
প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২২, ১২:২৭ এএম
বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় দেশজুড়ে গত ১৯ জুলাই থেকে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং কার্যকর
করেছে সরকার। পাশাপাশি রাত ৮টার পর দোকানপাট, মার্কেট ও শপিং মল বন্ধ রাখার নির্দেশ কার্যকর
হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। তাই ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের
বৃহত্তর স্বার্থে লোডশেডিং বন্ধের দাবি
জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকানমালিক সমিতি।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই)
রাজধানীর মগবাজারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন সংগঠনটির সভাপতি
মো. হেলাল উদ্দিন। একইসঙ্গে দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মার্কেট ও বিপণিবিতান খোলা রাখার অনুরোধ
জানায় সংগঠনটি।
হেলাল উদ্দিন বলেন, করোনায়
ব্যবসায়ীরা বিপর্যস্ত। এরমধ্যে বর্তমানে রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করা এবং
দৈনিক ১ থেকে ২ ঘণ্টা লোডশেডিং, দেশের ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য মরার উপর
খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ব্যবসাবান্ধব বাংলাদেশ গড়ার
পথে বড় বাধা।
বাংলাদেশ দোকানমালিক সমিতি
সভাপতি বলেন, ‘রাত ৮টার পর
বেশিরভাগ বেচাকেনা হয়। কিন্তু এ সময় বন্ধ রাখার ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
কিন্তু দোকানমালিকদেরকে কর্মচারী খরচ, বিদ্যুৎবিল ও দোকান ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বহন
করতে হচ্ছে। এতে চরম অর্থসংকটে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।’
তিনি আরও জানান, ‘জ্বালানি
প্রতিমন্ত্রী কয়েক দিন আগে বলেছিলেন, “আমদানি করা জ্বালানির (ডিজেল ও এলএনজি) মাত্র
১০ শতাংশ ব্যবহার হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। প্রকৃতপক্ষে বিদ্যুতের কোনো সংকট নেই, সংকট জ্বালানিতে।
বাকি ৯০ শতাংশ ব্যবহার হয় পরিবহন ও কৃষি খাতে।” মাত্র এ ১০ শতাংশ সাশ্রয়ের জন্য সরকারকে
সমালোচনা শুনতে হচ্ছে। লোডশেডিংয়ে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বরং এতে ক্ষুদ্র
ব্যবসায়ীরা পথে বসার উপক্রম হয়েছে।’
লোডশেডিং না দিয়ে
ডিজেল-এলএনজি দাম সমন্বয় করার পরামর্শ দিয়ে হেলাল উদ্দিন জানান, জ্বালানির দাম
বাড়ালে সরকারের ভর্তুকি কমবে। মানুষ সাশ্রয়ী হবে। জ্বালানি তেলে পরিচালিত
বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখলে ১ দিনে জ্বালানি সাশ্রয় হয় ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা।
কিন্তু এক দিন দোকানপাট বন্ধ রাখলে ক্ষতি হয় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে
রাত ৯টার পরিবর্তে রাত ৮টায় দোকান বন্ধ রাখলে, এই ১ ঘণ্টায় ক্ষতি হয় ১৬০ কোটি টাকা। কিন্তু
বাস্তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। কারণ বিপণিবিতানে বেচাকেনা শুরু হয় মূলত
সন্ধ্যার পর।
লোডশেডিং থেকে সরে এসে
জ্বলানির তেলের মূল্য সমন্বয় করার দাবি জানিয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, বর্তমানে
প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এক লিটার ডিজেলের দাম ১০৬ রুপি আমাদের দেশে ৭৮
টাকা। সুতরাং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় না হলে জ্বালানি
তেল প্রতিবেশী দেশে পাচার হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে
দোকানমালিকদের পক্ষ থেকে চারটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- লোডশেডিং বন্ধ
করা, বিপণিবিতান ও
দোকানপাট দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা রাখা, অফিস টাইম সকাল
সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত করা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সময় সূচি সকাল ৯টা
থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত করা। এসব উদ্যোগ নিলে যানজট কমে আসবে, কর্মঘণ্টা বাড়বে
এবং জ্বালানি তেল সাশ্রয় হবে বকে মনে করেন তিনি।
চট্টগ্রাম দোকানমালিক
সমিতির সভাপতি সালামত আলী বলেন, চট্টগ্রামে লোডশেডিং অত্যন্ত বেশি। এক ঘণ্টার কথা বলা হলেও
ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বহু দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাবে।
চট্টগ্রামে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত
ছিলেন বাংলাদেশ দোকানমালিক সমিতির মহাসচিব জহিরুল হক ভুঁইয়া, চট্টগ্রাম
মহানগরের দোকানমালিক সমিতির সভাপতি সালামত আলীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় দোকানমালিক
সমিতির নেতা উপস্থিত ছিলেন।
জেডআই/