• ঢাকা বুধবার
    ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে উসকে দেয়া নয় : বিজয় দিবসের আলোচনায় রাষ্ট্রদূত মুশফিক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫, ০১:৩৮ পিএম

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে উসকে দেয়া নয় : বিজয় দিবসের আলোচনায় রাষ্ট্রদূত মুশফিক

সিটি নিউজ ডেস্ক

মেক্সিকোতে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে মহান বিজয় দিবস ২০২৫ উদযাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাস মেক্সিকো সিটি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মেক্সিকোতে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অংশগ্রহণ করেন।
দিবসব্যাপী কর্মসূচির শুরুতে সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। পরবর্তীতে দূতাবাসের মিলনায়তনে এক বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় রাষ্ট্রদূত মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সকল বীর, স্বাধীনতার অগ্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানসহ সকল বীর সেনানীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং মহান বিজয় দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে বলেন, “১৯৭১ সালের এই গৌরবময় দিনে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। তাঁদের আত্মত্যাগ, বীরত্ব ও অসীম সাহস জাতির ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।” তিনি বলেন, “আমাদের স্বাধীনতা কেউ কোনো সোনার থালায় সাজিয়ে উপঢৌকন হিসেবে এনে দেয়নি, এটি ছিনিয়ে নিতে হয়েছে রক্তস্নাত যুদ্ধ, ত্যাগ ও আত্মবিসর্জনের বিনিময়ে। সেই অদম্য সাহস ও প্রতিবাদের উত্তরাধিকার আমরা দেখেছি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে, যেখানে নির্ভীক তরুণরা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল নিপীড়ন, অন্যায় ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। বিজয় দিবসের এই দিনে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি সকল শহীদ ও সাহসী যোদ্ধাদের, যাঁরা নিজেদের জীবন, নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য বাজি রেখে ইতিহাস গড়েছেন। তাঁদের বীরত্ব আমাদের প্রেরণা, আমাদের পথনির্দেশ। জুলাই ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান আমাদের জন্য নতুন আশার সঞ্চার করেছে।“
রাষ্ট্রদূত মুশফিক সতর্ক করে বলেন, “মত প্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই অবারিত থাকবে। কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে গণতন্ত্র হত‍্যাকারী, খুনী ও লুটেরা চক্রকে পুনর্বাসনের চক্রান্ত মেনে নেয়া যায় না।” এ সময় তিনি ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরুত্থান রোধে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ব্যক্তিগত আক্রোশ চরিতার্থ করার প্রবণতার বিরুদ্ধেও দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত মুশফিক। তিনি বলেন, “আমাদের সকলকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে দায়িত্বহীনতা নয়। আমাদের বক্তব্য, বিবৃতি কিংবা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত কোনো কন্টেন্ট যেনো সামাজিক অস্থিরতা কিংবা সহিংসতাকে উসকে না দেয়।” পাশাপাশি তিনি একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এবং ব্যবসা-বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। আসন্ন ১২ ফেব্রুয়ারী নির্বাচনের মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে এবং এর মধ্য দিয়ে দেশে এক নতুন গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার সূচনা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত মুশফিক ।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি কমিউনিটির একজন তরুণ সদস্য মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করেন। এছাড়া, দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রদত্ত বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দূতাবাসের মিলনায়তনে প্রবাসী বাংলাদেশি শিশুদের অংশগ্রহণে এক দেশাত্মবোধক গানের পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচির শেষে দূতাবাসের গার্ডেনে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশেষ আপ্যায়নের আয়োজন করা হয়।

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ