
প্রকাশিত: অক্টোবর ১, ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
মরক্কোতে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। গত শনিবার থেকে অন্তত ১১টি শহরে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী রাস্তায় নেমে এসেছে।
আন্দোলনের ডাক দিয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুব সমাজভিত্তিক সংগঠন ‘জেন-জি ২১২’।
সোমবার রাবাতসহ বিভিন্ন শহরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ডজনখানেক যুবককে আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে জনসমাবেশ ঠেকাতে পুলিশ টানা অভিযান চালাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুধু রাবাতেই ৬০ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে কাসাব্লাঙ্কা, আগাদির, ওজদা ও মেকনেসসহ অন্যান্য শহর থেকেও গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়।
আলোচনার মাধ্যমে দাবি পূরণের আশ্বাস বা সমঝোতার ঘোষণা দিয়েও জেন-জিদের শান্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার।
বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে স্লোগান দেন-‘জনগণের চাই স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জবাবদিহিতা।’ একটি সরকারি হাসপাতালে আটজন গর্ভবতী নারীর মৃত্যুর খবরে জনমনে এই ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই জেনারেশন জেড বা জেন জির সদস্য। এই প্রজন্মই মরক্কোর সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী।
তাদের দাবি, সরকারের অগ্রাধিকার ভুল এবং জনসেবার মান খারাপ। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকশ জন গ্রেফতার হয়। প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। পরে এটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এখন তারা কাঠামোগত সংস্কার দাবি করছে।
রোববার রাতে মরক্কোর বৃহত্তম শহর কাসাব্লাঙ্কায় বিক্ষোভকারীরা প্রধান মহাসড়ক অবরোধ করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছের সড়কে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক ছত্রভঙ্গ করছে।
সোমবার মরক্কো মানবাধিকার সমিতির রাবাত শাখার সভাপতি হাকিম সিকুক বলেন, সপ্তাহান্তে আটক বেশিরভাগ বিক্ষোভকারীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেককে নির্যাতন করা হয়েছে বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি।
এদিকে মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) মরক্কোর সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতৃত্ব তরুণদের দাবি শোনার জন্য সংলাপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া আইন মেনে দাবি অনুযায়ী স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক পরিষেবা উন্নত করার কাজ করতে তারা পূর্ণ প্রস্তুতি প্রকাশ করেছেন।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক শেষে জানানো হয়, অনলাইন এবং পাবলিক প্লেসে তরুণদের দাবি পর্যালোচনা করার পর সরকার নিশ্চিত করছে যে- তারা প্রয়োগযোগ্য দাবিগুলো মনোযোগ সহকারে আমলে নেবেন।
আন্দোলনের ধরন
এই আন্দোলন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বা ইউনিয়নের নেতৃত্বে হয়নি। এটি মূলত নেতৃত্বহীন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণদের জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম— টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক ও ডিসকর্ড— এর মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছে।
‘জেন জি ২১২’ (মরক্কোর কান্ট্রি কোড ২১২) এবং ‘মরোক্কা ইয়ুথ ভয়েস’ নামের কয়েকটি গ্রুপ মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে গড়ে উঠেছে। তারা শান্তিপূর্ণ ও সভ্য বিক্ষোভের আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে অনেকে আরও তীব্র দাবি তুলছে।
আন্দোলন নেপালের সাম্প্রতিক তরুণ নেতৃত্বাধীন দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছে। এতে বৈশ্বিক পর্যায়ে জেনারেশন জেড প্রজন্মের প্রভাবও ফুটে উঠছে।
এক্স-এর একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘হাজারো জেনারেশন জেড মৌলিক অধিকার— শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ন্যায়বিচার ও মর্যাদার জন্য রাস্তায় নেমেছে।’ তার মতে, দমন-পীড়ন কেবল আরও ক্ষোভ উস্কে দিচ্ছে।
মরক্কোয় তরুণ প্রজন্মের সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে জেনারেশন জেড সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী। অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও বৈষম্যের প্রভাব তাদের ওপর বেশি পড়ছে।
মরোক্কান ইনস্টিটিউট ফর পলিসি অ্যানালাইসিস এর বিশ্লেষক মোহাম্মদ মাসবাহ বলেন, আন্দোলন ‘বিকেন্দ্রীভূত, নেতা-বিহীন ও পরিবর্তনশীল।’ এতে আন্দোলন টিকে থাকার ক্ষমতা বেশি, তবে সমাধান খোঁজা কঠিন।
অনেকে একে ২০১১ সালের আরব বসন্তের সঙ্গে তুলনা করছেন। তবে কেউ কেউ মনে করেন, এটি মূলত সংস্কারের দাবি, সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয়।
জেন জি ২১২ ফেসবুকে লিখেছে, ‘অধিকার পাওয়ার একমাত্র পথ প্রতিবাদ।’ তারা নতুন সমাবেশের ডাক দিয়েছে। দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন আরও বড় আকার নিতে পারে। এতে ২০১১ সালের মতো সরকারের ওপর ছাড় দেওয়ার চাপ তৈরি হতে পারে।
তবে চলমান দমননীতি উত্তেজনা বাড়িয়ে দিতে পারে। এক বিক্ষোভকারীর ভাষায়, ‘স্বাস্থ্য ও শিক্ষা চাওয়া মানে আসলে জীবন চাওয়া।’