• ঢাকা শুক্রবার
    ১৮ জুলাই, ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

দৃষ্টিহীনদের মাঝে কুরআনের আলো পৌঁছান যিনি!

প্রকাশিত: মে ১০, ২০২১, ০৯:৪১ পিএম

দৃষ্টিহীনদের মাঝে কুরআনের আলো পৌঁছান যিনি!

রংপুর ব্যুরো

চোখে নেই আলো, দেখতে পান না চমৎকার এই পৃথিবীর কোনো কিছুই। এত বড় প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে হয়েছেন পবিত্র কুরআনের হাফেজ। শুনে শুনে মুখস্থ করেছেন কুরআন শরীফের ৩০ পারা। এতেও থেমে যাননি হাফেজ মাহবুব এলাহী। বর্তমানে কুরআন শরীফ শেখাচ্ছেন তার মতোই দৃষ্টিহীন শিশুদের।

রংপুর নগরীর এরশাদনগর চিনিয়াপাড়ায় বায়তুর রহমান জামে মসজিদের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাফেজিয়া মাদরাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে উদ্যোক্তা ও শিক্ষক তিনি। মাদরাসার ১২ জন ছাত্রের মধ্যে আটজনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। মাহবুব এলাহী তাদেরকে ব্রেইল পদ্ধতিতে কুরআন শিক্ষা দেন।

২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মাদরাসাটি যাত্রা শুরু করে। সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ হোসেন মাদরাসাটি স্থাপনের জন্য ছয় শতক জমি দান করেছিলেন। সেই জমিতেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষক হাফেজ মো. মাহবুব এলাহী ও হাফেজ মো. খোরশেদ আলমের সহযোগিতায় মহৎ এ উদ্যোগ নেয়া হয়। মূলত দৃষ্টিহীনদের শিক্ষা দেয়ার জন্যই এই মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে স্থানীয়দের সাহায্য ও সহযোগিতায় মাদরাসাটির কার্যক্রম চলছে। 

মাদরাসার একজন ছাত্র শাহাদত হোসেন (১৭), জন্ম থেকেই সে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। মাদরাসা শুরুর পরপরই রংপুরের পীরগাছা উপজেলার চৌধুরানী থেকে এসে ভর্তি হয় এখানে। এখন পর্যন্ত কুরআনের ২৫ পারা মুখস্থ করেছে সে। লালমনিরহাটের আদিতমারী থেকে ৮-৯ মাস আগে এসে ভর্তি হয়েছে মনির হোসেন (১৫)। শাহাদতের মতো সেও জন্ম থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। মাদরাসায় থেকে অন্যের সহায়তায় যা মেলে তাই খেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে শাহাদত-মনিরের মতো অন্য ছাত্ররাও।

চিনিয়াপাড়া মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ লুৎফর রহমান বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের খুঁজে নিয়ে এখানে ব্রেইল পদ্ধতিতে কুরআন শিক্ষা দেয়া হয়। তাদের থাকা খাওয়ার সম্পূর্ণ ব্যয় বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে বহন করা হয়।’

প্রতিষ্ঠানটির জমিদাতা আশরাফ হোসেনের ছেলে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যক্তির অনুদানে প্রতিষ্ঠানটি চলছে। এর উন্নয়নে সরকারিভাবে সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা চাই সবাই এগিয়ে এসে এমন উদ্যোগকে সহযোগিতা করুক।’

ওই মাদরাসার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষক হাফেজ মো. মাহবুব এলাহী জানান, তিনিও জন্ম থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে তার বাড়ি। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি মাদরাসা থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। পরে বিভিন্ন জায়গায় টিউশনি করিয়ে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সহযোগী হাফেজ মো. খোরশেদ আলমসহ অন্যদের সহায়তায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। 

নিজে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় সমাজের অন্যসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ানোর উপলব্ধি থেকে এমন মহৎ উদ্যোগে শামিল হয়েছেন বলেও জানান মাহবুব এলাহী। তবে প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে সমাজের বিত্তবান মানুষসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবিও তোলেন তিনি।

বায়তুর রহমান জামে মসজিদ এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাফেজিয়া মাদরাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের সভাপতি আলহাজ ইঞ্জিনিয়ার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তির সহায়তায় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে। উদ্বোধনের পর সিটি করপোরেশন থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সরকারিভাবে কোনো অনুদান বা সহায়তা মেলেনি।’

ডব্লিউএস/এম. জামান
আর্কাইভ