• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আলেশা মার্ট প্রধানের সঙ্গে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের গোপন লেনদেন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২, ০৮:৫৮ পিএম

আলেশা মার্ট প্রধানের সঙ্গে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের গোপন লেনদেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আর ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না অসংখ্য গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্ট। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান মঞ্জুরুল আলম শিকদার ও তার অধীনস্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে এক গোপন বৈঠকের পর এ সংক্রান্ত তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি লাইভে এসে আলেশা মার্ট প্রধান মঞ্জুরুল ইসলাম যে বয়ান দিয়েছেন সেখানেও হতাশার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

আলেশা মার্টের লেনদেনে দুর্নীতি বিষয়ে চলমান তদন্ত নিয়েও ক্ষুব্ধ মঞ্জুরুল আলম ও তার পদস্থ কর্মকর্তারা। তাদের মতে, কয়েকজন কর্মকর্তা আলেশা মার্টের দেনাকে পুঁজি করে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

এই তালিকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তার নাম এসেছে। রয়েছে একটি বিশেষায়িত সংস্থার পুলিশ সুপার মর্যাদার একজন কর্মকর্তার নামও। এই তিনজনের নাম প্রাথমিকভাবে জানা গেলেও তাদের আশপাশ দিয়ে মিডলম্যান এবং আরও সুবিধাভোগীদের তালিকাও এসেছে সিটি নিউজ ঢাকার কাছে।

কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ দেখা যায় মঞ্জুরুল আলম শিকদারের কণ্ঠেও। তিনি বলেছেন, ‘তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ঘুষ দিতে দিতে আমি পেরেশান। প্রতিমাসে কোনো না কোনো অজুহাতে কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে। ইনিয়েবিনিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ দুই হাত তিন হাত ঘুরিয়ে এই ঘুষের টাকা নিচ্ছেন।’

মঞ্জুরুল আলম আরও বলেন, ‘তদন্তকারীরা এখন পর্যন্ত যত টাকা নিয়ে গেছে, এই টাকা দিয়ে প্রতারিত গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করা যেত। অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে এতে করে তার দেশে থাকাই কঠিন হয়ে গেছে। তদন্তের সঙ্গে জড়িতদের কেউ কেউ চায় আমি দেশে থেকে এভাবেই তাদের বড় দাগের মাসোহারা দেই।’

এ সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অনুসন্ধানের জন্য কাজ করছে সিটি নিউজ ঢাকা টিম।

বিশেষ করে আলেশা মার্টের সংক্ষিপ্ত তালিকার বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকেই লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য জানার জন্য সিটি নিউজ অনুসন্ধান শুরু করেছে। যা একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

এখন পর্যন্ত যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হয়েছে। এদের সঙ্গে আলেশা মার্ট সংশ্লিষ্টদের কোথায় কীভাবে লেনদেন হয়েছে- এসব তথ্য পেয়েছে সিটি নিউজ ঢাকা।

শুধু তাই নয়, আলেশা মার্ট প্রধান কোথায় আছেন? কখন কার সঙ্গে কী বিষয়ে কথা বলছেন আনুষ্ঠানিক বেশ কিছু তথ্য রয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা কীভাবে তাকে এই অবস্থা থেকে বের করার চেষ্টা করছেন সে তথ্যও রয়েছে সিটি নিউজ ঢাকার হাতে।

মঞ্জুরুল আলমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো নিয়ে সিটি নিউজ ঢাকার এই প্রতিবেদক গত কয়েকদিন ধরে তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। ফোনে না পেয়ে গুলশানে তার বাসভবনে যান এই প্রতিবেদক। কিন্তু সেখানে বাসার কেয়ার টেকার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘স্যার এখানে থাকেন না। তিনি কোথায় থাকেন তা জানিনা।’

অন্যদিকে গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, গুলশানের বাসভবনেই থাকেন মঞ্জুরুল আলম। এমনকি তাদের  নজরদারিতেই আছেন তিনি। 

অবাধ তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে মানুষের কেনাকাটার জন্য প্রথম পছন্দ ই-কমার্স প্লাটফর্ম। ডিজিটাল প্রতারণার গণ্ডি পেরিয়ে ধীরে ধীরে দেশের আধুনিক জনগোষ্ঠির আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলো এই খাতটি। ঠিক এমন সময় আবির্ভাব ঘটে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে চটকদার ও লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর কিছু পণ্যের ডেলিভারি দিয়ে জিতে নেয় গ্রাহকদের আস্থা। তারপর বের হয়ে আসে প্রতিষ্ঠান প্রধান মঞ্জুরুল আলম শিকদারের আসল রূপ। শুরু হয় প্রতারণা।

আলেশা মার্ট চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলমের পরিকল্পনায় গ্রাহকদের কাছ থেকে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় শত শত কোটি টাকা। বন্ধ করা হয় পণ্য সরবরাহ। ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর বন্ধ করা হয় দাপ্তরিক কার্যক্রম।

বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন প্রতারিত গ্রাহকরা। শুরু হয় আন্দোলন। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে আলেশা মার্টের প্রধান কার্যালয়ে সাত ঘণ্টা আটকে রাখা হয় আলেশা মার্ট চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলমকে। দীর্ঘ সময় আটকে রাখায় অসুস্থ হয়ে পড়েন মঞ্জুরুল আলম শিকদার। পরে রাত ৯টার দিকে বনানী থানা-পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। নড়েচড়ে বসে প্রশাসনসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতারণার অভিযোগে শুরু হয় তদন্ত।

এরপর প্রতারণার উপর প্রতারণা শুরু করেন মঞ্জুরুল আলম শিকদার! প্রতারিত গ্রাহকদের পাওনা অর্থ ফেরতের নাম করে নিজেদের লোকদের দিয়ে অর্থ প্রাপ্তির কথা বলে দেয়া হয় ফেসবুক পোস্ট। যেখানে দেখা যায় একই নাম্বারের টাকা এবং বান্ডিল দেয়া হয়েছে একাধিক জনকে। এ ছাড়া টাকা প্রাপ্তির পোস্ট দেয়া অধিকাংশ আইডিই ফেক বলেও প্রমাণিত হয়।

শুধু তাই নয়, আলেশা মার্ট অভিনব কায়দায় ক্রেতার তথ্য সংগ্রহ করে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে। আলেশা মার্টের চেয়ারম্যানের বহু তথ্য এখনও অজানা থেকে গেছে। একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা তার ব্যাপারে যে ধরনের তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে যা পিলে চমকানোর মতো। হয়তো এ কারণেই আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম পালিয়ে যাবার নিরাপদ রুট খুঁজছেন।

ই-কমার্স সেক্টরকে উদীয়মান অর্থনীতির বৃহৎ চালিকাশক্তি বলা হলেও নানান কূট-কৌশলে একের পর এক প্রতারণা করে যাচ্ছে আলেশা মার্ট চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম শিকদার। তার প্রতারণার জালে আটকা পড়ে হাজার হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে।

 

জেইউ/

 

আর্কাইভ