• ঢাকা রবিবার
    ০৪ মে, ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

মার্কিন-ইউক্রেন খনিজ চুক্তি স্বাক্ষর : বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: মে ৪, ২০২৫, ০১:০৯ পিএম

মার্কিন-ইউক্রেন খনিজ চুক্তি স্বাক্ষর : বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেন ৩০ এপ্রিল বুধবার, একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে কিয়েভের জন্য একটি বিনিয়োগ তহবিলের বিনিময়ে নতুন ইউক্রেনীয় খনিজ চুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে।

এই পরিকল্পনাটি প্রাথমিকভাবে কয়েক মাস আগে প্রস্তাব করা হয়েছিল, কিন্তু ২৮ ফেব্রুয়ারি ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বাক-বিতন্ডার পর আলোচনা শীঘ্রই ভেস্তে যায়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ওয়াশিংটন সফর সংক্ষিপ্ত করা হয়েছিল এবং চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কসহ ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে।

টাইম ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।

বুধবার মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এবং ইউক্রেনের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিডেনকো এই চুক্তিতে সই করেন। চুক্তির সম্পূর্ণ লেখা এখনও প্রকাশ না করা হলেও বেসেন্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, ‘আজকের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সইয়ের ঘোষণা দিতে পেরে আমি আনন্দিত।’

বেসেন্ট আরো বলেন যে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল’ নামে পরিচিত এই চুক্তি ‘ইউক্রেনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে’ এবং ‘অর্থনৈতিক নিরাপত্তাই জাতীয় নিরাপত্তা।’

সিভ্রিডেঙ্কো চুক্তির কিছু দিকও তুলে ধরেন, এক্সে এক পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘পূর্ণ মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ ইউক্রেনের হাতেই রয়েছে। আমাদের ভূখণ্ড এবং আঞ্চলিক জলসীমার সমস্ত সম্পদ ইউক্রেনের। এটি ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রই নির্ধারণ করে যে কোথা থেকে এবং কী আহরণ করা হবে।’

বুধবার নিউজনেশনের সাথে এক কথোপকথনে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে জেলেনস্কির সাথে তার আপাতদৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাতের কথা বলেছিলেন, যার পরে তিনি প্রকাশ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট    ভøাদিমির পুতিনের সমালোচনা করেছিলেন । প্রেসিডেন্ট নিউজনেশনকে বলেছেন, ‘আমি তাকে

বলেছি যে, যদি আমরা একটি চুক্তি করতে পারি এবং আপনি তাতে সই করেন তবে এটি খুব ভালো হবে, কারণ রাশিয়া অনেক শক্তিশালী।’

ট্রাম্প পূর্বে দাবি করেছেন, ২০২২ সালে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে আমেরিকা ইউক্রেনে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। কিন্তু কিয়েল ইনস্টিটিউট যুক্তি দেখিয়েছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আমেরিকা ইউক্রেনে সাহায্যের জন্য প্রায় ১২০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।

বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক চুক্তির সঠিক বিশদ জানার জন্য অপেক্ষা করছে, তখন চুক্তি স্বাক্ষরের পর গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা যা বলেছেন তা এখানে দেওয়া হল:

জেলেনেস্কি:

যদিও জেলেনস্কি চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি, তবুও তিনি যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য রাশিয়ার ওপর চাপ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন।

রাতের বেলায় ইউক্রেনের ওডেসায় রাশিয়ার ড্রোন হামলার খবর পাওয়ার পর, বৃহস্পতিবার সকালে জেলেনস্কি বলেছেন,  ‘এজন্যই কূটনীতির জন্য জোরালো প্রচেষ্টা প্রয়োজন - নীরবতা এবং আলোচনায় বাধ্য করার জন্য রাশিয়ার ওপর অব্যাহত চাপ প্রয়োজন। নিষেধাজ্ঞা যত কার্যকর হবে, যুদ্ধ শেষ করার জন্য রাশিয়ার তত বেশি উৎসাহ থাকবে।’

আন্দ্রি সিবিহা:

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা এক্সে- এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই চুক্তি ‘ইউক্রেন-মার্কিন কৌশলগত অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত, যার লক্ষ্য ইউক্রেনের অর্থনীতি এবং নিরাপত্তা জোরদার করা।’

একই পোস্টে, সাইবিহা বলেছেন, তিনি ইইউ’র পররাষ্ট্র বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি কাজা ক্যালাসের সাথে কথা বলেছেন এবং তাকে চুক্তিটি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তিনি আরো যোগ করেছেন, তিনি ‘ইইউর সংহতি এবং অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ।’

মার্কো রুবিও:

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও চুক্তি স্বাক্ষরকে স্বাগত জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। রুবিও আরো বলেছেন, এই চুক্তি ‘আমাদের ভাগ করা সমৃদ্ধির একটি মাইলফলক এবং এই যুদ্ধের অবসানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

গ্রেগরি মিকস:

এক বিবৃতিতে,  ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিকস এই চুক্তিকে ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেন চুক্তির ওপর জোর খাটানো’ বলে অভিহিত করেছেন এবং আরো আশা প্রকাশ করেছেন, ‘প্রশাসন এখন শান্তির জন্য আসল বাধার দিকে যেতে পারে।’

মিকস ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বারবার দেখিয়েছেন, তিনি একটি টেকসই শান্তির লক্ষ্যে কাজ করার জন্য আলোচনায় আগ্রহী; এখন ট্রাম্পের পুতিনের ওপর চাপ প্রয়োগের সময় যেখানে তার প্রাপ্য।’

ডেভিড ল্যামি:

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি ‘আমেরিকা ও ইউক্রেনের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব স্বাক্ষরের পদক্ষেপকে স্বাগত জানান।’

ল্যামি তার দেশ এবং ইউক্রেনের সম্পর্কের দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন,  ‘ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাজ্যের সমর্থন অবিচল রয়েছে। আমাদের ১০০ বছরের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে, আমরা আমাদের উভয় দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক আরো গভীর করছি।’

দিমিত্রি মেদভেদেভ:

টেলিগ্রামে একটি পোস্টে, রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং প্রাক্তন রাশিয়ান রাষ্ট্রপতি দিমিত্রি মেদভেদেভ এই চুক্তিকে কিয়েভের জন্য একটি পরাজয় বলে অভিহিত করেছেন, বলেছেন : ‘ট্রাম্প অবশেষে কিয়েভ শাসনব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে আমেরিকান সাহায্যের জন্য খনিজ সম্পদের জন্য অর্থ প্রদান করেছেন। এখন তাদের একটি অদৃশ্য দেশের জাতীয় সম্পদ দিয়ে সামরিক সরবরাহের জন্য অর্থ প্রদান করতে হবে।’

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ