
প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৫, ১০:০১ পিএম
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল – বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং দুই ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমকে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বাদ দেওয়ার জন্য লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছে বিএনপি।
তার ভাষ্য, "তাদের পদত্যাগের ব্যাপারে আমরা লিখিত বক্তব্য জানিয়েছি। আগেও জানিয়েছি। নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও দুই জন ছাত্র উপদেষ্টা, যাদের কারণে এই সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, তাদেরকে বাদ দেওয়ার জন্য আজকেও আমরা লিখিত বক্তব্য দিয়েছি।"
কোনো আশ্বাস পেয়েছেন কিনা এ ব্যাপারে? সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "তা উনারা দেখবেন। আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি।"
এর আগে, বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি নেতাদেরকে সাক্ষাৎ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। "কিন্তু আলোচনার বিষয়বস্তু আমাদেরকে আগে জানানো হয়নি।"
তিনি জানান, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি যা `আন্দাজ` করতে পেরেছিলো, তার ওপর ভিত্তি করে তারা একটি লিখিত বক্তব্য নিয়ে এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করেন এবং সেই ভিত্তিতেই আলোচনা হয়।
ওই লিখিত বক্তব্যের সারাংশ সাংবাদিকদের পড়ে শোনান খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণের লক্ষ্যে বিএনপি নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে আসছে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে "বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের জন্য দাবি" জানিয়েছে।
বিএনপি`র নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের আমলে রাজনৈতিকভাবে কিংবা পারিবারিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই, আ`লীগের বিচার সবচেয়ে বেশি দাবি করে বিএনপি — বলা হয় ওই বক্তব্যে।
"সুতরাং, বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায়, তাহলে স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে বিচার কাজ সম্পন্ন করা হয়।"
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সংস্কার কার্যক্রম অবিলম্বে সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মাঝে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অতিদ্রুত একটি রোডম্যাপ দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে দলটি। কারণ, এই সরকারের মূল দায়িত্ব সুষ্ঠু নির্বাচন।
"যেকোনো উছিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব করা হবে, আমরা মনে করি, জাতির কাছে আবার স্বৈরাচার ফিরে আসার ক্ষেত্রে প্রস্তুত হবে। এর দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকার ও তাদের সাথে সংশ্লিষ্টদের ওপর বর্তাবে।"
এরপর মি. হোসেন লিখিত বক্তব্য অনুযায়ী বলেন, "বিএনপি কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি। বরং, প্রথমদিন থেকেই এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে।"
এরপর তাকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করে যে তারা সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের আশ্বাস পেয়েছে কিনা।
এর সরাসরি উত্তর দেননি মি. হোসেন। বরং, একই প্রশ্নের উত্তরে পাশ থেকে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, "স্পেসিফিক কোনো কথা হয় নাই। উনি স্পেসিফিক জানান নাই। আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি।"
আজকের আলোচনায় তারা সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এখনই প্রতিক্রিয়া জানানোর দরকার নাই। ওনাদের প্রেস সেকশন কী বলে- তারপর আমরা প্রতিক্রিয়া জানাবো।"
এর আগে, মি. হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, "আলোচনার মাঝে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এসেছে। আমরা বলেছি, একটার সাথে আরেকটির কোনো সম্পর্ক নাই। কারণ সংস্কার চলমান বিষয়। এটা চলতে থাকবে।"
"আমরা আশা করেছি, এই সরকার সকলের সাথে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা সংস্কার প্রস্তাব দেবে, যা চলমান থাকবে। ভবিষ্যতে যদি জনগণ আমাদেরকে ক্ষমতায় বসায়, আমরা সেই সংস্কার বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা করবো।"
মামলাগুলোর ব্যাপারে তার বক্তব্য, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি "বিক্ষুব্ধ"। তারা এই "স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট সরকারের" কর্তা-ব্যক্তিদের এবং দায়ীদের বিচার চায়। অর্থাৎ, বিএনপি বিচারের পক্ষে। তবে বিচার ব্যবস্থাও স্বাধীন হতে হবে।
তাই, বিচারের জন্য "কোনো দিন-তারিখ ঠিক করে দেওয়া সম্ভব নয়" জানিয়ে তিনি বলেন, "আমরা বলেছি, যেগুলো সম্পন্ন না হবে, বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায় তাহলে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন করা হবে।"
বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও বলেন যে তারা তিনটি বিষয়ে আলোচনা করেছেন। "ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার কাজ অতিদ্রুত করা সম্ভব, এখানে কোনো দ্বিমত পোষণ করেননি। বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে যে আলোচনা হয়েছে, এখানেও কোনো দ্বিমত নাই। ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন করা সম্ভব, এই আলোচনাও হয়েছে এখানে," যোগ করেন তিনি।
সবশেষে আরেক বিএনপি নেতা আব্দুল মঈন খান বলেন, "সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন– দে আর মিউচ্যুয়ালি এক্সক্লুসিভ। একটার সাথে আরেকটার সম্পর্ক নেই। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছি– যদি দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হয়, আজকে বাংলাদেশে যে নৈরাজ্য হচ্ছে, এক অ্যানাউন্সমেন্টের ফলশ্রুতিতে দেশে শান্তি ফিরে আসবে।"