
প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৩, ০৫:১৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন ২০২৩-২৪ বাজেটে প্রবাসী আয় বাড়াতে দেশের প্রচলিত যাত্রী ব্যাগেজ বিধিমালায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নতুন বিধিমালায় বিদেশফেরত যাত্রীরা ১১৭ গ্রাম ওজনের সোনার বার আনতে পারবেন। সেই সঙ্গে প্রতি ভরি বা ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম সোনার ওপর আরোপিত শুল্ক করও বাড়ানো হবে। এতে করে ব্যাগেজে আনা সোনার ওপর নির্ভরশীল দেশের বাজারে মূল্যবান এ ধাতুর দাম বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনেক প্রবাসী বিদেশে থেকে দেশে ফেরার সময় স্বর্ণের বার নিয়ে আসেন। বর্তমান ব্যাগেজ রুলস অনুসারে, বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় একজন ব্যক্তি প্রতি ভরি দুই হাজার টাকা শুল্ক দিয়ে ২৩৪ গ্রাম (২০ ভরি) ওজনের স্বর্ণের বার আনতে পারবেন। পর্যটক নয়, এমন যাত্রীরা এই পরিমাণ শুল্ক কর পরিশোধ বাবদ প্রায় সময়েই এভাবে স্বর্ণ এনে দেশের বাজারে বিক্রি করেন।
বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি না করে ব্যাগেজ বিধিমালার অপব্যবহার রোধে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে যাত্রী ব্যাগেজ বিধিমালার পরিবর্তন আনা হতে পারে বলে ধারণা করছেন এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। বলা হচ্ছে, এবারের বাজেটে যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা, ২০১৬ এর আওতায় বিদ্যমান ২৩৪ গ্রামের পরিবর্তে ১১৭ গ্রাম ওজনের স্বর্ণবার বা স্বর্ণপিণ্ড সব প্রকার শুল্ককর সাপেক্ষে আমদানির বিধান প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হতে পারে। এ ছাড়া প্রতি ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম স্বর্ণের জন্য শুল্ক করের পরিমাণ বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করাসহ বিদ্যমান বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনপূর্বক নতুন বিধিমালা জারির প্রস্তাব করা হতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশে জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সহ-সভাপতি ও মিডিয়া সংক্রান্ত স্ট্যাডিং কমিটির চেয়ারম্যান দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহিন বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা যখন দেশে ফেরেন বা যে কেউ দেশের বাইরে গেলে ব্যাগেজ বিধিমালার আওতায় অনেক পণ্য বিনাশুল্কে আনতে পারেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার পণ্য শুল্ক দিতে হয়। যা অনেকটা নাগরিকদের অধিকার বলা যায়। কিন্তু এই অধিকার যখন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা শুরু হয়, তখন তা অমঙ্গল বয়ে আনে। ধরুন, কেউ দুটি মোবাইল ফোন বিনাশুল্কে কিনে আনল এবং তা বাজারে বিক্রি করে দিল। কিন্তু এটি যখন আমদানিকারক আমদানি করে আনে, তাহলে কিন্তু তাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। কাজেই রাজস্ব বাড়াতে আমদানি করাকেই উৎসাহিত করা হয়।
মানুষ এই বিধিমালার অপব্যবহার করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর দরকার। এদিকে সরকার হিসাব করে দেখছে যে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা এই খাতে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেজন্য দেশের অর্থনৈতিক মঙ্গলের জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা শুনতে পারছি যে, এই ভরিপ্রতি নির্ধারিত শুল্কের পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে। পাশাপাশি স্বর্ণ আনতে পারার পরিমাণ ২০ ভরি থেকে কমানো হতে পারে।’
এতে করে বিধিমালার অপব্যবহার রোধ হবে আর আমদানি বাড়বে বলে মনে করেন বাজুস সহ-সভাপতি। তিনি বলেন, বিদ্যমান আমদানি শুল্কতে আমদানিকারকদের যে পরিমাণ শুল্ক দিতে হয়, তার তুলনায় ব্যাগেজে আনা সাশ্রয়ী। কারণ ২০ ভরিতে ৪০ হাজার টাকা শুল্ক দিলেই হচ্ছে। তাই অনেকেই এই বিধিমালার অপব্যবহার করছেন।
তিনি জানান, মূলত প্রবাসী আয় বাড়ানোর জন্যই সরকার এমন সিদ্ধান্তের পথে হাঁটছে। কেননা, তারা উপার্জিত যে অর্থ দিয়ে সোনা কিনে দেশে আনেন, সেই অর্থ দিয়ে সোনা না কিনে তারা অর্থ পাঠালে রেমিট্যান্স বাড়বে।
কিন্তু বাংলাদেশে তেজাবী স্বর্ণের মূল্যের ওপর ভিত্তি করে স্বর্ণের দাম বাড়ানো-কমানো হয়। স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণ বা পিওর গোল্ডের মূল্য কমায় সর্বশেষ রোববার (২৮ মে) সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের ভরি ১ হাজার ৭৫০ টাকা কমিয়ে ৯৬ হাজার ৬৯৫ টাকা করার ঘোষণা দিয়েছে বাজুস। নতুন এ দাম সোমবার (২৯ মে) থেকে কার্যকর হবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে সংস্থাটি।
সুতরাং দেশের বাজার যেখানে ব্যাগেজে আনা স্বর্ণের ওপর নির্ভরশীল, সেখানে এটি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক বাড়ানো হলে বাজারে দ্রুত এর প্রভাব পড়ার ব্যাপারে বাজুস সহ-সভাপতি বলেন, শুল্ক বাড়ানো হলে দামটা একটু বেশি হবে। পরে এটি স্বাভাবিকও হয়ে যাবে। যেহেতু এটি নির্দিষ্ট কোনো আইন না, তাই পরবর্তীতে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। এ ছাড়া নতুন নীতিমালায় ব্যাগেজে আনা স্বর্ণের ওপর দেশের বাজারের নির্ভরতা কমে আসবে।
প্রবাসীদের আনা এই স্বর্ণ ভারতে পাচার হওয়ার প্রমাণ মেলে বিভিন্ন সময়ে। এক্ষেত্রে সরকারের এই সিদ্ধান্ত কেমন প্রভাব ফেলবে সে বিষয়ে বাজুস সহ-সভাপতি বলেন, ব্যাগেজের মাধ্যমে আনা স্বর্ণ পাচার হচ্ছে, সেটি ঠিক বলতে পারব না। কিন্তু সীমান্ত দিয়ে দেশের স্বর্ণ বিদেশে পাচার হচ্ছে, তা নিয়ে আমি শতভাগ নিশ্চিত। অনেক সময়েই স্বর্ণ পাচারের জন্য তারা বাংলাদেশকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন। কাজেই এই সিদ্ধান্ত কিছুটা হলেও পাচারকারীদের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
জেকেএস/
![]() | ![]() ![]() | ![]() | ||
![]() | ![]() | ![]() | ||
![]() ![]() | ![]() ![]() | |||
![]() |
| ![]() |