• ঢাকা মঙ্গলবার
    ১৫ জুলাই, ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

কিশোরগঞ্জে হাওরের বুকে দৃষ্টিনন্দন ভাসমান স্কুল

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৫, ০৮:১৯ পিএম

কিশোরগঞ্জে হাওরের বুকে দৃষ্টিনন্দন ভাসমান স্কুল

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জ জেলা হাওর অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবেই সারাদেশে সুপরিচিত। হাওর অঞ্চলের কারণে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে এই জেলাকে নিয়ে। বর্ষার আগমনের সাথে সাথেই থৈ থৈ পানিতে ভরে যায় এসব হাওর অঞ্চলগুলো।

নিকলীর উপজেলার হাওর হচ্ছে এখানকার সবচেয়ে বড়ো এবং পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে পছন্দের স্থান। অন্যদিকে জেলার বাজিতপুর উপজেলার হাওরে দেখা যায় দৃষ্টিনন্দন আরেকটি চমকপ্রদ। এখানে হাওরের উপর গড়ে তোলা হয়েছে একটি তিনতলা বিশিষ্ট ভবন। থৈ থৈ পানির মাঝেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সেই ভবনটি। দূর থেকে দেখে মনে হয় ভবনটি যেন পানিতে ভাসছে। আর এমনটি ভাবার কারণ‌ও আছে বটে চারদিকে তাকালে চোখে পড়ে শুধু পানি আর পানি। আর সেই পানির মধ্যেই নির্মাণ করা হয়েছে সেই ভবনটি। সেই ভবনে যাওয়ার নেই কোনো সুনির্দিষ্ট রাস্তা। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌকা। দূর থেকে এটিকে আশ্রয়শিবির মনে হলেও এটি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। আর এটি হলো কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায় হাওরের মধ্যে গড়ে তোলা ভাসমান স্কুল "বাহেরবালী এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়" এটি বাজিতপুর উপজেলার মাইজচর ইউনিয়নে অবস্থিত। 
শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে আর বর্ষায় নৌকা এই দুই মাধ্যমেই দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সাথে কিশোরগঞ্জের সুবিশাল হাওর এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে এই বিদ্যালয়টি। ভবনটি দেখতেও বেশ দৃষ্টিনন্দন। দূর থেকে দেখলে যে কাওকে আকৃষ্ট করবে বিদ্যালয়ের  দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয়ের এই ভবনটি।

বছরের বেশীরভাগ সময় বিদ্যালয়টির চারপাশে পানি থাকার কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বর্ষায় নৌকার ব্যবস্থা করে থাকেন।যেহেতু বিদ্যালয়টি একটি হাওরের উপর নির্মিত তাই শুকনো মৌসুমে শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটেই বিদ্যালয়ে আসে। অন্যদিকে যখন বর্ষার আগমন ঘটে তখন প্রায় ৯ মাস বিদ্যালয়ের চারপাশে জমে থাকে থৈ থৈ পানি। তখন নৌকাই হয়ে উঠে তাদের বিদ্যালয়ে আসার একমাত্র মাধ্যম।

এই হাওরের মাঝখানে ‘ভাসমান’ বিদ্যালয়টিকে দূর থেকে দেখলে মনে হবে বানভাসিদের দুর্যোগকালীন কোনো আশ্রয়শিবির। তবে এই বিদ্যালয়টি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে হাওর অঞ্চলের অসংখ্য শিশুদের মধ্যে। এখানে নিয়মিতই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হাজিরাও অন্য যেকোনো বিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি।  
জানা গেছে, ২০১১ সালে মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের (এসইএমডিপি) আওতায় সরকারি অর্থায়নে তিনতলা ভবনের এই মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি স্থাপনের পর ২০১৩ সালে পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ভবনের নিচতলা পুরোটাই খালি, যা বছরের অধিকাংশ সময় হাওরের পানিতে তলিয়ে থাকে। একমাত্র দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলায় শিক্ষাকার্যক্রম ভালোভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়ে থাকে।

ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাসের অবসরে বিদ্যালয়ের এই ছাদবাগানে পড়াশোনা করে থাকে। নিবিড় পাঠাদানের জন্য এখানে রয়েছেন ৯ জন অভিজ্ঞ ও দায়িত্বশীল শিক্ষক। বছর শেষে বিদ্যালয়ের ফলও অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। হাওরবেষ্টিত বাহেরবালি, পুড়াকান্দা, আয়নারগোপ, শিবপুর ও বোয়ালী গ্রামের তিন শতাধিক ছেলেমেয়ে এখানে পড়াশোনা করছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য অন্তত আরো কিছু নৌকার ব্যবস্থা করা গেলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেকটা কমানো যেত। যাতায়াতের জন্য আর কিছু নৌকার ব্যবস্থা করা গেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ যাতায়াতের বিরম্বনার কারণে অনেক দূরের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসতে পারেনা।

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ