 
              প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২, ০৩:১৫ এএম
 
                 
                            
              সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক কোম্পানি শাফিন ফিডারের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি সই করেছে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এ তথ্য জানিয়েছে।
ডিএসই জানায়, লিমিটেড লায়াবিলিটি কোম্পানি শাফিন ফিডার শতভাগ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠান আবুধাবি পোর্টস কোম্পানি পিজেএসসির মালিকানাধীন। অন্যদিকে সাইফ মেরিটাইম এলএলসি দুবাইয়ের এমিরাটসে অবস্থিত। এটা সাইফ পাওয়ারটেকের মালিকানাধীন কোম্পানি।
কোম্পানি দুইটির মধ্যে চুক্তি সই করেছে শাফিন ফিডারের মালিকানাধীন এডি পোর্ট গ্রুপ এবং সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সমঝোতার মাধ্যমে সাইফ ইউনাইটেড শিপিংয়ের অধীনে সাফীন ফিডারের মালিকানায় থাকা আটটি সমুদ্রগামী বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজে ফুজাইরাহ্ বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহণ করবে। শাফিন ফিডারের কন্টিনার ফিডার ভেসেলের ধারণ ক্ষমতা ১৭০০ থেকে ২১০০ টিউস।

চুক্তি অনুযায়ী ১৫ বছরের জন্য বেয়ারবোর্ট এবং সাইফের টাইম চার্টারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কন্টেইনারগুলি বাংলাদেশে বহন করার জন্য এবং যেকোনো আন্তর্জাতিক রুটে এবং বিশ্বব্যাপী সংযুক্তের জন্য উপযুক্ত।
কোম্পানিটি জানায়, এই চুক্তিতে বিভিন্ন সময়ে জাহাজে মালামাল পরিবহণের ভাড়া বাবদ বছরে আনুমানিক ১৮ মিলিয়ন ডলার বা ১৫৪ কোটি টাকা আয় হবে। খরচ বাদে ১৫ বছরে প্রতিটি জাহাজে আনুমানিক এক দশমিক ৮০ মিলয়ন ডলার বা ১৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা মুনাফা হবে। প্রথম বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদেশে শিপিং ও লজিস্টিকস খাতে ব্যবসা শুরু করে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। 
২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করছে প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানিটির ৫০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৩৭৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। একইসঙ্গে রিজার্ভের পরিমাণ ১৩৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। কোম্পানির ৩৭ কোটি ৯৩ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪৮ শেয়ার রয়েছে।
ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যমতে, কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ৪০ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক ২০ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ৩৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ শেয়ার।
২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ ও ছয় শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।
আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে এক টাকা ৭৫ পয়সা। ২০২১ সালের ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ১১ পয়সা। এ ছাড়া, এই হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে দুই টাকা ৭৯ পয়সা।
১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু হয় সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটির। তিনজন স্বপদ্রষ্টা চ্যালেঞ্জ নিয়ে ব্যবসার বৃহৎ ক্ষেত্রে নামেন। শুরুটা গন্তব্যহীন ছিল কিছুটা। তবে শ্রম, সাধনা ও প্রজ্ঞার কারণে সে ব্যবসায় সফল হন তারা। প্রতিষ্ঠা করেন দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। পথটি মসৃণ ছিল না তাদের। শুরুটা ভীষণ চ্যালেঞ্জের ছিল।
তবে উদ্যোক্তাদের কর্মদক্ষতা ও অধ্যবসায়ের কারণে স্বল্পসময়ের মধ্যে মানুষের আস্থা অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। গুণগত মান ও স্বকীয়তার ওপর ভর করে দীর্ঘদিন ধরে তারা দেশের প্রধানতম চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এই সাইফ পাওয়ারটেক।
২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয় । এর আগে সাইফ পাওয়ারটেক করপোরেশন নামে পরিচিত ছিল প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটি (সিপিএ), পানগাঁও আইসিডি ও কমলাপুর আইসিডির (কেআইসিডি) উন্নয়নে কাজ করছে তারা। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করে।

ব্যবসা সম্প্রসারণে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা অব্যাহত রেখেছে তারা। বর্তমানে রিনিউঅ্যাবল এনার্জি, প্লাস্টিক ও পলিমারভিত্তিক প্লান্ট নিয়ে কাজ করছে। বছরে প্রায় এক দশমিক দুই মিলিয়ন অটোমেটিভ ব্যাটারি (এন৫০) উৎপাদন করে তারা। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান যেমন ডোসান ইনফ্রাকোর কোম্পানি লিমিটেড (ডাউয়ি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড), মিৎসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ববকক বরসিগ পাওয়ার সার্ভিস জিএমবিএইচ, অ্যামেক ফোস্টার হুইলার, কারমানা টেকনোলজিস প্রভৃতি পণ্য দেশে সরবরাহ করে থাকে সাইফ পাওয়ারটেক।
বাজার মনিটরিং ও গবেষণার কারণে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে আছে, একই সঙ্গে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ জনশক্তি ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান ধরে রাখছে সাইফ পাওয়ারটেক। পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা পরিষদের কার্যকরী দিকনির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তরফদার নিগার সুলতানা। 
ব্যবস্থাপনা টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন তরফদার মো. রুহুল আমিন। তিনি চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন বলেই ২০০৭ সালে জাহাজের টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম তিন দিনে আনতে পেরেছিলেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদে রয়েছেন রুবাইয়া চৌধুরী, তরফদার মো. রুহুল সাইফ ও মো. জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। কোম্পানি সেক্রেটারির দায়িত্বে রয়েছেন এফএম সালেহীন।
বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ গার্মেন্টস, স্টিল কারখানা, টেক্সটাইল মিল, পেপার অ্যান্ড প্যাকেজিং, সিমেন্ট কারখানা, রিয়েল স্টেট, ব্যাংক, ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরামিক শিল্প প্রভৃতি খাতের উন্নয়নে সেবা দিয়ে আসছে সাইফ পাওয়ারটেক। গুণগত মানে সেরা কাজের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে সাইফ পাওয়ারটেক। জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনে কাজ করে চলেছে। দেশ ও দশের উন্নয়নে অবদান রাখছে।
জেডআই/এআরআই
 
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
      