ও খালবিলে নতুন পানি আসার সময় সূক্ষ্ম জাল দিয়ে অবাধে মা মাছ ও পোনা মাছ ধরার কারণেও দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে।

বর্তমানে দেশি জাতের মাছ ‘মহাবিপন্ন’ অবস্থায় রয়েছে। যেমন- টাটকিনি, ঘারুয়া, বাগাইড়, রিঠা, পাঙাশ, চিতল, মহাশোল ও সরপুঁটি মাছ। ‘সংকটাপন্ন’ অবস্থায় রয়েছে বাচা, ছেপ চেলা, ঢেলা, বাঁশপাতা, নাপতে কই, রায়েক, ফলি, গুজি ও আইড় মাছ। ‘বিপন্ন’ অবস্থায় রয়েছে গোলসা, দাড়কিনা, পাবদা, শিং, বড় বাইম, গজার, তিতপুঁটি, মলা, টাকি, নামা চান্দা, কালিবাউস, তিলা শোল, খলিশা, মেনি, রায়েক ও মাগুর মাছ।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট করে মাছের সংখ্যা বলা হয়নি। তবে ২০৭ প্রজাতির মিঠাপানির মাছের নাম পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৫৪ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। এরই মধ্যে পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়েছে ১৪ থেকে ১৫ প্রজাতির মাছ।.

এ ছাড়াও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী ২৩ প্রজাতির মাছ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এর মধ্যে বাটা, কুচিয়া, ভাগনা, খলিশা, মেনি রাজপুঁটি, বালাচাটা, গুতুম, গনিয়া, কৈ, গজার, বৈরাল রয়েছে। হাওরাঞ্চল এবং মেঘনার অববাহিকায় এসব মাছ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল, পুকুর অস্বাভাবিকভাবে সংকুচিত হয়েছে। তাদের আশ্রয়স্থল না থাকায় এমনটি হয়েছে।

অন্যদিকে, নদী শুকিয়ে যাওয়ায় খাল-বিল থেকে দেশি মাছ নির্বিচারে নিধন করা হচ্ছে। প্রজনন হচ্ছে না দেশীয় প্রজাতির মাছের। ফলে দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। কয়েক বছর আগে বাইম, ভেদা, গজার, চেলা, মলা, খলসে, কৈ, চিংড়ি, চিতল, সিং, মাগুর, বোয়াল, ডাঁড়কি, ছলং-এ মাছগুলো নদ-নদী, খাল-বিল, বাঁওড় ও পুকুরে দেখা যেত। বর্তমানে এ মাছগুলো বিলুপ্তপ্রায়। বর্ষা মৌসুমে নিম্নবিত্তের মানুষেরা এ মাছগুলো ধরে নিজের চাহিদা মেটানোসহ বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। যে মাছ কয়েক বছর আগেও কেজিপ্রতি ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হতো তা এখন কিনতে হচ্ছে ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায়।

রূপকথার মতো মনে হবে, মাছে-ভাতে বাঙালি ছিলাম। কিন্তু সেটা খাতায় থাকবে-বাস্তবে নয়।

 

সাজেদ/

আর্কাইভ