আন্তর্জাতিক ডেস্ক
                                  
              চলমান রুশ বাহিনীর হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে সৃষ্ট মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাদের টানা কয়েক দিনের গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মারিউপোল ও ভলনোভাখায়। পানি ও বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে মারিউপোল। ঘর উষ্ণ করার গ্যাস না থাকায় চরম দুর্দশায় পড়েন বাসিন্দারা। মারিউপোলের মেয়র ভাদিম বয়চেঙ্কো গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাসিন্দাদের নিরাপদে শহর ত্যাগ করতে দিতে যুদ্ধ বন্ধ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।’
রাশিয়া হামলার দশম দিনে শনিবার (৫ মার্চ) দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের দুটি শহর মারিউপোল ও ভলনোভাখায় পাঁচ ঘণ্টার সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। অন্য শহরগুলোতে রুশ বাহিনী হামলা অব্যাহত রেখেছে।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উত্তর–পশ্চিমের শহর ইরপিন, দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ, উত্তরাঞ্চলীয় চেরনিহিভ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি শহরে হামলা হয়েছে। এসব শহর ঘিরে রেখেছেন রুশ সেনারা। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মিকোলেইভের দিকে এগোচ্ছে রুশ বাহিনী। শহরটি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে দক্ষিণের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী ওডেসা দখলের দিকে এগিয়ে যাবে তারা।
সাড়ে চার লাখ বাসিন্দার শহর মারিউপোলের পরিস্থিতি কয়েক দিন ধরে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এলেও পাশের ছোট শহর ভলনোভাখার বিষয়ে তেমন কিছু জানা যায়নি। গতকাল সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর মারিউপোল ও রুশপন্থিদের নিয়ন্ত্রণাধীন দোনেৎস্কের মধ্যবর্তী এ শহরের অবস্থা জানা যায়। ২৫ হাজার বাসিন্দার এ শহরেও কয়েক দিন তুমুল লড়াই হয়েছে। বাসিন্দারা যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলেন, শহরের প্রায় প্রতিটি ভবন হয় ধ্বংস, না হয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় এমপি দিমিত্রো লুবিনেতস বলেন, ‘লড়াই এত তীব্র ছিল যে শহরের বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।’
এ পরিস্থিতিতে শনিবার শহর দুটি থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয় রুশ বাহিনী। উভয়পক্ষের মতৈক্যের ভিত্তিতে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তবে তা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর বন্ধ হয়ে যায়। এর জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়ার পক্ষ থেকে একে অপরকে দায়ী করা হয়। শহর দুটি থেকে উদ্ধার করে বেসামরিক ব্যক্তিদের নেওয়া হচ্ছিল পশ্চিম দিকের জাপোরিঝিয়া শহরে। ওই শহরের দিকেও এগিয়ে যাচ্ছেন রুশ সেনারা। ইউক্রেন থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক চার্লস স্ট্যার্টফোর্ড বলেন, ‘এ শহরও আক্রান্ত হতে চলেছে। শহরজুড়ে ট্যাঙ্ক আটকানোর ব্যবস্থা, তল্লাশি চৌকি ও হাজারো প্রতিরোধ যোদ্ধা রয়েছেন।’ অন্যদিকে, রুশ বাহিনী এগিয়ে আসছে।
যুদ্ধে হতাহতের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। গত বুধবার ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ বলেছে, রুশ হামলায় দুই হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। পরদিন শুক্রবার ইউক্রেন সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ৯ হাজারের বেশি রুশ সেনা নিহতের দাবি করা হয়। অন্যদিকে, মস্কো তাদের ৪৯৮ সেনা নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। ইউক্রেনের ২ হাজার ৮৭০ সেনা নিহত হয়েছেন বলেও দাবি করেছেন তারা।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল বলেছে, ইউক্রেনের দুই হাজার সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮২টি জঙ্গি বিমান, ৭০৮টি সাঁজোয়া যান, ৭৪টি রকেট লঞ্চার ও ৫৬টি ড্রোন রয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়ার অন্তত ৩৯টি জঙ্গি বিমান ও ৪০টি হেলিকপ্টার ধ্বংস করার দাবি করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকোভ বলেছেন, যুদ্ধে যোগ দিতে বিভিন্ন দেশ থেকে ৬৬ হাজার ২২৪ ইউক্রেনীয় দেশে ফিরেছেন।’
জীবন বাঁচাতে ইউক্রেন থেকে এ পর্যন্ত ১৩ লাখের বেশি মানুষ পাশের দেশগুলোতে পাড়ি জমিয়েছে বলে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে। সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি গতকাল রয়টার্সকে বলেন, ‘চলতি সপ্তাহের শেষে শরণার্থীর সংখ্যা ১৫ লাখে পৌঁছে যাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট দেখা যাচ্ছে।’ সূত্র: আল জাজিরা 
এইচএ /এফএ
									
                                  
                                
                  
                    
                  
                    
                      ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন