
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ১০:৫৮ পিএম
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অল্প সময়ে তিনি এমন অনেক কাজ করেছেন, যা দেশের ইতিহাসে হয়নি।
আজ বুধবার বিকেলে সিলেটের একটি হোটেলের হলরুমে ‘জারিকৃত আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫: মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার বাধ্যতামূলক বিধান’ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘সবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রয়েছে, যার যা ইচ্ছা, লিখে দেওয়া যায়। আমি প্রায়ই শুনি, “আপনি কী করেছেন? শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে বসেছেন, আমরা আপনাকে বসিয়েছি, আপনি কী করেছেন?” আমি বুঝতে পারি না, আনসারটা কী হবে। আমি ফুটবল প্লেয়ার নই, কিংবা মঞ্চনাটকের অভিনেতাও নই, আমি যেটা করব, আপনি দেখতে পারবেন।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে লিগ্যাল এইডের কথা বললাম। এর আগে অনেক কাজ করেছি, যা কোনো দিন বাংলাদেশের ইতিহাসে হয়নি। আমরা সিভিল আদালত, ক্রিমিনাল আদালত পৃথক করেছি, যাতে সিভিল আদালতের নিষ্পত্তি বাড়ে, যাতে মামলার নিষ্পত্তি দ্রুতগামী হয়। আগে কোনো দিন বাংলাদেশে এটা করা হয়নি। আমরা বিচারিক পদ সৃজনের ক্ষমতা সেটা আগে পলিটিক্যাল মন্ত্রীদের হাতে ছিল, এটা চিফ জাস্টিসের কাছে নিয়ে গেছি। যে ফাইল নিজের হাতে নিয়ে চিফ অ্যাডভাইজারের কাছে সাইন করিয়েছি। পিয়নের মতো করে গিয়ে ওনার হাত থেকে সাইন করে নিয়েছি। সে রকম প্রায় সোয়া দুই শ বিচারকের পদ এক দিনে সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এমন একটা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছি, যার জন্য বাংলাদেশে সমালোচনা হয়নি।’
আসিফ নজরুল দাবি করেন, তাঁর মন্ত্রণালয়ে সারা বাংলাদেশ থেকে খুঁজে সবচেয়ে সৎ, সবচেয়ে যোগ্য অফিসারদের নিয়ে এসেছেন। তাঁরা দিনে–রাতে কাজ করছেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, তাঁরা যে পরিবর্তনগুলো করে দিয়েছেন, যে সংস্কার এনেছেন, তা রাজনৈতিক সরকার ধরে রাখলে ন্যায়বিচার বৃদ্ধি পাবে। দরিদ্র, অসহায় মানুষের আইনগত প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ অবারিত হবে। বিনা খরচে দ্রুততম সময়ে আইনগত সহায়তা পাবেন তাঁরা।
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার আয়োজনে আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমকে সম্প্রসারণ এবং অধিকতর গতিশীল, জনবাবন্ধব ও সহজলভ্য করতে গত ১ জুলাই আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এই অধ্যাদেশের তফসিলভুক্ত বিষয়গুলোতে (পারিবারিক বিরোধ, পিতা-মাতার ভরণপোষণ, বাড়িভাড়া, যৌতুক ইত্যাদি) সিলেটসহ ১২টি জেলায় মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার বাধ্যতামূলক বিধান বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আসিফ নজরুল বলেন, ‘লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে যে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়, সেটা প্রচলিত আদালতের বিরোধ নিষ্পত্তির চেয়ে ১০ ভাগের ১ ভাগ কম সময় লাগে। প্রচলিত আদালতে যদি পাঁচ বছর লাগে, লিগ্যাল এইডে সেটি নিষ্পত্তি করতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগে, এত পার্থক্য। লিগ্যাল এইড অফিসে যে নিষ্পত্তিগুলো হয়, সেখানে ৯০ শতাংশ মানুষ সেটিসফায়েড থাকে। অর্থাৎ লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে যে সলিউশনটা পায়, পরে তারা কোর্টে যায় না। ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জন্যই আর কোর্টে যায় না। অথচ প্রচলিত আদালতে যে মামলা হয়, দেখবেন বিচারিক আদালতে রায় হওয়ার পরও কেউ উচ্চতর আদালতে যায় আপিল করার জন্য। কাজেই দেখলাম যে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে সন্তুষ্ট লোকের সংখ্যাও বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সন্তুষ্ট লোকের চাইতে অনেক বেশি। এটা এমন একটা বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা যেখানে কম সময় লাগে, অনেক কম টাকা লাগে, অনেক কম ভোগান্তি হয়, অনেক বেশি মানুষ সন্তুষ্ট থাকে।’
লিগ্যাল এইড আগে বাধ্যতামূলক ছিল না মন্তব্য করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এবার আমরা মামলার জট কমাতে বাধ্যতামূলক করেছি। আপনাকে প্রথমে লিগ্যাল এইডে যেতে হবে। সেখানে যাওয়ার পর অসন্তুষ্টি থাকলে আদালতে যেতে পারবেন। কিন্তু প্রথমে লিগ্যাল এইডে যেতে হবে। এটা আমরা করেছি ১ নম্বর পরিবর্তন। আমাদের একটা ইচ্ছা ও বিশ্বাস আছে, এটা ঠিকমতো করতে পারলে মামলার জট কমে যাবে। মানুষের হয়রানি কমে যাবে, বিশেষ করে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য অপূর্ব অভাবনীয় সুযোগ তৈরি হয়েছে ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শেখ আশফাকুর রহমান, সিলেট জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী এবং বন্ধুরাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগীদের পক্ষে দুজন প্রতিনিধি বক্তব্য দেন। এর আগে মামলাপূর্ব মধ্যস্থতা বিষয়ে নাটক প্রদর্শন করা হয়।
এদিকে সকালে সিলেটে পৌঁছে আইন উপদেষ্টা সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আলমপুরে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের (টিটিসি) প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র রাতারগুল পরিদর্শনে যান তিনি।