• ঢাকা রবিবার
    ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা বন্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২১, ১২:২৮ এএম

ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা বন্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সহিংসতা বন্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। একই সঙ্গে প্রার্থিতা বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) সব বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশের ডিআইজি, কমিশনার, ডিসি, এসপি, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি।

দুপুর ১২টা থেকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে সোয়া দুই ঘণ্টাব্যাপী ভার্চুয়াল এ বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন সিইসি, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। এ ছাড়াও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৈঠকে যুক্ত ছিলেন।

সিইসি মাঠ প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাজ করতে হয় মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেই তাদের ওঠা-বসা। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভালো প্রার্থী তুলে নিয়ে আসার জন্য মাঠ প্রশাসনকে ভূমিকা রাখতে হবে। ভালো প্রার্থী নির্বাচন করার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের বেশি।

তিনি বলেন, খুলনা অঞ্চলে নির্বাচনী সহিংসতা বেশি। তবে কয়েকদিনের তৎপরতায় তা কমে এসেছে প্রশাসনের কর্মতৎপরতায়। মাগুরায় সহিংস কর্মকাণ্ডে চারজনের প্রাণ গেল। এসব ঘটনা যতটা না রাজনৈতিক কারণে হয়, তার চেয়ে বেশি হয় স্থানীয় কোন্দলের কারণে এবং স্থানীয় প্রভাব বিস্তারের জন্য। এগুলো যতটা না দলভিত্তিক, তার চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার-ভিত্তিক।

কে এম নূরুল হুদা বলেন, ইউপি একটি প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। সেই ১৭৮৭ সাল থেকে ইউপিতে ভোট হয়ে আসছে। উত্তেজনায়, খুনখারাবি এখানে আগে থেকেই হয়। তবে এটা কাম্য নয়। অযাচিত ব্যক্তি, সন্ত্রাসী এদের চিহ্নিত করতে আপনাদের গোয়েন্দা আছে, এমনকি চকিদার-দফাদার আছে। তাই গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিলে সমস্যা হয় না। দল-মত নির্বিশেষে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মাঠ প্রশাসনে লোকবলের সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, কোভিড পরিস্থিতির কারণে নির্বাচনগুলো পুঞ্জীভূত হয়ে গেছে। একসঙ্গে আমাদের বেশি করে নির্বাচন করতে হচ্ছে। কেননা, নির্বাচন ডিউ রয়ে গেছে। পেছানোর সুযোগ নেই। তাই আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে স্থানীয় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চাপ বেশি হয়ে গেছে। সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেট সংকট কাটাতে যারা মন্ত্রণালয়ে বা অন্য দফতরে কাজ করছেন, তাদেরও দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।

নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচনের সময় ইসির ক্ষমতা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে থাকে। তাই তেমন কোনো ঘটনার সৃষ্টি হলে মাঠ প্রশাসনের সহায়তায় তিনি ব্যবস্থা নেবেন। কোনো কেন্দ্রে ভোট নেওয়ার সম্ভব না হলে ভোট বন্ধ করে দেবেন। আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ এলে আমরা এক ঘণ্টা দেরি করি না। প্রিজাইডিং কর্মকর্তাও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে পারবেন। কোনো অভিযোগ যদি রিটার্নিং কর্মকর্তারা মাধ্যমে আসে, আমরা তা ফাইলবন্দি করে রাখি না। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিই। যদি কোনো প্রার্থীর আচরণবিধি ভঙ্গের কারণে নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হয়, তাহলে তদন্ত করে সত্যতা পেলে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা আমাদের আছে। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে আমাদের কাছে অভিযোগ আসতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নির্বাহী বিভাগের সহায়তায় ভোট করে থাকে। এ ক্ষেত্রে ইসির দায়িত্ব তাদের ওপর পড়ে। তাই কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তারা দায় এড়াতে পারেন না। জান-মালের ক্ষতি ইসি চায় না। এ জন্য যে দায়ী থাকবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৈঠকে সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বক্তব্য নেওয়া হয়। এতে লোকবল সংকট, কোথাও কোথাও পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করা হয়। তাদের কাছ থেকে লোকবল বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া, আচরবিধি লঙ্ঘনকারীর প্রার্থিতা বাতিলের সুপারিশ আসে।

ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজি ফরিদপুর, মাদারীপুর, নরসিংদীতে সহিংস ঘটনা ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীর প্রার্থিতা বাতিলের সুপারিশ করেন। এই বিভাগে ৯০টি ইউপি ঝুঁকিপূর্ণ বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। এ ছাড়াও তারা বৈধ অস্ত্র এখনও জমা নেওয়ার কোনো নির্দেশনা ইসি থেকে পাননি, এবং সেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন।

বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করব। দুই-একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হলে, সকলের কাছে একটা মেসেজ যাবে। এতে আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে সুবিধা হবে।

খুলনার বিভাগীর কমিশনার বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের সংকট ভয়াবহ। অন্য জেলা থেকে এনেও কাজ চালানোর উপায় নেই। নড়াইল, মাগুরা, কুষ্টিয়ায় পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

খুলনার ডিআইজি বলেন, পুলিশের সংকট রয়েছে তার। তারপরও ইসি নির্দেশনা পালন করে যাচ্ছেন।

রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার বলেন, প্রশিক্ষণ, বদলি ইত্যাদির কারণে ম্যাজিস্টেটের সংকট রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় সবাই নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে যথাযথ ভূমিকা রাখছেন বলেন কমিশনকে অবহিত করেন। একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ইসির আস্থা রাখতে পারবেন বলেও তারা মতামত ব্যক্ত করেন।

এস/এএমকে/এম. জামান


জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ