
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে দুর্নীতি পুরোপুরি নির্মূল হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)-এর চেয়ারম্যান ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ। তার মতে, দুর্নীতি এখনো বিদ্যমান। তবে এটি বেড়েছে নাকি কমেছে সে বিষয়ে মন্তব্য করার মতো সময় এখনো আসেনি।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। টিআই প্রধানের বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে এ আয়োজন করে টিআইবি।
ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, ‘আমাদের জানতে হবে, অর্থ কোথায় আছে এবং কারা এর মালিক। কেবল তখনই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কার্যকর হবে।’
আওয়ামী লীগ আমলের শাসনব্যবস্থাকে স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে জনগণের সেবা করার জন্য নয়, বরং মুনাফা অর্জনের জন্য। প্রতি বছর বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে, যা বৈশ্বিক দুর্নীতির অর্থনীতির অংশ হয়ে গেছে।’
টিআই-এর হিসাবে, পাচার হওয়া অর্থের বড় অংশ অফশোর অ্যাকাউন্ট, ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্ম ও ট্যাক্স হেভেনের মাধ্যমে দুবাই, সিঙ্গাপুর, হংকং, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো আর্থিক কেন্দ্রে চলে গেছে। এসব অর্থ জনকল্যাণমূলক খাতে ব্যবহার না হয়ে রিয়েল এস্টেট ও বিলাসবহুল সম্পত্তিতে বিনিয়োগ হয়েছে।
সম্প্রতি লন্ডনে ১৮৫ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পত্তি জব্দের ঘটনাকে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরে টিআই প্রধান বলেন, ‘এটি প্রমাণ করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ফল দিতে পারে। তবে চ্যালেঞ্জ হলো নিশ্চিত করা যে এই অর্থ বিদেশি কোষাগারে না গিয়ে বাংলাদেশের জনগণের কাছে ফিরবে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘বাজেয়াপ্ত অর্থ অবশ্যই নাগরিকদের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে এবং তা সুশীল সমাজের নজরদারিতে জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে।’
ভ্যালেরিয়াঁ বাংলাদেশে উপকারী মালিকানা স্বচ্ছতাবিষয়ক খসড়া আইন দ্রুত পাসের আহ্বান জানান। তার মতে, এই আইন শেল কোম্পানির আড়ালে থাকা প্রকৃত মালিকদের চিহ্নিত করবে, যারা প্রায়ই অবৈধ অর্থ পাচারে জড়িত থাকে।
বাংলাদেশ এখন একটি ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘নাগরিকদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। চুরি করা সম্পদ ফিরিয়ে আনা যেমন ন্যায়বিচারের বিষয়, তেমনি তা গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতারও ভিত্তি।’